জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় দুটি প্রশ্নের উত্তর জরুরি

ব্রাজিলের আমাজন বনের পাশে বেলেম শহরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কপ৩০। এবারের সম্মেলনে দুটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজবেন জলবায়ুকর্মীরা। এক. বৈশ্বিক উষ্ণতা আরও দ্রুত বৃদ্ধি রোধে বিশ্ব কী করতে পারে? দুই. অপ্রতিরোধ্য বিপর্যয় এড়াতে কি সময়মতো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব?

এরই মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের সীমা অতিক্রম করতে চলেছে। পাশাপাশি জলবায়ু সংকটের বিরুদ্ধে সম্মিলিত পদক্ষেপে এসেছে রাজনৈতিক বিভেদ ও জনতুষ্টির জোয়ার। এসব সত্ত্বেও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বনেতারা জলবায়ু সংকটে পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছেন। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জলবায়ু পরিবর্তনকে ‘সবুজ কেলেঙ্কারি’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। এই পরিস্থিতি পালাউর মতো ঝুঁকিতে থাকা দ্বীপরাষ্ট্রগুলোর জন্য হতাশা সৃষ্টি করেছে। খবর গার্ডিয়ানের

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং তীব্র ঝড়ের হুমকিতে থাকা দেশগুলোর কাছে বৈশ্বিক পদক্ষেপ অপরিহার্য। ট্রাম্প ছাড়াও ইউরোপে ডানপন্থি দলগুলো জলবায়ু নীতিতে বাধা দিচ্ছে। এবার কপ৩০-এ আর্জেন্টিনা, রাশিয়া ও সৌদি আরবের মতো দেশগুলোর বাধার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্বে ৮৯ শতাংশ মানুষ জলবায়ু সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন। তারা এ নিয়ে বৈশ্বিক পদক্ষেপের পক্ষে। এর পাশাপাশি কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং মেক্সিকোর মতো দেশে জলবায়ু সমর্থক রাজনীতিবিদদের বিজয়ও আশার সঞ্চার করছে। দুই বছর ধরে বৈশ্বিক তাপমাত্রা প্রাক-শিল্প স্তরের ওপরে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস সীমা অতিক্রম করেছে। প্যারিস চুক্তির অধীনে দেশগুলোকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানোর জন্য তাদের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হবে। সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও বেশির ভাগ দেশ এখনও তাদের পরিকল্পনা জমা দেয়নি। জাতিসংঘের হিসাবে, এ পর্যন্ত জমা দেওয়া পরিকল্পনাগুলো ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের  লক্ষ্যমাত্রার এক-ষষ্ঠাংশ পূরণ করবে। এটা বিশাল বৈষম্য সৃষ্টি করবে।

ব্রাজিলের প্রধান ফোকাস হলো উন্নয়নশীল বিশ্ব। আয়োজকরা আলোচনাকে শুধু প্রতিশ্রুতির মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়নের ওপর জোর দিতে চান। গ্লোবাল সাউথের জন্য এই কপের সফলতা নির্ভর করবে দুটি প্রধান লক্ষ্যের ওপর। এক. আর্থিক সহায়তা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানিতে স্থানান্তরের জন্য অর্থায়ন। দুই. ন্যায্য রূপান্তর। জলবায়ু পদক্ষেপের ক্ষেত্রে দরিদ্র ও দুর্বলদের যেন কোনোভাবে শোষণ বা বৈষম্য করা না হয়। 

জীবাশ্ম জ্বালানি ও বন সংরক্ষণ

ব্রাজিল ট্রপিক্যাল ফরেস্ট ফরএভার ফ্যাসিলিটি (টিএফএফএফ) নামের একটি তহবিল গঠন করতে চায়। এর লক্ষ্য বিদ্যমান বন সংরক্ষণ করা এবং বন উজাড় হ্রাসকারী অঞ্চলগুলোকে পুরস্কৃত করা। তবে কপ৩০-এর সবচেয়ে কঠিন আলোচনাটি হবে জলবায়ু সংকটের মূল কারণ জীবাশ্ম জ্বালানি নিয়ে। যদিও কপ২৮-এ ‘জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে আসার’ প্রস্তাব নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারক দেশগুলোর বাধার কারণে তা বাস্তবায়ন কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশ্বের শীর্ষ ১০ তেল ও গ্যাস রপ্তানিকারকদের মধ্যে থাকা ব্রাজিলকে এবার এই বিতর্ক পরিচালনা করতে হবে। সব মিলিয়ে, কপ৩০-কে অবশ্যই রাজনৈতিক বিভেদ কাটিয়ে উঠে জলবায়ু ন্যায়বিচার, ব্যাপক নির্গমন হ্রাস এবং দুর্বল দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের মাধ্যমে বৈশ্বিক ঐক্যের একটি বার্তা দিতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *