চাঁদের মাটিতে চা গাছ জন্মাল, ব্যর্থ মঙ্গলে

চাঁদে গিয়ে নভোচারীরা এক কাপ চা পানের মুহূর্ত উপভোগ করবেন–এমন ধারণা এখন আর অতটা অবাস্তব না–ও হতে পারে। কারণ নতুন গবেষণা বলছে, চাঁদের মাটিতে চা গাছ জন্মেছে। তবে মঙ্গলভূমিতে এমনটি ঘটেনি। ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের একদল গবেষক বলেছেন, চাঁদের পরিবেশ অনুকরণ করে তৈরি মাটিতে চা গাছ জন্মাতে পারে। তাদের এ গবেষণা ভবিষ্যতের মহাকাশযাত্রায়, বিশেষ করে দীর্ঘ সময়ের মিশনে নভোচারীরা কীভাবে নিজেদের খাবার নিজেরাই চাষ করতে পারেন তারই আভাস দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ। খবর বিডিনিউজের।

ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের অধ্যাপক নাইজেল মেসন ও ড. সারা লোপেজ–গোমোলনের নেতৃত্বে পরিচালিত এ প্রকল্পে পার্টনারশিপ হিসেবে রয়েছে ডার্টমুর টি, ইউরোপ্ল্যানেট ও লাইটকার্ভ ফিল্মস। গবেষণার জন্য চায়ের চারা কৃত্রিমভাবে চাঁদ ও মঙ্গলের মাটিতে রোপণ করেছে গবেষক দলটি এবং সেগুলোর বৃদ্ধি পৃৃথিবীর মাটিতে জন্মানো বিভিন্ন চা গাছের সঙ্গে তুলনা করেছেন তারা।

মাটির তাপমাত্রা, আর্দ্রতা ও আলোর মতো পরিবেশগত বিভিন্ন শর্ত সাবধানে নিয়ন্ত্রণ করেছে গবেষণা দলটি, যাতে মহাকাশে নভোচারীরা যেসব পরিস্থিতির মুখে পড়তে পারেন সেই পরিবেশ সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এ গবেষণার ফলাফল ছিল চোখে পড়ার মতো। চাঁদের মাটির মতো কৃত্রিম মাটিতে রোপণ করা চায়ের বিভিন্ন গাছ ভালোভাবে মাটিতে শিকড় গেঁথে বেড়ে উঠেছে, ঠিক যেভাবে পৃথিবীর উর্বর মাটিতে জন্মানো গাছগুলো বেড়ে ওঠে।

অন্যদিকে মঙ্গলের অনুকরণে তৈরি কৃত্রিম মাটিতে রোপণ করা চায়ের গাছগুলো বাড়তে পারেনি, যা গ্রহটিতে ফসল চাষে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং দিক স্পষ্ট করে তুলে ধরেছে। গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য মাটির পুষ্টি উপাদান, পিএইচ মাত্রা, আর্দ্রতা ও গাছের স্বাস্থ্য সম্পর্কে বিস্তারিত মাপজোখ করেছেন ইউনিভার্সিটি অব কেন্টের শিক্ষার্থী আন্না–মারিয়া উর্থ ও ফ্লোরেন্স গ্র্যান্ট।

গবেষণার ফলাফল প্রথমবারের মতো উপস্থাপন করা হবে স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিস্লাভায় ইউরোপীয় স্পেস এগ্রিকালচারের কর্মশালায়, যেখানে মহাকাশে খাবার উৎপাদনের ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে একসঙ্গে জড়ো হচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের চা কোম্পানি ডার্টমুর টি’র সঙ্গে পার্টনারশিপের মাধ্যমে এ গবেষণায় উচ্চমানের ব্রিটিশ চায়ের গাছ ব্যবহার করতে পেরেছেন গবেষকরা।

গবেষণার মূল উদ্দেশ্য, চাঁদে কীভাবে গাছ জন্মাতে পারে তা পরীক্ষা করা। তবে এ প্রকল্প থেকে পাওয়া তথ্য পৃথিবীর জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তন ও অতিরিক্ত চাষাবাদের কারণে বিশ্বজুড়ে মাটি ক্ষয়িষ্ণু হয়ে গেছে এবং কীভাবে গাছ রুক্ষ ও উর্বরহীন মাটিতে টিকে থাকতে পারে তা শেখা কৃষকদের দুর্বল জমি পুনরুজ্জীবিত করতেও সাহায্য করতে পারে।

অধ্যাপক মেসন বলেন, আমরা মহাকাশের নতুন এক যুগে প্রবেশ করছি, যেখানে মানুষ চাঁদ বা মঙ্গলে গিয়ে বসবাস করবে, এমনই ভাবছি আমরা। প্রথমেই জানতে চাওয়া হয়, নভোচারীরা সেখানে গিয়ে কী খাবে? এসব পরীক্ষা থেকে ইঙ্গিত মেলে, চায়ের মতো গাছ কৃত্রিম চাঁদের মাটিতে গ্রিনহাউসে চাষ করা সম্ভব, যা কিছুটা স্বনির্ভরতা দেয় এবং মহাকাশেও এক কাপ চা বিরতির আরাম এনে দিতে পারে।

ড. লোপেজ–গোমোলন বলেন, আমাদের গবেষণার ফলাফল খুবই উৎসাহজনক। গবেষণায় উঠে এসেছে চাঁদের মাটিতে জন্মাতে পারে চা। গবেষণার পরবর্তী ধাপ হচ্ছে, এমন পরিবেশে গাছের শারীরবৃত্তীয় গঠন বোঝা, যাতে আমরা তাদের বৃদ্ধি উন্নত করতে পারি এবং এ গবেষণাকে অন্যান্য ফসলের ক্ষেত্রেও সম্প্রসারিত করতে পারি। গবেষণাটি কেবল ভবিষ্যতের মহাকাশ মিশনের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং পৃথিবীর বাইরে ফসল উৎপাদনেও সহায়ক হতে পারে।

ঠাট্টার ছলে গবেষকরা বলছেন, একদিন চা বিরতির ঐতিহ্য পৃথিবীর মতো চাঁদের মাটিতেও ছড়িয়ে পড়তে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *