অভিবাসন নিয়ে বড় ঘোষণা করলেন ট্রাম্প,বিপাকে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো

হোয়াইট হাউসের কয়েক কিলোমিটার দূরে ন্যাশনাল গার্ডের দুই সদস্যের ওপর এক আফগান নাগরিকের গুলিবর্ষণের ঘটনার রেশ না কাটতেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসন নিয়ে এক যুগান্তকারী ঘোষণা দিলেন। তিনি জানালেন, “তৃতীয় বিশ্বের সব দেশ” থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করা হবে যাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ও অভিবাসন ব্যবস্থা “সম্পূর্ণভাবে পুনরুদ্ধার” হতে পারে।
এই ঘোষণাকে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী অভিবাসন কাঠামোতে এক গভীর ভূমিকম্প। এতে চাকরি, উচ্চশিক্ষা ও নিপীড়ন থেকে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে যুক্তরাষ্ট্রমুখী কয়েক কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ সরাসরি অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে।

ট্রাম্প তাঁর সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ পোস্ট করে দাবি করেন, প্রযুক্তিগতভাবে সমৃদ্ধ হলেও ঢিলেঢালা অভিবাসন নীতি বছরের পর বছর আমেরিকার অগ্রগতিকে ক্ষয় করেছে। তাঁর ভাষায়,“অভিবাসন নীতির কারণে মার্কিন নাগরিকদের জীবনমান নেমে গেছে এবং দেশের আধুনিক অগ্রগতি ধীর হয়েছে।”

তিনি আরও লিখেছেন,“আমি তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে অভিবাসন পুরোপুরি থামিয়ে দেব। বাইডেনের আমলে অবৈধভাবে প্রবেশ করা লাখো মানুষকে বের করে দেওয়া হবে। যারা আমেরিকার সম্পদ নয়, দেশের প্রতি অনুগত নয় কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও উন্নতির জন্য হুমকি তাদের এখানে জায়গা নেই।”

ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্রে থাকা যেকোনো বিদেশি নাগরিক যদি সরকারি ভাতা বা ভর্তুকির ওপর নির্ভরশীল হয়, নিরাপত্তাজনিত ঝুঁকি হয়ে ওঠে, কিংবা “পশ্চিমা সভ্যতার সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ আচরণ” করে তাহলে তাকে সরাসরি দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এমনকি যেসব অভিবাসী নাগরিকত্ব পেয়েও “দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে”, তাঁদের নাগরিকত্ব বাতিলের কথাও বলেন তিনি।

নিজের অভিপ্রায়ের ব্যাখ্যায় ট্রাম্প বলেন, এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বেআইনি ও বিপজ্জনক জনসংখ্যার ব্যাপক কমানোর লক্ষ্যেই। তাঁর অভিযোগ, বাইডেন প্রশাসনের সময় অটোপেনের মাধ্যমে যেসব অননুমোদিত অভিবাসন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলোকে অবৈধ ধরা হবে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বের করে দেওয়া হবে।

ট্রাম্প আরও লেখেন,“এই পরিস্থিতির স্থায়ী সমাধান একটাই রিভার্স মাইগ্রেশন। যারা এসেছে, তারা নিজ দেশে ফিরে যাবে। এর বাইরে কোনো পথ নেই।”

বার্তার শেষদিকে তিনি বলেন, “ধন্যবাদ জ্ঞাপন দিবসের শুভেচ্ছা তবে তাদের জন্য নয়, যারা আমেরিকার মূল্যবোধ ঘৃণা করে, অপরাধে জড়ায় এবং সমাজ ধ্বংস করে। তাদের এখানে থাকার কোনো অধিকার নেই।”

বিশ্ব বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই ঘোষণাটি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসননীতিকে পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। এতে দক্ষিণ এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের অসংখ্য মানুষ প্রভাবিত হবেন। চাকরি, উচ্চশিক্ষা, শরণার্থী সুরক্ষা, এমনকি বৈধ অভিবাসনের পথও কঠোরভাবে সংকুচিত হয়ে পড়তে পারে।

এদিকে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, ট্রাম্পের বক্তব্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং বৈশ্বিক রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা তৈরি করবে। তবে ট্রাম্প-সমর্থকদের মতে, “দেশের নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের জন্য কঠোর কড়াকড়ি ছাড়া উপায় নেই।”

বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে ট্রাম্প প্রশাসন এই ঘোষণাকে বাস্তব নীতিতে রূপ দেয় কি না এবং তা আন্তর্জাতিক অভিবাসন ব্যবস্থায় কতটা গভীর প্রভাব ফেলে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *