ইসলামী ব্যাংক থেকে দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ: এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে দুদকের দুই মামলা

ইসলামী ব্যাংক থেকে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ, তার পরিবার ও ঘনিষ্ঠজনসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

গতকাল (বৃহস্পতিবার) চট্টগ্রামের দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়–১ এ এসব মামলা দায়ের করেন দুদক প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক তাহসীন মুনাবীল হক এবং সহকারী পরিচালক মাহমুদুল হাসান।

অভিযুক্তদের তালিকায় পরিবার ও ব্যাংক কর্মকর্তারাও

মামলায় আসামি করা হয়েছে সাইফুল আলম মাসুদের স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাগ্নে ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজনসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ইসলামী ব্যাংকের সাবেক কয়েকজন কর্মকর্তাকে। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন – মো. মোস্তাইন বিল্লাহ আদিল, আব্দুস সামাদ, ওসমান গণি, ফারজানা পারভীন, আশরাফুল আলম, আহসানুল আলম, মায়মুনা খানম, শারমিন ফাতেমা, মিফতাহ উদ্দীন, মাহবুব উল আলম, মনিরুল মওলা, কায়সার আলী প্রমুখ।

দেড় হাজার কোটি টাকার দুই মামলার বিস্তারিত

দুদকের উপপরিচালক সুবেল আহমেদ জানান, একটি মামলায় ১ হাজার ৭৭ কোটি ১১ লাখ টাকা এবং অন্যটিতে ৫৪৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগ আনা হয়েছে। একটি মামলায় ৩১ জন এবং অন্যটিতে ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। দুটি মামলাতেই সাইফুল আলম মাসুদ, মিফতাহ উদ্দীন এবং মনিরুল মওলার নাম রয়েছে।

প্রথম মামলা: ‘আদিল করপোরেশন’ ব্যবহার করে বড় ধরনের অর্থ পাচার

প্রথম মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, এস আলম চেয়ারম্যানের ভাগ্নে মোস্তাইন বিল্লাহ আদিল ২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় ‘আদিল করপোরেশন’ নামে একটি হিসাব খুলে মাত্র তিন দিনের মধ্যে ‘বিশেষ বিনিয়োগ’ সুবিধায় ১০টি ঋণ সুবিধা পান। তখনকার ঋণসীমা ছিল ৪০০ কোটি টাকা, যা পরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বাড়িয়ে সুদ ও আসলসহ বর্তমানে দাঁড়িয়েছে ১,২১৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকায়। ২০২২ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত আদিল করপোরেশনের হিসাব থেকে নামসর্বস্ব নয়টি প্রতিষ্ঠানে টাকা স্থানান্তর করা হয় এবং সেখান থেকে তা এস আলম গ্রুপের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলে যায়।

দ্বিতীয় মামলা: ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ৫৪৮ কোটি টাকার হস্তান্তর

আরেকটি মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ইসলামী ব্যাংকের ‘টপ টেন’ নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর ৫২১ কোটি ৫২ লাখ টাকা ডেবিট ভাউচারের মাধ্যমে এস আলম গ্রুপের কয়েকটি অয়েল মিলের হিসাবে জমা দেওয়া হয়। এভাবে মোট ৫৪৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে পাচার করা হয়েছে।

দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এসব মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *