ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজি কারাগারে

ফ্রান্সের সাবেক প্রেসিডেন্ট নিকোলাস সারকোজিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর্থিক দুর্নীতির দায়ে তাকে এ দণ্ড দেওয়া হয়। আধুনিক ফ্রান্সের ইতিহাসে তিনিই প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট, যিনি কোনো অপরাধের দায় মাথায় নিয়ে জেলে গেলেন।

লিবিয়ার প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির কাছ থেকে লাখ লাখ ইউরো অবৈধ তহবিল নেওয়া সংক্রান্ত মামলায় ফ্রান্সের সাবেক এই প্রেসিডেন্টকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপরাধের ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি।

২০০৭ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকারী সারকোজি তার কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন। তবে এখন লা সান্তে কারাগারের আইসোলেশন শাখার একটি কক্ষে থাকতে হবে ৭০ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদকে।

২০১১ সালে লিবিয়ায় গণঅভ্যুত্থানের সময় নিহত হন গাদ্দাফি। আদালতের রায় নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন সারকোজি। সে সময় নির্বাচনী প্রচারের জন্য তিনি গাদ্দাফির কাছে থেকে অর্থ সহায়তা নেন। এ নিয়ে হওয়া মামলায় সম্প্রতি রায় দেন প্যারিসের একটি আদালত। রায়ে কারাভোগের পাশাপাশি সারকোজিকে ১ লাখ ১৭ হাজার ডলার জরিমানা করা হয়।

সারকোজি ২০০৭ সালের মে মাসে তুলনামূলক কম প্রতিদ্বন্দ্বীতার মাধ্যমে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এর সাত মাস পরে ডিসেম্বর মাসে প্যারিসে আমন্ত্রণ জানানো হয় গাদ্দাফিকে। পাঁচ দিনের ওই সফরে অনেকটা রাজকীয় অভ্যর্থনা পান গাদ্দাফি।

সারকোজির মেয়াদের শেষ সময়ে ২০১১ সালের জুলাইয়ে গাদ্দাফির থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে মিডিয়া পার্ট। ২০১২ সালে সারকোজির মেয়াদ শেষের পর এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। ২০১৫ সালে সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্টের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ক্লোদ গেয়াঁকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে পুলিশ অর্থের আংশিক পরিমাণ সংক্রান্ত তথ্য পায়। 

পুলিশ জানতে পারে ক্লোদ গেয়াঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ২০০৮ সালে ৫ লাখ ইউরো জমা হয়েছিল। ক্লোদ গেয়াঁ দাবি করেছিলেন, এই অর্থের সঙ্গে লিবিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থটি পেয়েছিলেন ডাচ চিত্রশিল্পীদের অনেক পুরনো দুটি তৈলচিত্র বিক্রি করে। তবে ২০২২ সালের মার্চে, প্যারিসের আপিল কোর্ট নিশ্চিত করেন, গাদ্দাফি নিয়ন্ত্রিত তহবিল থেকে ৫ লাখ ইউরো একটি জটিল চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছিল।

প্রায় ১০ বছর ধরে অনুসন্ধান ও জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ২০২৩ সালের আগস্টে বিচারক ও প্রসিকিউটররা সারকোজির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর সিদ্ধান্ত নেন। সারকোজি ছাড়াও তাঁর সময়ের তিনজন মন্ত্রীর বিরুদ্ধেও ওই সময় বিচার শুরু হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *