গাজায় বিতর্কিত ‘হলুদ রেখা’য় মৃত্যুফাঁদ, ত্রাণ প্রবেশে বাধা

ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ায় বাসিন্দারা জীবনের আশঙ্কা নিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। এখনও ত্রাণ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়নি। ফলে সাধারণ মানুষ খাবারের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় ক্ষুধা নিয়েই দিন কাটাতে হচ্ছে শিশুদের। প্রতিদিন ধ্বংসস্তূপ থেকে মৃতদেহ উদ্ধার হচ্ছে।

সোম ও মঙ্গলবার গাজাজুড়ে হাসাপাতালে আসে ৭০ মৃতদেহ। ইসরায়েলের সৃষ্ট তথাকথিত ‘হলুদ রেখা’ (নির্দিষ্ট সীমানা) এখন মৃত্যুফাঁদ হয়ে উঠেছে। ইসরায়েলি বাহিনী এই সীমানার ভেতরে যাকেই পাচ্ছে তাকে গুলি করছে। গাজার ৫৮ শতাংশ এলাকা এখনও ইসরায়েলি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছে।

মঙ্গলবার আলজাজিরার প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।

এদিকে যুদ্ধবিরতি যাতে ভেস্তে না যায়, সে জন্য মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সকে ইসরায়েলে পাঠিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগের দিন ইসরায়েলে আসেন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার।

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুটি পৃথক হামলায় চার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। পূর্ব গাজা শহরের তুফাহ পাড়ার পূর্বে আল-শাফ এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী গুলি ছোড়ে। বাস্তুচ্যুত বাসিন্দারা তাদের বাড়িঘরে ফিরছিল। গত দুই বছরে ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৬৮ হাজার ২২৯ ফিলিস্তিনি নিহত ও এক লাখ ৭০ হাজার ৩৬১ জন আহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ২২ হাজার ফিলিস্তিনি চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে না।

সোমবার খান ইউনিসের পূর্বাঞ্চলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলা চালিয়েছে। ফলে যুদ্ধবিরতি বহাল থাকবে না– এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে ফিলিস্তিনিদের মনে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান ফিলিপ লাজ্জারিনি এক্স পোস্টে বলেছেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি অবশ্যই বজায় রাখা উচিত।  

গাজার হলুদ রেখা বলতে ট্রাম্পের শেয়ার করা যুদ্ধবিরতি মানচিত্রে আঁকা একটি সীমানাকে বোঝায়, যেখানে হলুদ রঙে চিহ্নিত ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের সীমানা দেখানো হয়েছে। মানচিত্র অনুযায়ী, হলুদ রেখার ভেতরের এলাকাটি প্রায় ১৫৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। হলুদ রেখা চিহ্নিত করার জন্য সাইনবোর্ড স্থাপন করা হচ্ছে। দখলদার বাহিনী সতর্কতা দিয়েছে, হলুদ রেখা অতিক্রমকারী যে কেউ হুমকি হিসেবে বিবেচিত হবে। হলুদ রেখা কার্যকর করার পর থেকে গাজার পূর্বাঞ্চল থেকে বহু ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করা হয়েছে। সীমানার মধ্যে প্রবেশ করলেই গুলি করছে দখলদার সেনারা।   

ত্রাণ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে ইসরায়েল 
গত রোববার ইসরায়েল গাজায় মানবিক সাহায্যের চালান বন্ধ করার হুমকি দেয়। যদিও তারা বলেছে, যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন ফের শুরু হয়েছে এবং সোমবার থেকে ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করতে পারছে। জাতিসংঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেছেন, ত্রাণ সরবরাহ ফের শুরু হয়েছে। তবে ত্রাণের পরিমাণ স্পষ্ট করা হয়। 

আলজাজিরা জানায়, ইসরায়েল এখনও গাজায় সাহায্য প্রবেশে বাধা দিচ্ছে। বেশ কয়েকটি সামরিক চেকপয়েন্টে ত্রাণবাহী ট্রাক থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ছয় হাজার ৬০০ ট্রাকের মধ্যে মাত্র ৯৮৬টি ত্রাণ ট্রাক গাজায় প্রবেশ করেছে।

অস্থিরতা কমাতে ইসরায়েলে জেডি ভ্যান্স 
গার্ডিয়ান জানায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের প্রচেষ্টার মধ্যে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স গতকাল ইসরায়েলে পৌঁছেছেন। ভ্যান্সের সঙ্গে আছেন স্ত্রী উষা। আজ জেরুজালেমে তিনি নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখা করবেন। সফরে তিনি যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা করবেন এবং দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু করার জন্য নেতানিয়াহুকে চাপ দেবেন। তিনি ইতোমধ্যে গাজায় তাঁর বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ ও জামাতা জ্যারেড কুশনারকে ইসরায়েলে পাঠিয়েছেন। তারা নেতানিয়াহুর সঙ্গে দেখাও করেছেন। লক্ষ্য একটাই, যুদ্ধবিরতি যাতে কোনোভাবেই ভেস্তে না যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *