বিদায় হজ্বের ভাষণ মানবজাতির জন্য এক চিরন্তন আদর্শ

চুনতির ১৯ দিনব্যাপী ঐতিহাসিক সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিলের ৫৫তম আসর শেষ হয়েছে সোমবার। সমাপনী দিবসের প্রধান অধিবেশন বাদ মাগরিব লাখো ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের উদ্দেশে ‘বিদায় হজ্বের ভাষণের তাৎপর্য’ শীর্ষক আলোচনা করেন বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক আল্লামা মুহাম্মদ আবদুল হাই নদভী (ম.জি.আ)। 

তিনি বলেন, বিদায় হজ্বের ভাষণ ইতিহাসের এক অনন্য দলিল। যা মানবজাতির সর্বজনীন অধিকার, সাম্য, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মর্যাদার মূর্তপ্রতীক। বিদায় হজ্বের ভাষণ মানবজাতির জন্য এক চিরন্তন আদর্শ। এতে যে সাম্য, ভ্রাতৃত্ব, মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে, তা আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। এটি শুধুমাত্র মুসলমানদের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির জন্য একটি মহান শিক্ষণীয় দলিল। 

আবদুল হাই নদভী বলেন, মহানবী (সা.) এই বক্তব্যের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে পেশ করে গেলেন একটি সার্বজনীন জীবনাদর্শ। এই ভাষণের মাধ্যমে তিনি পুরো দ্বীন-ইসলামের সারাংশ তুলে ধরেছেন এবং এটিই ছিল তার নবুয়তি জীবনের উপসংহার। 

তিনি বলেন, এই ভাষণ কুসংস্কার, শোষণ ও বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে। বর্ণবাদের মূলোৎপাটন ঘটিয়ে মহানবি (সা.) আজ থেকে সাড়ে চৌদ্দশত বছর পূর্বে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘তোমাদের রব একজন এবং তোমাদের পিতাও একজন। জেনে রেখো, অনারবের ওপর আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই এবং আরবের ওপরও অনারবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। কালোর ওপর সাদার এবং সাদার ওপর কালোরও কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের একমাত্র ভিত্তি হলো তাকওয়া।’ 

রাহবারে বায়তুশ শরফ বলেন, বিদায় হজ্বের ভাষণে মহানবি (সা.) মুসলিম উম্মাহকে কুরআন ও সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকার পথ দেখিয়েছেন।

সমাপনী দিবসে বিশেষ মেহমান ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ও চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী। সমাপনী দিবসে অন্যদের মাঝে বক্তব্য রাখেন নারায়ণগঞ্জ জৈনপুরী দরবারের পির ড. এনায়েত উল্লাহ আব্বাসী, বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ ড. মাওলানা সাইয়িদ আবু নোমান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি বিভাগের প্রফেসর ড. মাওলানা আ. ক. ম আবদুল কাদের, আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মাওলানা গিয়াস উদ্দিন তালুকদার, কুমিল্লা নাগাইশ দরবারের পির মাওলানা মোশতাক ফয়েজী, মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, ড. হাফেজ মাওলানা শহিদুল ইসলাম বারাকাতি, মাওলানা এহসান উল্লাহ আব্বাসী, মাওলানা জহিরুল ইসলাম জাবেরী। 

অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন চুনতি হাকিমিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা ফারুক হোছাইন। রাতব্যাপী মাহফিল শেষে সালাতু সালাম ও কেয়ামের পর দেশ-জাতি ও মুসলিম মিল্লাতের সুখ-সমৃদ্ধি, কল্যাণ কামনার মাঝে উপস্থিত লাখো মুসল্লীর আমীন-আমীন ধ্বনির মধ্য দিয়ে ১৯ দিনব্যাপী সীরাতুন্নবী (সা.) মাহফিলের বিশেষ আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *