বিশ্বে জাতিসংঘের ১৯৩টি সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৫০টি দেশ ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তবে এখনও কয়েকটি শক্তিশালী দেশ, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র, এই স্বীকৃতি দেয়নি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য পাঁচটি দেশ—যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, চীন, এবং রাশিয়া—এর মধ্যে চীন, রাশিয়া ও যুক্তরাজ্য ইতোমধ্যেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। ফ্রান্সও এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে, তবে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যা ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, অন্যান্য দেশ শুধুমাত্র “লোক দেখানোর জন্য” ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিচ্ছে।
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার প্রেক্ষিতে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মন্তব্য করেছেন, এসব স্বীকৃতির মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে। তিনি গত ১৫ সেপ্টেম্বর বলেন, “ফিলিস্তিন রাষ্ট্র বলে কিছুই হবে না।”
ফিলিস্তিনের জাতিসংঘভুক্তির সম্ভাবনা
গত ১২ সেপ্টেম্বর, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পক্ষে একটি প্রস্তাব পাস হয়। “নিউইয়র্ক ঘোষণা” নামে পরিচিত এ প্রস্তাবে ১৪২টি দেশ ফিলিস্তিনের পক্ষে ভোট দিয়েছে, ১০টি দেশ বিপক্ষে এবং ১২টি দেশ ভোটদান থেকে বিরত ছিল। ফ্রান্স ও সৌদি আরবের নেতৃত্বে প্রস্তাবটি উত্থাপন করা হলেও, যুক্তরাষ্ট্র এর বিরোধিতা করেছে।
জাতিসংঘ সনদের ৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সাধারণ পরিষদের কোনো প্রস্তাব পাস হলে তা নিরাপত্তা পরিষদেও পাস হতে হয়। নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী সদস্যের ভেটোতে প্রস্তাব আটকে যাওয়ার কারণে, ফিলিস্তিন-ইসরাইল দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধান কখনোই বাস্তবায়িত হতে পারে না এবং ফিলিস্তিন জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্য রাষ্ট্র হতে পারবে না।
ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির তাৎপর্য
বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতিতে ফিলিস্তিনের জন্য কোনো নতুন বিশেষ অধিকার সৃষ্টি না হলেও, এটি দেশের আন্তর্জাতিক অবস্থানকে শক্তিশালী করে। ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বিশ্লেষক রিদা আবু রাস আল-জাজিরাকে বলেছেন, “এটি ইসরাইলকে আন্তর্জাতিক মহলে বিচ্ছিন্ন করতে সহায়তা করবে, তবে সরাসরি গাজায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ডে কোনো প্রভাব ফেলবে না।”
অনেকেই মনে করেন, এই স্বীকৃতির মাধ্যমে দেশগুলো আন্তর্জাতিক চাপ এবং অভ্যন্তরীণ জনগণের চাপের মুখে দায়মুক্তির চেষ্টা করছে। ফ্রিল্যান্স গবেষক ক্রিস ওসিয়েক আল-জাজিরাকে বলেন, “যতক্ষণ না এই স্বীকৃতির সাথে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়, ততক্ষণ আমি আশাবাদী নই।”
ফিলিস্তিনের লাভ কি?
বিভিন্ন দেশের স্বীকৃতির পরেও ফিলিস্তিনের জন্য জাতিসংঘে বিশেষ কোনো অধিকার তৈরি হয় না এবং যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন ছাড়া আন্তর্জাতিক কোনো সংস্থার সদস্য হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। তবে, ফিলিস্তিন বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বাড়াতে এবং বিভিন্ন চুক্তি করার সুযোগ পাবে।
এই স্বীকৃতি ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বৈধতা প্রদান করে, এবং বিশ্বমঞ্চে ইসরাইলকে আর শুধু “সংঘাতরত পক্ষ” নয়, বরং একটি দখলদার শক্তি হিসেবে তুলে ধরতে সহায়ক হয়। পশ্চিমা দেশগুলোর এই স্বীকৃতি ইসরাইলকে কূটনৈতিকভাবে আরও বিচ্ছিন্ন করে, ফলে আন্তর্জাতিক চাপ তৈরি হচ্ছে এবং দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের পথ কিছুটা সহজ হতে পারে।