নিম্নচাপ ও অমাবস্যার প্রভাবে সেন্টমার্টিন ও শাহপরীরদ্বীপে জোয়ারের পানি, প্লাবিত ২০০ ঘর

কয়েকদিন ধরে অব্যাহত ভারী বৃষ্টিপাত ও বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হওয়া নিম্নচাপের প্রভাবে সাগর উত্তাল রয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অমাবস্যার জোয়ার। এতে সেন্টমার্টিন ও শাহপরীরদ্বীপে জোয়ারের পানি বেড়ে প্রবল বেগে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ও উপকূলীয় বিস্তীর্ণ কৃষিজমি প্লাবিত হয়েছে।

জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে তিন ফুট পর্যন্ত উচ্চতায় প্রবাহিত হওয়ায় টেকনাফ উপজেলার অন্তর্গত দ্বীপগুলোতে সৃষ্টি হয়েছে চরম দুর্ভোগ। প্রায় ৫০ হাজার মানুষ অনিশ্চয়তা ও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।

সেন্টমার্টিনে ভাঙন ও প্রাচীর বিলীন

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ফয়েজুল ইসলাম বলেন,

“গত দুই দিন ধরে অমাবস্যা ও নিম্নচাপের কারণে জোয়ারের উচ্চতা বেড়েছে। দ্বীপের চারপাশে ভাঙন শুরু হয়েছে। অনেক স্থানে বালিয়াড়ি ধসে পড়েছে। সীমানা নির্ধারণের প্রাচীরও বিলীন হয়ে গেছে।”

তিনি আরও জানান, যদি দ্রুত জিও ব্যাগ বা ব্লক ফেলার ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তাহলে দ্বীপের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে।

ভাঙনের ফলে অনেকের বসতবাড়ির আশপাশের গাছপালা উপড়ে গেছে। উপকূলবর্তী অসংখ্য পরিবার গৃহহীন হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে।

শাহপরীরদ্বীপে ৪০ হাজার মানুষের শঙ্কা

টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপে অবস্থান করছে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। দ্বীপটি তিন দিক থেকে বঙ্গোপসাগর এবং একপাশে নাফ নদী দিয়ে ঘেরা।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুস সালাম জানান,

“গত দুই দিন ধরে বেড়িবাঁধ উপচে ঘোলারচর, পশ্চিমপাড়া, ডাঙ্গরপাড়া, মিস্ত্রিপাড়া, বাজারপাড়া ও জালিয়াপাড়াসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় পানি ঢুকে পড়ছে। এতে নিচু এলাকার বাড়িঘর ও রাস্তা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।”

প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

টেকনাফ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন,

“বেড়িবাঁধ দিয়ে লোনা পানি ঢুকে পড়ার বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তাদের নির্দেশনা পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন,

“সেন্টমার্টিন ও শাহপরীরদ্বীপে সমুদ্রসৈকতের বালিয়াড়ি ধসে পড়েছে এবং লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়েছে।”

সাগরের ক্রমাগত উত্তাল অবস্থা, অমাবস্যার প্রভাবে বৃদ্ধি পাওয়া জোয়ার এবং উপকূলীয় অবকাঠামোর দুর্বলতা মিলিয়ে সেন্টমার্টিন ও শাহপরীরদ্বীপে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নিলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *