জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, একবার বলা হচ্ছে, নির্বাচন ডিসেম্বরে হবে। আবার কখনো শুনছি মার্চে, আবার বলা হচ্ছে জুনে। এ ধরনের বক্তব্য না দিয়ে জাতিকে একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে আশ্বস্ত করা দরকার বলে মনে করেন তিনি।আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে রিকশাভ্যান ও অটোচালকদের মধ্যে ঈদ উপহার দিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘অনেকে বলে, আন্দোলন কি করা হয়েছে শুধু নির্বাচনের জন্য? নির্বাচন সুষ্ঠু করেনি বলেই তো আন্দোলন হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করেননি শেখ হাসিনা। গদি রক্ষার জন্য দেশকে রক্তঝরা কারবালায় পরিণত করে তিনি ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর জন্যই এক ব্যাপক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে অনেক আত্মদানের মধ্য দিয়ে গঠিত হয়েছিল অন্তর্বর্তী সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের জনগণের ভোটে না হলেও জনগণের সমর্থন রয়েছে। কারণ, সব আন্দোলনকারী দল আপনাদের সমর্থন দিয়েছে।’
রিজভী বলেন, ‘যখন আন্দোলনকারী দলগুলো নির্বাচনের কথা বলছে যে আপনারা সুনির্দিষ্ট সময় দিন এবং একটি নির্দিষ্ট সময় দিন, যাতে নির্বাচনটা প্রলম্বিত না হয়; কিন্তু তখন বারবার কখনো ডিসেম্বর শুনি, আবার কখনো শুনছি মার্চ, আবার শুনি জুন। এ ধরনের পেন্ডুলামের মতো বক্তব্য দুলছে অন্তর্বর্তী সরকারের। এই দোদুল্যমান অবস্থা থেকে জাতিকে একটি সুনির্দিষ্ট তারিখ দিয়ে আশ্বস্ত করা দরকার।’ঈদের প্রাক্কালে মানুষের যাতে দুর্ভোগ পোহাতে না হয়, এটা এই সরকারকে দেখতে হবে বলেন বিএনপি এই নেতা। তিনি প্রশ্ন তুলে বলেন, এখনো ১২২ পোশাক কারখানার শ্রমিকেরা কেন বেতন পাননি? এটা তো একটা বড় প্রশ্ন।
ন্যায়বিচারের কারণে মেয়রের স্বীকৃতি:
ন্যায়বিচার নিশ্চিত হওয়ার কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলেন রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ‘ন্যায়বিচার নিশ্চয়তার যখন ন্যূনতম সুযোগ পাওয়া গেছে, সেই ন্যায়বিচারের মাধ্যমেই প্রকৌশলী ইশরাক মেয়র হিসেবে আদালত থেকে স্বীকৃতি পেয়েছেন। সে ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোথায় কী লিখল, বলল, কিছু যায় আসে না।’রিজভী আরও বলেন, ‘সে (ইশরাক) জোরজবরদস্তি করতে পারত। সে অত্যন্ত জনপ্রিয়, ১০ হাজার ২০ হাজার লোক নিয়ে নির্বাচন কমিশন ঘেরাও করতে পারত। করে বলত, ৫ আগস্টের পরে আমাকে ঘোষণা করা হোক। যেকোনো একটা জবরদস্তিমূলক পন্থা অবলম্বন করতে পারত। সেটা তো সে করেনি। সে আইনি প্রক্রিয়ায় গেছে।’
দায়িত্ব নিতে হবে রাষ্ট্রকেজুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে ১৭ জন রিকশাশ্রমিক জীবন দিয়েছেন জানিয়ে অনুষ্ঠানে রুহুল কবির রিজভী বলেন, আন্দোলনের বিজয়ের পর তাঁদের সন্তানরা যদি স্কুলের বেতন দিতে না পেরে কান্নাকাটি করে, এটা কতটা বেদনাদায়ক, তা চিন্তাও করা যায় না।অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রিজভী বলেন, যাঁরা এই আন্দোলনে জীবন দিয়েছেন, যাঁরাই হোক না কেন, তাঁদের পরিবার যেন না খেয়ে না থাকে। তাঁদের পরিবার, পরিবারের সন্তানেরা যেন স্কুল থেকে বঞ্চিত না হয়। কলেজ থেকে বঞ্চিত না হয়। তাদের লেখাপড়া এবং পরিবারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। তারা কেন দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াবে। তাদের শিক্ষা–স্বাস্থ্যব্যবস্থা—প্রতিটির দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। আরও উপস্থিত ছিলেন দলের যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ; বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য কাজী রফিক ও মাহবুবুল ইসলাম।