প্রমা ও লাবণ্য ছড়ানো সত্তর

আমাদের নান্দনিক জীবনবোধে–প্রমা ও লাবণ্য ছড়ানো স্বাপ্নিক কবি ফরিদা ফরহাদ। ২৯ ডিসেম্বর আমাদের এই প্রিয় সব্যসাচী লেখিকা ফরিদা ফরহাদ জীবনের ৭০তম বর্ষে পদার্পণ করবেন। লেখালেখি, সমাজসেবা, উপস্থাপনা, সংগঠন পরিচালনা–প্রতিটি ক্ষেত্রেই তিনি উজ্জ্বল ও অনন্য। সাহিত্যের নানা শাখায় তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ। গল্প–কবিতা–ছড়া–প্রবন্ধ–ভ্রমণকাহিনী–সবক্ষেত্রে তিনি স্বতঃস্ফ্‌ূর্ত। ১৯৫৫ সালের ২৯ ডিসেম্বর টাঙ্গাইল জেলায় ফরিদা ফরহাদ জন্মগ্রহণ করেন।

ফরিদা ফরহাদ বিভিন্ন সংগঠনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তন্মধো রয়েছে চট্টগ্রাম লেখিকা সংঘ, চট্টগ্রাম লেডিস ক্লাব, চট্টগ্রাম একাডেমী, পলগ, চট্টগ্রাম কলেজ প্রাক্তন ছাত্র–ছাত্রী পরিষদ, খেলাঘর, জেসাস, লায়ন্স ক্লাব, অনুসূয়া,বেগম আজীবন সদস্য: শিশু একাডেমী, মা ও শিশু হাসপাতাল , মহিলাপরিষদ, বাংলা একাডেমী প্রভৃতি। চট্টগ্রাম বেতার ও চট্টগ্রাম টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে কবিতা ও গল্প পাঠ, নাট্যকার হিসেবে ভূমিকা রেখেছেন। পড়ালেখা শেষ করে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন শিক্ষকতা। স্ব–উদ্যোগে এবং স্বামী মুক্তিযোদ্বা মরহুম ফরহাদ হোসেনের অকৃত্রিম প্রেরণায় তিনি আসতে পেরেছেন বর্তমান অবস্থানে। তিনি একাধারে কবি ও গল্পকার, শিশু সাহিত্যিক, নাট্যকার হিসেবে নিজেকে পাঠকের কাছে পরিচিত করেছেন। ভ্রমণ ও বই পড়া তাঁর প্রিয় শখ।

সদ্যপ্রয়াত নারীনেত্রী, শহীদজায়া বেগম মুশতারী শফীর নেতৃত্বে সকল প্রগতিশীল আন্দোলনে অন্যান্যদের সঙ্গে সামিল ছিলেন ফরিদা ফরহাদ। ‘বান্ধবী’ পত্রিকায় ক্লাস সিক্সে পড়ার সময় তারঁ প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়। নিয়মিত লিখতে গিয়ে এক সময় ‘বান্ধবী’র কর্ণধার বেগম মুশতারী শফীর সঙ্গে গড়ে উঠে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক। সে সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত অটুট ছিল। ১৯৭১–এর মুক্তিযুদ্ধে চট্টগ্রাম শহরে গেরিলা মহিলা সংগঠকদের একজন ফরিদা। তিনি ছিলেন সেসময় চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী। সেসব দিনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে কবি ফরিদা ফরহাদ বলেন–খুব বেশি ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের আপাকে হারিয়ে। আপনজন হারানোর ব্যথা অনুভব করছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও নারী সমাজের মুক্তির জন্য মুশতারী আপার অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। কবি ওহীদুল আলম আমাকে খুবই স্নেহ করতেন। তিনি আমাকে সেসময় সাহিত্যিক আবুল ফজলদের পারিবারিক পত্রিকা দৈনিক জামানা’র সাহিত্য পাতা সম্পাদনার দায়িত্ব প্রদান করেন। এছাড়া জাসদের একটি মুখপত্র/ বুলেটিনও আমি কিছুদিন সম্পাদনা করেছি।

ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে ফরিদা ফরহাদের বেশ কয়েকটি বই–যেগুলো পাঠক সমাজে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয়েছে। বইগুলো হল: কবিতা–জীবনের পংক্তিমালা, অগ্নি সাক্ষীর নেই প্রয়োজন, নদী ও নারী–নর ও বন, স্পর্শ পেলেই, ছড়া– স্বপ্নে রাঙ্গা দিনগুলি, খেলতে পড়তে ছড়া, ছড়ার দেশে পড়ার দেশে, ছোট গল্প– নিঃশব্দ যন্ত্রণা, আমাকে ভালোবাসতে দাও, উপন্যাস– সুন্দর। সম্পাদনা– লাবন্য,অনুসূয়া সাহিত্যপত্রিকা, লেডিস ক্লাবের মুখপত্র ‘ঝিমিক’ ইত্যাদি ।

শৈলী প্রকাশন থেকে “স্পর্শ পেলেই” সহ তাঁর সামপ্রতিকালে প্রকাশিত হয়েছে কিছু কবিতাগ্রন্থ। এতে স্থান পেয়েছে বিচিত্রধর্মী কবিতা। সমাজ ভাবনামূলক অনুষঙ্গ নির্ভর কবিতা যেমন রয়েছে, তেমনি স্থান পেয়েছে মানবিক দৃষ্টিকোণ ও প্রেমানুষঙ্গ। আশা করি সচেতন ও অনুরাগী পাঠক কবিতাগুলোর রস আস্বাদন করতে সক্ষম হবেন।

ফরিদা ফরহাদ এদেশের মুক্তিসংগ্রামের একজন নিবেদিত প্রাণ সৈনিক হিসেবে এবং একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হিসেবে এখনও স্বপ্ন দেখেন এদেশের মানুষ শোষণহীণ, বৈষম্যমুক্ত হবে আর অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশের আজন্ম স্বপ্ন একদিন পূরণ হবেই। সে আশা নিয়ে তিনি এখনো তাঁর লেখনি চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী ২৯ ডিসেম্বর আমাদের এই প্রিয় সব্যসাচী লেখক ফরিদা ফরহাদ জীবনের ৭০ তম বর্ষে পদার্পণ করতে যাচ্ছেন। প্রত্যাশা করছি দেশপ্রেম, মানবতা আর সাম্যবাদের সপক্ষে তাঁর জীবনাদর্শ তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। তিনি সুস্থ থেকে প্রগতিশীল বাংলাদেশ গড়ার চলমান সাংস্কৃতিক আন্দোলনকে আরো বেগবান করবেন। আমাদের নান্দনিক জীবনবোধে প্রমা ও লাবণ্য ছড়ানো স্বাপ্নিক কবি ফরিদা ফরহাদকে তাঁর ৭০তম জন্মবার্ষিকী’তে জানাই আগাম শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *