কুচকুচে কালো

গানে আছে– চুল কালো, আঁখি কালো, কাজল কালো আরো… কাজলের চেয়ে কালো কী আছে বলো? তা কারও চেহারা সে যতই কালো হোক, রবীন্দ্রনাথও তাঁর কৃষ্ণকলির কালো হরিণ-চোখ দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন। আর এখন তো অনেক মানুষই কালো পোশাক পরে ফ্যাশন করতে পছন্দ করেন। কালোপ্রেমী সেই ফ্যাশন সচেতনদের বিশেষ সুখবর দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা। পাপুয়া নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চলের স্বর্গীয় পাখি বলে পরিচিত ম্যাগনিফিসেন্ট রাইফেলবার্ডের পালক থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তারা বানিয়েছেন পৃথিবীতে এ যাবৎকালের সবচেয়ে গাঢ় বা কুচকুচে কালো কাপড়। 

সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, সম্প্রতি সবচেয়ে কালো কাপড় তৈরির এ গবেষণাটি নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। সাদা মেরিনো উল থেকে তৈরি নিকষ কালো এই কাপড়টিকে প্রথমে পলিডোপামিন দিয়ে রং করা হয়, যা মেলানিন নামক প্রাকৃতিক রঞ্জক পদার্থের (আমাদের ত্বক, চুল ও চোখের রংও নির্ধারণ করে) একটি কৃত্রিম রূপ। এরপর এটিকে একটি প্লাজমা চেম্বারে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে সূক্ষ্ম, কাঁটাযুক্ত কাঠামো, যা ‘ন্যানোফাইব্রিলস’ নামে পরিচিত। এই ন্যানোফাইব্রিলস খুব কার্যকরভাবে ৯৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ আলো শোষণ করতে পারে। পরে ন্যানোফাইব্রিলস দিয়েই তৈরি হয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে কুচকুচে কালো কাপড়।

গবেষকরা বলেন, ম্যাগনিফিসেন্ট রাইফেলবার্ডের পালক তার গাঢ় কালো রং অর্জন করে মেলানিন সমৃদ্ধ বারবিউলসের মাধ্যমে। এগুলো হলো ছোট চুলের মতো ফিলামেন্ট, যা আলোকে শোষণ করে। কিছু প্রজাতির মাছ এবং প্রজাপতিরও আল্ট্রাব্ল্যাক রং থাকার বিষয়টি জানা যায়।
নিউইয়র্কের কর্নেল ইউনিভার্সিটির মানবকেন্দ্রিক নকশা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং সবচেয়ে কালো কাপড় তৈরি-সংক্রান্ত গবেষণার জ্যেষ্ঠ লেখক লারিসা শেফার্ড বলেন, আমরা যখন এটি নিয়ে কাজ করছিলাম, তখন অধ্যাপকরা এসে বলেছিলেন, তারা যেন কৃষ্ণগহ্বর দেখছেন। 

গবেষকরা জানান, তারা এই কাপড়টি ব্যবহার করে এরই মধ্যে একটি একক প্রোটোটাইপ পোশাক তৈরি করেছেন, যার নকশা দেখতে ম্যাগনিফিসেন্ট রাইফেলবার্ডের পালকের মতো। তারা উপাদানটির জন্য একটি অস্থায়ী পেটেন্টও দাখিল করেছেন। মূলত বিশেষ এই কাপড়টি ‘আল্ট্রাব্ল্যাক’ নামে উপাদানের একটি শ্রেণিভুক্ত, যা সাধারণত শূন্য দশমিক ৫ শতাংশের কম আলো প্রতিফলিত করে। এই জাতীয় উপাদানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত হলো ভ্যান্টাব্ল্যাক, যা কোনো কাপড় নয়; বরং একটি আবরণ। এটি ২০১৪ সালে তৈরি করা হয় এবং এটি কার্বনের আণুবীক্ষণিক ফিলামেন্ট দিয়ে তৈরি, যা ৯৯ দশমিক ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত দৃশ্যমান আলো শুষে নিতে পারে। এটি মূলত টেলিস্কোপ এবং ক্যামেরার মতো উন্নত অপটিক্সে এবং বিলাসবহুল পণ্য ও শিল্পকর্মে ব্যবহৃত হয়। এ বিষয়ে লারিসা শেফার্ড বলেন, ভ্যান্টাব্ল্যাকের তুলনায় গবেষকরা যাকে আল্ট্রাব্ল্যাক উল বলছেন, এই নতুন কাপড়টির সুবিধা হলো, এটি পরিধানযোগ্য এবং তৈরি কম ব্যয়বহুল। আমরা এই কাপড়টির সম্ভাব্য ব্যবহার নিয়ে কাজ করছি, যা শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। তবে আমি স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছি, এটি দারুণ হাই-এন্ড ফ্যাশন উপাদান হবে।

গবেষণার সহ-লেখক এবং কর্নেল ইউনিভার্সিটির ডক্টরাল ছাত্র কিউইন পার্কের মতে, নতুন কাপড় দিয়ে তৈরি পোশাকগুলো কেবল তীব্র কালোই দেখাবে না, বরং এর মধ্যে থাকবে উন্নত তাপ নিয়ন্ত্রণকারী বৈশিষ্ট্যও। আপনি যদি পুরোপুরি আল্ট্রাব্ল্যাক পোশাক পরেন, তবে আপনি বাড়ির ভেতরে স্বাভাবিক অনুভব করবেন। কিন্তু যদি সূর্যের নিচে যান, তবে পোশাকটি তাপ শোষণ করার ফলে শরীর দ্রুত গরম হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *