বই-ব্যাগ ছাড়াই স্কুলে ফিরছে গাজার শিশুরা

কাঁধে ব্যাগ নেই, নেই বই বা ইউনিফর্ম। পরনে ছেঁড়া জামা আর জোড়াতালি দেওয়া প্যান্ট। তবু প্রতিদিন গাজা সিটির ভাঙা রাস্তায় হেঁটে হেঁটে অস্থায়ী স্কুলে যায় ১১ বছরের লাইয়ান হাজি। যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপ পেরিয়ে তার এই পথচলা যেন বেঁচে থাকার লড়াইয়ের মাঝেও আশার আলো খোঁজার যাত্রা। খবর বাসসের।

লাইয়ান বলে, অন্তত আধা ঘণ্টা কষ্ট করে হাঁটতে হয়। চারপাশে শুধু ধ্বংসস্তূপ। খুব মন খারাপ হয়। তবু আবার পড়াশোনা করতে পেরে আমি খুশি। বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই।’ গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, দু’বছর ধরে চলা ইসরাইল–হামাস যুদ্ধ বন্ধের পর গাজার শিশুদের জন্য ফের কিছু স্কুল খুলেছে। আল–লুলুয়া আল–কাতামি স্কুলে লায়ানের মত প্রায় ৯শ’ শিক্ষার্থী পড়াশোনা শুরু করেছে। তবে এই স্কুল এখন আর আগের সেই স্কুল নেই। দেয়াল ও করিডোরে কোন রঙ নেই, নেই রং–বেরংয়ের আঁকিবুকিও। ভাঙা স্কুলভবনের ভেতরে টাঙানো তাঁবুই এখন তাদের শ্রেণিকক্ষ। লাইয়ান জানায়, বই নেই, খাতাও নেই। বোমা হামলায় লাইব্রেরি ধ্বংস হয়ে গেছে।

এক মাস আগে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এবং গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরাইলি সোদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকা এলাকাগুলোর শিশুরা ধীরে ধীরে স্কুলে ফিরতে শুরু করেছে। ১৬ বছরের সাঈদ শেলদানও স্কুলে ফিরতে পেরে আনন্দিত। কিন্তু লায়ানের মত তার কাছেও কোন শিক্ষা উপকরণ নেই। নেই চেয়ার–টেবিল, বিদ্যুৎ কিংবা পানিও।

সে জানায়, ‘প্রতিদিন সকালে স্কুলে যাওয়ার আগে পানি সংগ্রহ করতে হয় এবং রুটির জন্য লাইনে দাঁড়াতে হয়। যুদ্ধের মধ্যে শেলদানের পরিবারকে কমপক্ষে ১০ বার বাড়িঘর ছাড়তে হয়েছে। বর্তমানে তাদের আর কোন বাড়ি নেই। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ৫০ বছর বয়সী ইমান আল–হিনাওয়ি আশা করছেন খুব শিগগিরই বিনামূল্যে বই ও অন্যান্য সামগ্রী সরবরাহ করতে পারবেন।

তবে আক্ষেপ করে জানান, যুদ্ধে পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী নিহত হওয়ার কারণে গাজার অনেক শিশু ‘কঠোর শ্রম’ করতে বাধ্য হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *