প্রতিদিন মোমো খেলে যা হয়

রাস্তার পাশের ফুড কার্ট থেকে শুরু করে অভিজাত রেস্তোরাঁ-মমো এখন সর্বত্র সহজলভ্য। ধোঁয়া ওঠা গরম এক প্লেট মোমোর সঙ্গে ঝাল চাটনির মেলবন্ধন যেন মুহূর্তেই মুড বদলে দেয়। ক্ষুধা মিটুক বা মন খারাপের ক্লান্ত বিকেলে মমো অনেকের জন্যই হয়ে উঠেছে মুহূর্তে প্রশান্তি দেওয়া এক কমফোর্ট ফুড।

তেল-মসলা কম, ভাজাভাজার ঝামেলাও নেই- তাই প্রথম দেখায় মমো বেশ স্বাস্থ্যকর বলেই মনে হয়। কিন্তু এর পেছনের গল্পটা কি সত্যিই এত সহজ? মুখরোচক এই মোমো আসলে কতটা স্বাস্থ্যকর-এ নিয়ে পুষ্টিবিদদের মত কিন্তু ভিন্ন।

ফাইন্ড কার্বোহাইড্রেটের ফাঁদ যে কতটা গভীর, মোমো তারই এক সহজ উদাহরণ। মোমোর মূল উপাদান ময়দা, যা আসলে রিফাইন্ড কার্বোহাইড্রেট-দেখতে সাদা, নরম হলেও পুষ্টিগুণে শূন্য। এর সঙ্গে যুক্ত হয় বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত উপাদান, যেগুলো শরীরের তেমন কোনো উপকার করে না। এই মিশ্রণে প্রয়োজনীয় ফাইবার, প্রোটিন বা ভিটামিন-মিনারেলের উপস্থিতি প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে প্রতিদিন এমন খাবার খেতে থাকলে হজমের স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হতে পারে। পেটে অস্বস্তি, গ্যাস, পেটফাঁপা কিংবা বদহজম। এসব সমস্যা ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে এবং শরীরের সামগ্রিক মেটাবলিজমেও প্রভাব ফেলে।

মোমোর আসল স্বাদ যেন সম্পূর্ণ হয় সেই ঝাল–টক চাটনিতে। কিন্তু এই মুখরোচক চাটনিই লুকিয়ে রাখে বেশ কিছু অস্বাস্থ্যকর উপাদান। অতিরিক্ত লবণ ও অস্বাস্থ্যকর চর্বি এতে থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়, যা দীর্ঘমেয়াদে কার্ডিয়োভাসকুলার সিস্টেমের ওপর চাপ বাড়ায় এবং হজমের সমস্যাকেও বাড়িয়ে তোলে।

পুষ্টিবিদদের মতে, মোমো যদি নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসের অংশ হয়ে যায়, তবে তার প্রভাব শুধু পেটে অস্বস্তি বা গ্যাসেই সীমাবদ্ধ থাকে না। কার্বোহাইড্রেটে ভরপুর হওয়ায় ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ এবং অন্যান্য হৃদ্‌রোগের কারণ হতে পারে।

নিয়মিত মোমো খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা ধীরে ধীরে বাড়ে, ইনসুলিন সেন্সিটিভিটি কমে যায় এবং ভবিষ্যতে মেটাবলিক রোগের সম্ভাবনাও বেড়ে ওঠে।

ফলে দেখা যায়, স্বাদে তৃপ্তি দিলেও চাটনি-সহ মোমোর নিয়মিত উপস্থিতি খাদ্যতালিকাকে অনেকে অজান্তেই অসুস্থতার দিকে ঠেলে দেয়।

যাদের খাবারে অ্যালার্জির প্রবণতা রয়েছে, তাদের মোমো নিয়মিত খাওয়ার আগে বিশেষ সতর্ক থাকা উচিত। মোমোতে থাকা গ্লুটেন, চাটনিতে ব্যবহৃত সয়া সস কিংবা ফিলিং-এ থাকা প্রক্রিয়াজাত উপাদানগুলো কারো কারো শরীরে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। অনেকেই জানেন না, এই উপাদানগুলো হঠাৎ করেই ত্বকে ফুসকুড়ি, শ্বাসকষ্ট বা গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল অস্বস্তির মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

এখন নানা ধরনের এবং নানা স্বাদের মোমো সহজেই পাওয়া যায়। ভাজা বা সসে ভেজানো মোমোর তুলনায় সেদ্ধ বা স্টিমড মোমো নিঃসন্দেহে স্বাস্থ্যকর। এতে ক্যালোরি ও ক্ষতিকর উপাদান কম থাকে, ফলে শরীরের ওপর চাপও কম পড়ে।

তবে মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত কোনো খাবারই ভালো নয়। তাই পরিমিত পরিমাণে খেলে মোমো সহজেই একটি সুষম খাদ্যের অংশ হয়ে উঠতে পারে। নিয়মিত না খেয়ে মাঝে মাঝে উপভোগ করলে স্বাস্থ্যঝুঁকিও অনেকটাই কমানো সম্ভব। পুষ্টিবিদদের মতে, সপ্তাহে এক বা দুইবার স্টিমড মোমো খাওয়া যেতে পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *