প্রচুর পরিমাণ চাল ও গম আমদানি করছে সরকার

দেশের খাদ্য নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে সরকার প্রচুর পরিমাণ চাল ও গম আমদানি করছে। এর মধ্যে আমেরিকা থেকে গম ছাড়াও ভারত এবং মিয়ানমার থেকে চাল আমদানির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে দেশে চাল ও গম মিলে প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন চাল ও গম দেশে পৌঁছাবে। দেশে গতকাল চাল ও গম মিলে প্রায় ১৩ লাখ টন খাদ্যশস্য মজুদ রয়েছে।

সূত্রে জানা যায়, দেশের খাদ্য মজুদ পরিস্থিতি সন্তোষজনক হলেও সরকার সামনের দিনগুলোর কথা চিন্তা করে বিপুল পরিমাণ চাল ও গম আমদানি করছে। এর মধ্যে আমেরিকা থেকে ২ লাখ ৪২ হাজার টন গম নিয়ে আসা চারটি জাহাজের সর্বশেষ জাহাজটির গম মোংলায় খালাস করা হচ্ছে। প্রথম চালানের চারটি জাহাজের গম ঠিকভাবে গ্রহণ করার পর আগামী ১৯ ডিসেম্বর দ্বিতীয় চালানের প্রথম জাহাজটি ৫২ হাজার ৫শ টন গম নিয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছাবে। দ্বিতীয় চালানেও তিনটি পৃথক জাহাজে ২ লাখ ৪২ হাজার টন গম দেশে আসবে।

আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কিছুটা বাড়তি দামে আমেরিকা থেকে এসব গম আমদানি করা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্কনীতির চাপে পড়ে বাংলাদেশকে আগামী ৫ বছর এভাবে গম আমদানি করতে হবে। প্রতি বছর আমেরিকা থেকে ৭ লাখ টন গম আনা হবে বলে খাদ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান। তারা বলেন, বাজারদর কিছুটা বেশি হলেও গমের মান ভালো। তাছাড়া দূরত্বের কারণে জাহাজ ভাড়া কিছুটা বাড়তি হওয়ায় খরচ বাড়ছে।

তবে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের স্বার্থে এর কোনো বিকল্প নেই বলে সূত্রটি মন্তব্য করেছে। দেশে গমের মজুদ কমে এসেছে। গতকাল দেশের খাদ্য গুদামগুলোতে মাত্র ১ লাখ ৩৬ হাজার ৫১৬ টন এবং জাহাজে খালাসের অপেক্ষায় ৪৫ হাজার ৫৩০ টন গম রয়েছে। আমেরিকা থেকে আসা দ্বিতীয় চালানের গম খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে বলে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান।

অপরদিকে দেশে চালের সন্তোষজনক মজুদ রয়েছে। গতকাল দেশের খাদ্য গুদামগুলোতে ১১ লাখ ২ হাজার ২৭৬ টন চাল মজুদের তথ্য জানিয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, এর বাইরে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছে ২ হাজার ৭১৬ টন চাল। ভারত থেকে ৬ হাজার টন চাল নিয়ে আসা একটি জাহাজে এই চাল রয়েছে। যেগুলো মোংলা বন্দরে খালাস হচ্ছে। কৃষকদের ঘরে নতুন ধান উঠেছে। ঘরে ঘরে রয়েছে প্রচুর ধান ও চাল। তবুও সরকার খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ৩ লাখ টন চাল আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এ চাল ভারত থেকে আসবে জানিয়ে সূত্র বলেছে, এর মধ্যে একটি জাহাজে ৬ হাজার টন চাল দেশে এসে পৌঁছেছে। বাকি চালগুলোও ছোট ছোট জাহাজে দেশে পৌঁছাবে। এর বাইরে মিয়ানমার থেকে ৫০ হাজার টন চাল আমদানি করছে সরকার। ভিয়েতনাম থেকেও ৫০ হাজার টন চাল কেনার প্রক্রিয়া চলছে। তবে ভিয়েতনামের চালের দাম কিছুটা বাড়তি হওয়ায় শেষ পর্যন্ত ওই ৫০ হাজার টন চালও মিয়ানমার থেকে আনা হতে পারে বলে সূত্র আভাস দিয়েছে।

উপরোক্ত প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টন চাল ও গমের চালান আগামী মাস দুয়েকের মধ্যে দেশে পৌঁছাবে উল্লেখ করে সূত্র বলেছে, পরবর্তীতে আরো গম ও চাল আমদানির প্রক্রিয়া সরকার গ্রহণ করেছে।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা গতকাল আজাদীকে বলেন, দেশে খাদ্যের অভাব নেই। সংকটের তো প্রশ্নই ওঠে না। তবুও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারিভাবে এসব চাল ও গম আমদানি করা হচ্ছে। গতকাল দেশে মোট ১২ লাখ ৮৭ হাজার ৬৮ টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল। মজুদের এই পরিমাণকে সন্তোষজনক উল্লেখ করে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, শুধুমাত্র খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টি সুনিশ্চিত করতে চাল ও গম আমদানি করা হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *