দেশে নিকোটিন পাউচ উৎপাদন কারখানা স্থাপনের জন্য বহুজাতিক তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিসকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো এর বিরোধিতা করছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সরকারকে চিঠি দিয়ে এ ধরনের কারখানা স্থাপনের অনুমতি না দেওয়ার অনুরোধ করেছে। উচ্চ আদালতেও গড়িয়েছে বিষয়টি।
এ অবস্থায় বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) বলছে, সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে ইতিবাচক সাড়া না পেলে অনুমোদন বাতিল করার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন তারা।
ফিলিপ মরিস বাংলাদেশ এই প্রকল্পে প্রাথমিকভাবে ৫৮ দশমিক দুই লাখ ডলার বিনিয়োগ করার কথা রয়েছে। বছরে কারখানাটির উৎপাদন সক্ষমতা হবে পাঁচ হাজার ৩৬৩ লাখ ইউনিট। গত ২৭ এপ্রিল তাদের কারখানা স্থাপনের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) নিকোটিন পাউচের বিষয়ে সতর্কতা জারি করেছে। ইতোমধ্যে নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, রাশিয়া, ফ্রান্সসহ ৩৪টি দেশ পণ্যটিকে নিষিদ্ধ করেছে বলে তথ্য দিয়েছে তামাকবিরোধী সংগঠনগুলোর নেতারা।
বেজা বলছে, দেশে নিকোটিন পাউচ উৎপাদন বা রপ্তানিতে সুনির্দিষ্ট নিষেধাজ্ঞা নেই। এটি প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় কম ক্ষতিকর। এসব বিবেচনা করে বিদেশি বিনিয়োগ আনতে নিকোটিন পাউচ উৎপাদনের অনুমতি দেওয়া হয়।
নিকোটিন পাউচ কী
নিকোটিন পাউচ গুলের মতো মুখের ভেতরে রেখে ব্যবহার করা হয়। মুখের ভেতর থেকে ধীরে ধীরে এর মধ্যে থাকা নিকোটিন রক্তে প্রবেশ করে। গুল গুঁড়া হলেও নিকোটিন পাউচ গামের মতো। এটি অন্য তামাকপণ্যের মতো আসক্তি তৈরি করে।
অনুমোদন বাতিলের দাবি
দেশের তামাকবিরোধী সংগঠন বাংলাদেশ অ্যান্টি টোব্যাকো অ্যালায়েন্স ও বাংলাদেশ টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যাডভোকেটস (বিটিসিএ) ও প্রজ্ঞাসহ কয়েকটি সংগঠন এই পণ্য উৎপাদনের বিরোধিতা করছে। সংগঠনগুলোর নেতারা বলছেন, নিকোটিন পাউচ মূলত শরীরে নিকোটিন সরবরাহের একটি মাধ্যম। এটি ইলেকট্রনিক যন্ত্র না হলেও ই-সিগারেট শ্রেণিভুক্ত একটি নিকোটিন পণ্য। এটি আসক্তি তৈরি করে এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
২০১৬ সালের ১ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দেশে নতুন কোনো তামাক কোম্পানি বা কারখানার অনুমোদন দেওয়া যাবে না। তাই তামাকবিরোধী সংগঠনগুলো বেজার সিদ্ধান্তকে আদালত অবমাননা বলছে।
হাইকোর্টের রুল, বৃহস্পতিবারের মধ্যে জবাব
গত ১৬ নভেম্বর বেজাসহ সংশ্লিষ্ট আটটি প্রতিষ্ঠানকে পাবলিক হেলথ ল ইয়ার্স নেটওয়ার্ক (পিএইচএলএন), আর্থ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন ও প্রত্যাশা অ্যান্টি-ড্রাগ ক্লাবের পক্ষ থেকে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। নোটিশে এই অনুমোদনকে সংবিধানবিরোধী, বেআইনি ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনার লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করা হয়।
১৭ নভেম্বর এ বিষয়ে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়। নিকোটিন পাউচ তৈরির কারখানা স্থাপনের অনুমতি কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। ১০ দিনের মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ-বেজা, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ফিলিপ মরিসকে জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সরকার না চাইলে অনুমোদন বাতিল
জানতে চাইলে বেজার নির্বাহী সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) মো. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, নিকোটিন সারাবিশ্বে বৈধ ব্যবসা। বেজার দৃষ্টিতে এ ব্যবসা অপরাধ নয়। দেশে বিনিয়োগ দরকার। সেই চিন্তা থেকে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে।
নজরুল ইসলাম জানান, হাইকোর্টের রুলের জবাব দিতে বেজা প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে সরকার যদি এ ধরনের বিনিয়োগ না চায়, তাহলে অনুমোদনটি বাতিল করার জন্যও বেজা প্রস্তুত আছে।