বিশ্বের সর্বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত ভারতের ১২টি রাজ্য ও অঞ্চলে মঙ্গলবার থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ। তিন মাসব্যাপী ভোটার রেজিস্ট্রেশন সংশোধনের অভিযানের নাম স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা এসআইআর। চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ২০২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এরই মধ্যে নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ড এবং এ প্রক্রিয়ার বিস্তৃতি নিয়ে কর্মীরা সতর্ক করেছেন যে, এটি লাখ লাখ নাগরিকের ভোটাধিকার হরণের কারণও হতে পারে।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে, যে ১২ রাজ্য ও অঞ্চলে এসআইআর শুরু হয়েছে, এর মধ্যে কয়েকটিতে আগামী বছর স্থানীয় নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। ভারতের নির্বাচন কমিশনের প্রধান জ্ঞানেশ কুমার এই অভিযানের ঘোষণা করার সময় সাংবাদিকদের বলেন, এসআইআরে যুক্ত কর্মকর্তারা ভোটারকে গণনার ফরম পূরণ করতে, তা সংগ্রহ করতে এবং জমা দিতে সাহায্য করবেন।
এএফপিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি বছরের শুরুতে, ভারতের নির্বাচন কমিশন (ইসিআই) বিহার আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে একই রকম ভোটার তালিকা সংশোধন অভিযান চালিয়েছিল। দেখা যায়, এই প্রক্রিয়ার ফলে প্রায় ৬৫ লাখ ভোটারের নাম বাদ পড়ে। বিদেশি বা অবৈধ অভিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করে এই ভোটারদের বাদ দেওয়া হয়। ফলে অন্যান্য রাজ্যেও যে এসআইআরে একই ফল ঘটবে না, তা বলা যাচ্ছে না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছেন, বাংলাদেশ থেকে আসা নথিবিহীন মুসলিম অভিবাসীরা নানা কৌশলে ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হচ্ছে। ফলে গোটা দেশের ভোটার তালিকায় জরুরি সংশোধন প্রয়োজন। তবে সমালোচকদের যুক্তি, এসআইআরে কঠোর নথিভুক্তির প্রয়োজনীয়তা থাকার কারণে বিপুল সংখ্যক ভারতীয় নাগরিক ভুলবশত তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন। কারণ এমনও দেখা গেছে, অনেক জীবিত ভোটারকে নতুন এসআইআরে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আবার খসড়া তালিকা থেকে হয়তো বাদ দেওয়া হয়েছে পুরো পরিবারকে।
সর্বশেষ এসআইআর অভিযানে ভারতের সর্বাধিক জনবহুল রাজ্য উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু ও কেরালার নাম রয়েছে। সেখানে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা সংশোধন অভিযানের কারণে লাখ লাখ মানুষ তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারেন–এমন আশঙ্কায় বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন এবং রাজনৈতিক দল এর বিরুদ্ধে আদালতে আইনি চ্যালেঞ্জ করেছে। গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টে এসআইআর নিয়ে তাদের আপত্তি জানিয়েছে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের দল। স্ট্যালিন এসআইআর প্রক্রিয়াকে আসল ভোটারদের নাম বাদ দিতে বিজেপি ও তার জোটের নিছক একটি কৌশল বলে আখ্যায়িত করেছেন।