কুট্টুস ছিল একটা কল্পনাপ্রিয় মেয়ে। সে বই পড়তে খুব ভালোবাসত–বিশেষ করে মহাকাশ আর গ্রহ–নক্ষত্র নিয়ে।
রাত হলেই সে ছাদে উঠে যেত, আকাশের তারা গুনত, আর সবচেয়ে বেশি তাকিয়ে থাকত চাঁদ মামার দিকে।
– “চাঁদ মামা,” সে প্রায়ই বলত, “তোমার বাড়ি কেমন? সেখানে কি আইসক্রিম পাওয়া যায়? খেলতে পারি? একবার যদি আসতে পারতাম…”
এক রাতে, কুট্টুস ঘুমিয়ে ছিল। হঠাৎ একটা নরম আলোয় ঘরটা ভরে গেল। চোখ খুলে দেখে– জানালার পাশে দাঁড়িয়ে আছে এক রূপালী রকেট!
রকেটের দরজা খুলে ভেতর থেকে বের হল এক চাঁদপরী, তার হাতে ছিল এক চকচকে জাদুর লাঠি।
চাঁদপরী মিষ্টি করে বলল,
– “ কুট্টুস, আজ তোমার ইচ্ছেপূরণ হবে। চলো, চাঁদে বেড়াতে যাই!”
কুট্টুস চোখ কচলে বলল,
– “আমি কি স্বপ্ন দেখছি?”
চাঁদপরী হাসল,
– “স্বপ্ন নয়, এটা জাদু!”
কুট্টুস রকেটে চড়ে বসল। রকেট উড়ল বিশাল শব্দ করে, ফু–উ–উশ!
মহাকাশে উঠেই কুট্টুস জানালা দিয়ে দেখতে পেল তারা, ধূমকেতু, আর রঙিন গ্যাসের মেঘ! এমন দৃশ্য সে আগে কখনও দেখেনি।
কিছুক্ষণ পর রকেট নামল চাঁদের মাটিতে।
মাটি নরম ধুলোর মতো, পা দিলেই ধোঁয়ার মতো ধুলো উড়ে যায়।
কুট্টুস তাকিয়ে দেখে –
চারপাশে ছোট ছোট চাঁদবাড়ি, গোলাকার জানালা, রূপালী গাছ, আর বাচ্চা চাঁদবাসীরা খেলা করছে।
তারা কেউ টেলিস্কোপ দিয়ে পৃথিবী দেখছে, কেউ আবার হালকা মাধ্যাকর্ষণে লাফাচ্ছে – এক লাফে দশ ফুট ওপরে!
একটা ছোট্ট এলিয়েন এসে তাকে আইসক্রিম দিল – সেটা ছিল চাঁদ–মাটির স্বাদে তৈরি জাদুর আইসক্রিম!
কুট্টুস খেয়ে বলল, “এটা পৃথিবীর আইসক্রিমের থেকেও মজাদার!”
তারপর সে গেল চাঁদের স্কুলে। সেখানে শেখানো হয়–
তারা চিনতে শেখা
গ্রহের নাম মনে রাখা
আর সবচেয়ে মজার ক্লাস – “নিঃশব্দে কথা বলা” (কারণ চাঁদে শব্দ ছড়ায় না!)
ক্লাস শেষে কুট্টুস এক চাঁদবন্ধুকে জিজ্ঞেস করল,
– “তোমরা তো দারুণ! ঝগড়া করো না?”
চাঁদবন্ধু বলল,
– “না, এখানে আমরা সবাই মিলে সব করি–ভাগ করে খেলি, কাজ করি একসঙ্গে, আর প্রকৃতির যত্ন নিই। এটাই আমাদের নিয়ম।”
দিন শেষে কুট্টুস বলল,
– “আমিও এমন একটা পৃথিবী বানাতে চাই যেখানে সবাই একে অপরকে সাহায্য করে।”
চাঁদপরী এসে বলল,
– “তোমার মতো মেয়ে পৃথিবীকে বদলাতে পারে। এখন ঘুমোতে হবে, সময় ফুরিয়ে এসেছে।”
কুট্টুস চোখ বন্ধ করল…
চোখ খুলে দেখে– সে নিজের বিছানায়। কিন্তু অবাক হয়ে দেখল, বালিশের নিচে আছে এক রূপালী পাথর আর এক ছোট চিঠি:
“তুমি ছিলে চাঁদের শ্রেষ্ঠ অতিথি। প্রকৃতিকে ভালোবাসো, বন্ধুদের সাহায্য করো, পৃথিবীকে সুন্দর রাখো–এটাই আমাদের শিক্ষা। আবার দেখা হবে!”