রিজিক বা জীবিকার সংস্থান আল্লাহতায়ালার এক অমূল্য নেয়ামত। হালাল রিজিক শুধু জীবনের চাহিদা পূরণেই সহায়তা করে না, বরং ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম শর্তও বটে। তাই মুসলমানদের জীবনজুড়ে হালাল উপার্জনের গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায়, পরিশ্রম করার পরও আয়ে বরকত থাকে না— যেন রিজিক ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে।
আসলে রিজিক কমে যাওয়ার কিছু কারণ কোরআন ও হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। কোরআনে আল্লাহতায়ালা বলেন,
“তোমার রব যাকে ইচ্ছা রিজিক দেন প্রশস্তভাবে, আবার যাকে ইচ্ছা দেন সীমিত করে। কিন্তু অনেক মানুষই এটা বুঝে না।” (সুরা সাবা : ৩৬)
চলুন দেখে নেওয়া যাক সেই চারটি কাজ, যা আপনার রিজিক কমিয়ে দিতে পারে—
১. হারাম উপার্জন
রিজিক কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো হারাম উপার্জন। আল্লাহ বলেন, “হে মানবজাতি, তোমরা পৃথিবী থেকে হালাল ও পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো।” (সুরা বাকারা : ১৬৮)
যে ব্যক্তি এই নির্দেশ অমান্য করে অবৈধ পথে আয় করে, তার উপার্জনে বরকত চলে যায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি হালাল ও বৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন করে, তাকে বরকত দান করা হয়।” (মুসলিম : ১০৫২)
২. সুদের কারবারে জড়িত থাকা
সুদ এমন একটি পাপ যা শুধু ব্যক্তিগত নয়, সামাজিকভাবেও বরকত নষ্ট করে দেয়। কোরআনে আল্লাহ স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেছেন, “আল্লাহ সুদকে ধ্বংস করে দেন এবং সাদাকাকে বর্ধিত করে দেন।” (সুরা বাকারা : ২৭৬)
সুদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকলে জীবিকা থেকে বরকত উঠে যায়।
৩. প্রতারণা ও মিথ্যা কসম
ব্যবসা বা লেনদেনে প্রতারণা ও মিথ্যা কসম রিজিকের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। নবীজি (সা.) সতর্ক করে বলেছেন, “বেচাকেনা করার সময় তোমরা অধিক কসম করা থেকে সাবধান থেকো। কারণ, মিথ্যা কসমের দ্বারা বিক্রি বেশি হয়, কিন্তু বরকত ধ্বংস হয়ে যায়।” (মুসলিম : ১৬০৭)
৪. অকৃতজ্ঞতা
আল্লাহর দেওয়া নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হলে সেই নিয়ামত কেড়ে নেওয়া হয়। এতে জীবনের বরকতও হারিয়ে যায়। কোরআনে বলা হয়েছে, “আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে মনে রেখো, আমার শাস্তি বড়ই কঠোর।” (সুরা ইবরাহিম : ৭)
ইসলামি পণ্ডিতদের মতে, এসবের পাশাপাশি আরও অনেক কারণ রয়েছে যা রিজিকে প্রভাবিত করে। তবে মূল শিক্ষা হলো— হালাল পথে উপার্জন, সততা, কৃতজ্ঞতা এবং সুদের মতো পাপ থেকে দূরে থাকা। এগুলোই রিজিকের বরকত ধরে রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।