লড়াই নয়, চীনের সঙ্গে ‘ভালো চুক্তি’ চান ট্রাম্প

চীন ও যুক্তরাষ্ট্র পরস্পরের সঙ্গে লড়াই করা মোটেও ভালো বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি জানান, দুই দেশের স্বার্থেই একটি ‘ভালো চুক্তি’ করতে চান তিনি, যা পারস্পরিক সমঝোতা ও স্থিতিশীলতার নতুন দিগন্ত খুলে দেবে। 

বিবিসি জানায়, গতকাল বুধবার দক্ষিণ কোরিয়া সফররত ট্রাম্প এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে, আমরা একটা চুক্তিতে পৌঁছাতে যাচ্ছি, যা দুই পক্ষের জন্যই ভালো হবে। এটা লড়াই করার চেয়ে অনেক বেশি যুক্তিসংগত এবং বিশ্ব আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা এমন কিছু পেতে যাচ্ছি, যা সবার জন্যই রোমাঞ্চকর হবে।’

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে তাঁর বহুল প্রত্যাশিত বৈঠকটি আজ বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কোরিয়ার বন্দরনগরী বুসানে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে রয়টার্স। বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে গতকাল প্রথমবারের মতো এই বৈঠকের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়। জানা গেছে, শি জিনপিং এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন (এপেক) সম্মেলনে অংশ নিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় পৌঁছানোর পর আজ ট্রাম্পের সঙ্গে মুখোমুখি হবেন।

বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির দেশের প্রধান দুই নেতার এই বৈঠককে ঘিরে আন্তর্জাতিক বাজারে আশাবাদ দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সমঝোতা বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থায় স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে পারে। দুই দেশের মধ্যে শুল্কনীতি, উচ্চ প্রযুক্তির চিপ, ফেন্টানিল পাচার, সয়াবিন বাণিজ্য ও বিরল ধাতুর রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধ রয়েছে। আলোচনার আগে সদ্ভাব প্রদর্শনের অংশ হিসেবে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কোফকো যুক্তরাষ্ট্র থেকে নতুন সয়াবিন আমদানি করেছে, যা সম্ভাব্য বাণিজ্যের ‘শুভ সূচনা’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এদিকে ট্রাম্প আবারও দাবি করেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করেছিলেন তিনিই। তাঁর ভাষায়, ‘দুটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ফোন করে বলেছিলাম, যুদ্ধ বন্ধ করুন, নয়তো আমরা কোনো বাণিজ্য চুক্তি করব না।’ তাঁর দাবি, ওই কথোপকথনের দুই দিন পরই যুদ্ধ থেমে যায়। তবে নয়াদিল্লি এই দাবি অস্বীকার করে বলেছে, যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ এসেছিল ইসলামাবাদ থেকেই।

এদিন যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বাণিজ্য চুক্তি শিগগিরই হয়ে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। রাশিয়া থেকে তেল আমদানি এবং যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ শুল্ক নিয়ে মতবিরোধের কারণে এই আলোচনা স্থবির ছিল। তবে ভারত রাশিয়া থেকে তেল আমদানি কমাতে রাজি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রও ভারতের ৫০ শতাংশ শুল্ক কমানোর বিষয়ে ইতিবাচক হয়েছে। এই সমঝোতা কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের ভুট্টা ও সয়াবিন ভারতের বাজারে প্রবেশাধিকার পেতে পারে।

দক্ষিণ কোরিয়া সফরে ট্রাম্পকে দেশটির সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘গ্র্যান্ড অর্ডার অব মুগুংহোয়া’ প্রদান করা হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ং তাঁকে এই পুরস্কার দেন। পুরস্কার হাতে নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এটা সত্যিই সুন্দর, আমি এখনই এটা পরতে পারি।’ 

অন্যদিকে, ট্রাম্পের দক্ষিণ কোরিয়া সফরের ঠিক আগমুহূর্তে একাধিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে উত্তর কোরিয়া। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম কেসিএনএ জানায়, সাগর থেকে নিক্ষেপ করা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নির্ধারিত লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে আঘাত হেনেছে। 

উত্তর কোরিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা পাক জং চোন বলেছেন, ‘এই পরীক্ষা আমাদের নিউক্লিয়ার বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার প্রস্তুতি।’ দক্ষিণ কোরিয়ার জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমন্বিতভাবে ক্ষেপণাস্ত্রের তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং যে কোনো উস্কানির জবাবে প্রস্তুত রয়েছে দুই দেশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *