বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে, দলের পক্ষ থেকে গুমের শিকার ৭টি পরিবারের স্বাবলম্বিতা নিশ্চিত করতে একটি নতুন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বংশালে উদ্বোধন করা হলো ‘ফ্যাশন পার্ক’ নামে একটি অনলাইন শপ ও শোরুম, যা গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা পরিচালনা করবেন।
শোরুমটি রাজধানীর বংশাল নতুন চৌরাস্তা ২২৮/২২৯, নর্থ সাউথ রোড, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরণিতে (বিএনপি ক্লাবের বিপরীত পাশে) অবস্থিত। এর উদ্বোধন করেন গুমের শিকার সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী এবং যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হুম্মাম কাদের চৌধুরী বলেন, “গুম হওয়া পরিবারের সদস্যদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা আমার কাছে নেই, তবে তারা দেশের প্রকৃত হিরো। তাদের বিচারের মাধ্যমে সঠিক তদন্ত হতে হবে, ইনশাআল্লাহ।”
ইসহাক সরকার বলেন, “আমাদের সহকর্মীরা ১২-১৩ বছর ধরে গুমের শিকার। আজও তাদের কোনো খোঁজ মেলেনি। তারেক রহমানের নির্দেশে এই শোরুম খুলে দেওয়া হয়েছে, যাতে তাদের পরিবার অন্তত ন্যূনতমভাবে চলতে পারে। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই— এখানে কেনাকাটা করুন, এতে তাদের পরিবারগুলি টিকে থাকতে পারবে।” তিনি আরও বলেন, “আগামী নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে, তখন যারা গুমের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে। শেখ হাসিনাকে বিচারবিভাগীয় তদন্তের আওতায় আনা হবে।”
এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো বংশাল ও সূত্রাপুর থানার গুমে শিকার পরিবারগুলোকে স্বাবলম্বী করা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত পরিবারগুলির সদস্যরা তাদের হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন এবং একটাই দাবি জানান— “আমরা বিচার চাই।”
গুম হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছে:
- মো. পারভেজ হোসেন: ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর শাহবাগ থেকে গুম হন। তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার বলেন, “প্রতিদিন তার জন্য অপেক্ষা করি, কিন্তু কোনো খবর নেই। আমরা ন্যায়বিচার চাই।”
- সেলিম রেজা পিন্টু: ২০১৩ সালের ১১ ডিসেম্বর গুম হন। তার বড় ভাই ইসলাম রেজা বলেন, “এত বছর হয়ে গেলেও ভাইয়ের কোনো খবর নেই। আমরা শুধু চাই, সত্য প্রকাশ হোক এবং বিচার হোক।”
- মো. মাহফুজুর রহমান সোহেল: একই দিনে গুম হন। তার মেয়ে শাফা বলেন, “আমার বন্ধুর বাবা-মা আছে, কিন্তু আমার বাবা নেই। আমরা শুধুমাত্র চাই, বাবাকে ফিরে পেতে।”
- মো. চঞ্চল কাজী: ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর গুম হন। তার স্ত্রী রেশমা আক্তার বলেন, “প্রতিদিন ভয়ে এবং শোকে দিন কাটছে। আমরা বিচার চাই, যেন আমাদের স্বামীরা অজানার অন্ধকারে হারিয়ে না যান।”
- হাবিবুল বাসার জহির: সাদা পোশাকধারীদের হাতে গুম হন। পরিবারের সদস্যরা বলেন, “চারজনকে তুলে নেওয়ার পর থেকে কোনো খোঁজ নেই। আমরা শুধু অপেক্ষা করি, কিন্তু ফিরে আসেনি কেউ। আমরা বিচার চাই।”
- মো. সম্রাট মোল্লা: ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর গুম হন। পরিবারের সদস্যরা বলেন, “আজও তার কোনো খোঁজ নেই। আমরা বিচার চাই, যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো পরিবার এই যন্ত্রণা না পায়।”
- খালেদ হাসান সোহেল: ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর চকবাজার থেকে গুম হন। তার পরিবারের সদস্যরা বলেন, “যেদিন থেকে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেদিন থেকেই ঘরে শুধু কান্না। আমরা বিচার চাই, সত্য প্রকাশ হোক।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বংশাল থানা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. রাশেদ, বংশাল থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান দিপু, যুবদল নেতা মো. পারভেজসহ বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।