জুলাই আন্দোলন দমন করতে মারণাস্ত্রের ব্যবহার, হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো এবং ব্লক রেইডের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় রাজনৈতিকভাবে। এ নির্দেশনা এসেছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে, এবং এ ব্যাপারে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান হাবিব এবং ডিবির হারুন ছিলেন বিশেষভাবে অতি উৎসাহী। ১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ৩৬ দিনে ১ হাজার ৪শরও বেশি ছাত্র-জনতাকে হত্যা করা হয়। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ আহত হয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, এবং তাদের অধিকাংশই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে হতাহত হন।
এ হত্যাকাণ্ডগুলোর জন্য তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সরাসরি নির্দেশনা ছিল। এই গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান এবং অন্যান্যদের বিরুদ্ধে ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার ৫৩ জন সাক্ষীর জবানবন্দিতে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তার সাক্ষ্যের মাধ্যমে আজ (রোববার) সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর যুক্তিতর্ক এবং আর্গুমেন্ট শুনানি হবে, এবং ট্রাইব্যুনাল রায়ের তারিখ নির্ধারণ করবে।
সাক্ষীরা তাদের জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, শেখ হাসিনার নির্দেশে তার সহযোগীরা হত্যার উসকানি, প্ররোচনা ও নির্দেশ দিয়ে মাঠ পর্যায়ে তা বাস্তবায়ন করেছেন। তারা বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি’ এবং ‘জয়েন্ট ক্রিমিনাল এন্টারপ্রাইজ’ (গ্যাং) সহ ৫টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এই মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অপরাধের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেছেন, “শেখ হাসিনাসহ অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে ৫৩ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। আমরা মনে করি, আমাদের প্রমাণিত অভিযোগগুলো সঠিক, এবং আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। আমরা তাদের শাস্তি দাবি করছি।”
সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুন তার জবানবন্দিতে জানান, র্যাব-১ এ গোপন বন্দিশালা ছিল, যেখানে রাজনৈতিক ভিন্নমতাবলম্বী ও সরকারের জন্য হুমকি হিসেবে চিহ্নিত ব্যক্তিদের আটক করা হত। তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে কখনো তারেক সিদ্দিকী নির্দেশনা দিতেন, এবং আন্দোলন দমন করতে হত্যাকাণ্ডসহ একাধিক সহিংস কার্যক্রম পরিচালনা করা হত।
এদিকে, ৩ আগস্ট থেকে শুরু হওয়া সাক্ষ্যগ্রহণে ৫৩ জন সাক্ষী জবানবন্দি দিয়েছেন, যারা এই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। এর মধ্যে রয়েছেন খোকন চন্দ্র বর্মণ, পারভীন আক্তার, ডা. মাহফুজুর রহমান, মো. এনাব নাজেজ জাকি, ডা. হাসানুল বান্না, ডা. রাজিবুল ইসলাম, সোনিয়া জামালসহ আরও অনেকে।
এ মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ কয়েকজন আসামি পলাতক রয়েছেন, তবে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন অপরাধের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়েছেন।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-১ এ এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।