ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় জুটি ছিলেন সালমান শাহ ও শাবনূর। ‘তুমি আমার’, ‘সুজন সখী’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘তোমাকে চাই’, ‘আনন্দ অশ্রু’—এর মতো ১৪টি জনপ্রিয় চলচ্চিত্রে অভিনয় করে আজও তাঁরা দর্শকদের হৃদয়ে অমর হয়ে আছেন। এত বছর পরও এই জুটির দর্শকপ্রিয়তা অমলিন।
তবে সালমান শাহর অকাল মৃত্যুর পর তাঁর মরদেহ শেষবারের মতো দেখতে যাননি শাবনূর। এ নিয়ে নানা সময়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং বিভিন্ন মহলে জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে। অবশেষে সেই প্রশ্নের উত্তর স্পষ্ট করলেন অভিনেত্রী ডলি জহুর।
সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে ডলি জহুর সেদিনের ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি জানান, সালমান শাহর মৃত্যুর দিন তিনি শাবনূরের বাসায় ছিলেন। শাবনূরের বাড়ির টেলিফোনে আসা একটি ফোনকলের মাধ্যমেই তিনি জানতে পারেন সালমান শাহ মারা গেছেন।
ডলি জহুর বলেন, তাঁরা একসঙ্গে শুটিং করার সময় ব্যবহৃত মেকআপের কারণে তাঁর নিজের এবং শাবনূরের ত্বকে অ্যালার্জি হয়েছিল। শাবনূরের অ্যালার্জি বেশি হওয়ায় তিনি সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসা করিয়ে দুই-তিন দিন আগে ফিরেছিলেন। তাঁর প্রেসক্রিপশন দেখতেই ডলি জহুর সেদিন শুক্রবার সকালে গ্রিন রোড থেকে রিকশায় শাবনূরের বাসায় গিয়েছিলেন।
বাসায় থাকাকালীন একটি ফোন আসে। শাবনূর তাঁকে ফোনটি ধরতে বলেন। ডলি জহুর বলেন, “একটা ছেলে ফোন দিলো, জিজ্ঞেস করলো, ‘কে ভাবি নাকি?’ ফোন দিয়েছিলেন মণ্ডল নামে একজন পরিচালক। তিনি আমার কণ্ঠ শুনেই চিনে ফেললেন। মণ্ডল বললেন, ‘ভাবি আপনি জানেন, সালমানকে হলি ফ্যামিলিতে নিয়ে আসছে, ও অ্যাকসিডেন্ট করেছে। আমি এখনই পরিচালক সমিতি যাচ্ছি খোঁজ নিতে।’ আমি অবাক হয়ে তাঁকে এক্ষুণি বিস্তারিত জানাতে বলি।”
ডলি জহুর বলেন, শাবনূর পাশ থেকে শুনে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, সালমান অ্যাকসিডেন্ট করেছেন। শাবনূর তা বিশ্বাস করতে চাননি। এরপর মণ্ডল নয়, ফোন করেন দিলু ভাই (পরিচালক দিলু)। ডলি জহুর নিজের পরিচয় দিলে দিলু ভাই বলেন, “খবর বেশি ভালো না। হলি ফ্যামিলি রাখে নাই। ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাচ্ছি।”
এই খবর শুনে শাবনূর প্রচণ্ড নার্ভাস হয়ে ওঠেন এবং চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। ডলি জহুর জানান, তাঁর নিজেরও হাত কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছিল। শাবনূর বারবার বাইরে যেতে চাইছিলেন। ডলি জহুর তখন তাঁকে বকা দিয়ে চুপ থাকতে বলেন এবং খবরের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। এরপর শাহ আলম কিরণ ফোন দেন, আর তিনি ফোন রাখার পরই অন্য কেউ ফোন করে সালমানের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেন।
ডলি জহুর সেই মুহূর্তের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, “তারপরই শাবনূরের চিল্লানি শুরু হলো। ওর চিৎকার কান্নাতে আমি না অথর্ব হয়ে গেছি।”
শাবনূর যখন পাগলামি শুরু করেন এবং বাসা থেকে বের হতে চান, তখন তাঁর মা বাসায় ছিলেন না। ডলি জহুর বলেন, তিনি কীভাবে বের হবেন বুঝতে পারছিলেন না। ঠিক সেই সময় নির্মাতা এহতেশাম দাদু ফোন দিয়ে ডলি জহুরকে নির্দেশ দেন: “নূপুরকে (শাবনূরের ডাকনাম) বাসা থেকে বের হতে দিও না। ওর মা মনে হয় বাসায় নেই। তুমি ওকে আটকে রাখো।” ডলি জহুর জানান, সেদিন তিনি সারাদিন, রাত ১২টা পর্যন্ত শাবনূরের বাসায় ছিলেন।
প্রয়াত অভিনেতা ও পরিচালক জহিরুল হকের পরিচালনায় ‘তুমি আমার’ সিনেমার মাধ্যমে সালমান শাহ ও শাবনূর প্রথম জুটি বেঁধেছিলেন। মাত্র চার বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে সালমান শাহ মোট ২৭টি ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রে অভিনয় করে গেছেন।