বনলতা সেন’ নামে নতুন একটি ছবি বানিয়েছেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। ছবিটির একটি অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন ‘আয়নাবাজি’ ও ‘তুফান’ সিনেমায় অভিনয় করে আলোচনায় আসা মাসুমা রহমান নাবিলা। এর আগে এই পরিচালক ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ নামে একটি ছবি বানিয়েছেন। এবারের ঈদে তিনি ‘চুপকথা’ শিরোনামের একটি নাটক বানিয়ে কয়েক বছর পর আবার নাটক নির্মাণে ফিরেছেন। আজ শনিবার নিজের ফেসবুক পোস্টে বর্তমান সময়ের বিনোদন অঙ্গন নিয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছেন নির্মাতা। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘বনলতা সেন’ বানিয়ে মহা অপরাধ করে ফেলেছেন! তিনি এ–ও লিখেছেন, ‘মূর্খের হাতে টাকাপয়সা চলে গেছে, সময় একেবারেই সুশিক্ষার অনুকূলে নেই।’
মাসুদ হাসান উজ্জ্বলের ‘চুপকথা’ নাটকে অভিনয় করেছেন তৌসিফ মাহবুব ও নাজনীন নিহা। নিজের পরিচালিত নাটক নিয়ে আট বছর পর নির্মাণে ফেরা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল জানালেন, ‘বনলতা সেন’ নির্মাণ শেষ করে বাক্স বন্দী করে রেখেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘সিনেমা বানানোর সময় থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত মনে হয়, এই সিনেমাটা বানিয়ে মহা অপরাধ করে ফেলেছি, যেমন জীবনানন্দ দাশ অপরাধ করেছিলেন কবিতা লিখে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় শিক্ষিত, রুচিশীল মানুষ অসম্ভব নিম্নমানের এই দেশে। কেবল দেশে নয়—সারা পৃথিবীতে।’
চলচ্চিত্রের ব্যবসা নির্ভর করে আমজনতার ওপর। আমজনতা যত বেশি প্রেক্ষাগৃহে আসবে, ততই সিনেমার ব্যবসা চাঙা হয়। আর তাদের কোনো চাহিদা থাকে না।মাসুদ হাসান তাঁর ফেসবুক পোস্টে বিষয়টি উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘সিনেমার ব্যবসা হয় আমজনতার ওপরে ভর করে। আমজনতার নিজস্ব কোনো চাহিদা সাধারণত থাকে না, চাহিদা তৈরি করা হয়। আজমনতা হলো কাদামাটির মতো, তার রুচি যেভাবে গড়বেন, সেভাবেই তৈরি হবে। আমজনতার চাহিদা তৈরি করেন, এসবের কলকাঠি যারা নাড়েন, তারা যেমন বড় বড় প্রযোজনাপ্রতিষ্ঠান, প্রভাবশালী পত্রপত্রিকা, নানা রকমের সিন্ডিকেট।’
ফেসবুক পোস্টের একপর্যায়ে পরিচালক মাসদু হাসান লিখেছেন, ‘বাজে রুচি বা বাজে চাহিদা পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য আগে নিজেকে যথেষ্ট রুচিহীন হতে হয়। আপনার সূক্ষ্ম রুচি এবং সূক্ষ্ম বোধ রয়েছে, অথচ আপনি অবলীলায় নিম্নরুচির কাজ করছেন, এটা কিন্তু কোনোভাবেই সম্ভব না। আপনার নিজের রুচি যথেষ্ট নিম্নমানের হওয়ার কারণেই সেটা আপনি করতে পারছেন।’
২০ বছর ধরে বিনোদন অঙ্গনে কাজ করছেন মাসুদ হাসান উজ্জ্বল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে পড়াশোনা শেষে পুরোদস্তুর নির্মাণে জড়িয়ে পড়েন। বানিয়েছেন নাটক, বিজ্ঞাপনচিত্র ও চলচ্চিত্র। ‘ওমকার’ নামে তাঁর একটি ব্যান্ডও আছে, তারও আগে ‘মেঘদল’ ব্যান্ডের হয়ে গান করতেন।
এই নির্মাতা লিখেছেন, ‘আমি জানি, আমার এসব লেখা পড়লে মনে হয়, “মানুষটা হতাশ না হয়ে নিজের কাজটা ঠিকমতো করলেই তো পারে।” হয়তো কবিতা লিখে জীবন পার করতে পারলে, সেটা সম্ভব হতো। সিনেমা বানাতে টাকা লাগে, সিনেমা মুক্তি দিয়ে সেই টাকা তুলে আনার বাস্তবতাও মাথায় রাখতে হয়। নিয়মিত শিল্প, সাহিত্য, দর্শন নিয়ে লেখালেখি করার কারণে, মানুষ পারলে আমার থেকে পালিয়ে বাঁচে। ফলে আমার এ যাত্রা নিতান্তই নিঃসঙ্গ এক যাত্রা। ব্যক্তিগত জীবনে মোটামুটি এলিয়েনের পর্যায়ে চলে গিয়েছি। সব থেকে মজার বিষয় হলো, প্রায় ২০ বছর মিডিয়াতে কাজ করার পরও এই জগতের দুই-চারজন ছাড়া কারও সাথে আমার বন্ধুত্ব নাই, নায়ক-নায়িকাদের সাথে তো একেবারেই নাই। শুটিং শেষ তো টাটা বাইবাই-খেলখতম, পয়সা হজম এমন আরকি। বলা যায়, আমাদের মগজে মগজে কমিউনিকেশন হয় না। বরং কোনো একটা কাজ করতে গেলেই মনে হয়, এটাকে মানসম্মত করতে চেয়ে মহা অপরাধ করে ফেলেছি!’
ফেসবুক পোস্টের শেষের দিকে মাসুদ হাসান লিখেছেন, তিনি হতাশ নন। তিনি এই লেখার মাধ্যমে বিনোদন অঙ্গনের পরিস্থিতির পর্যালোচনা করছেন।উজ্জ্বল লিখেছেন, ‘নিজেই নিজেকে বলি—তোর যখন এতই সমস্যা তুই ছেড়েছুড়ে চলে যাস না কেন ভাই? কারণ, আমি একেবারেই হতাশ নই, একে বলে পরিস্থিতির পর্যালোচনা, হতাশা চর্চা নয়। ধরেন চলচ্চিত্রের শেষ বিচার শুরু হয়েছে, বিচারক এসে জিজ্ঞেস করলেন, তোদের উল্লেখযোগ্য সিনেমা কোনটি কোনটি গত ১০ বা ২০ বছরে? তাহলে কি একটা পরিস্থিতি দাঁড়াবে বলেন! জানি তারপরও কেউ কেউ বোকার মতো দুই-চারটা নাম বলে বসবেন, যা বিশ্ব চলচ্চিত্রের সাপেক্ষে খুবই হাস্যকর! যা–ই হোক, মূর্খের হাতে টাকাপয়সা চলে গিয়েছে। সময় একেবারেই সুশিক্ষার অনুকূলে নাই। তবু মনে রাখতে হবে ১৮ শতকের অন্ধকারাচ্ছন্ন ভারতবর্ষে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, রাজা রামমোহন রায়, রবীন্দ্রনাথরা ছিলেন, কিন্তু দাপট ছিল খিস্তিখেউর–নির্ভর পালাগানের। খিস্তিখেউর করে বিখ্যাত ছিলেন এমন কারও নাম কেউ কি বলতে পারবেন?’