ভিন্ন জীবনযাত্রার গল্পময় ঊনপুরুষ নাটকের মঞ্চায়ন

থিয়েটারের ধর্মই হচ্ছে সমাজ ও রাষ্ট্রের অসঙ্গতিকে মেলে ধরা। এ কারণেই মঞ্চনাটকে উঠে আসে বিপন্ন মানুষের জীবনের কথা। আলো-আঁধারির খেলায় সংলাপের আশ্রয়ে উচ্চারিত হয় সমাজ কর্তৃক অবহেলিত মানুষের বেদনার কথা। উচ্চারিত হয় জীবন চলার পথে প্রতিবন্ধকথার শিকার হওয়া মানুষের কথা। সংলাপের ভেতর দিয়ে এগিয়ে চলা গল্পের কাঠামোয় উঠে আসে মানুষের মৌলিক অধিকারের কথা। 

তেমনই এক নাটকের শিরোনাম ‘ঊনপুরুষ’। ভিন্ন জীবনযাত্রার আখ্যানময় এ নাটকে মানবিক আত্মপরিচয়ের সংকটের সমান্তরালে ভালোবাসা ও সামাজের টানাপোড়েন মেলে ধরা হয়েছে। অপু মেহেদীর রচনায় নাট্যদল নবরস প্রযোজিত নাটকটির নির্দেশনা দিয়েছেন সৈয়দা শামছি আরা সায়েকা।

রবিবার সন্ধ্যায় বেইলি রোডে মহিলা সমিতির নীলিমা ইব্রাহিম মিলনায়তনে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানোর বার্তাবহ এ প্রযোজনার প্রদর্শনী হয়।   

প্রাকৃতিক কারণে পুরুষরূপী কিছু মানুষের মধ্যে বিরাজ করে মেয়েলি স্বভাব বা বৈশিষ্ট্য। চলন-বলন থেকে নানা অভিব্যক্তির মাঝে মিশে থাকে নারীসুলভ বৈশিষ্ট্য। ফলে সমাজ কর্তৃক নানাভাবে অপমান ও অবহেলার শিকার হতে হয়। ভিন্ন জীবনযাত্রার মানুষের সেই বেদনার ধারাভাষ্য হয়ে উঠেছে প্রযোজনাটি।  উপস্থাপিত হয়েছে এমন একজন মানুষের গল্প, যার আত্মপরিচয় সমাজের প্রচলিত কাঠামোর সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। পরিচয়ের স্বীকৃতি না পেয়ে তার জীবন হয়ে ওঠে দোটানা ও সংকটে ভরা।

এ প্রসঙ্গে নির্দেশক সায়েকা বলেন, সামাজিক বন্ধনে আবদ্ধ কিছু মানুষকে  (ছদ্মনাম) নামের এক ভুক্তভোগী কাকরাইলে তাবলিগ জামাতের মারকাজ মসজিদে প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুবাদে অভিযুক্ত সামসুল হক খানের (৫৬) সঙ্গে পরিচিত হয়। সামসুল প্রায়ই অভাবের কথা বলে জামালের কাছ থেকে টাকা নিত। গত ১৪ অক্টোবর জামাল খুলনায় ব্যবসার কাজে থাকাকালে কল করে অসুস্থতার কথা বলে টাকা চান সামসুল। জামাল তাকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় অপেক্ষা করতে বলে এবং খুলনা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার সময় টাকা দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। এরপর রাত সাড়ে ১০টায় যাত্রাবাড়ী কাঁচা বাজার গোলচত্বরে সামসুলের সঙ্গে দেখা করে রেস্টুরেন্টে নাস্তা করে তাকে ২ হাজার টাকা দেন।

জসীম উদ্দিন খান বলেন, পরে রাত ১১টায় রেস্টুরেন্ট থেকে বের হলে সামসুলসহ অজ্ঞাতনামা ৭ জন জামালকে ঘিরে ফেলেন। তারা সিআইডি পুলিশ পরিচয় দিয়ে জাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দেখিয়ে জামালকে জোর করে গাড়িতে তোলেন এবং পিস্তল ঠেকিয়ে হুমকি দেন। এ সময় জামালের সঙ্গে তার ব্যবসায়কি পার্টনার রেজাউল করিমও ছিলেন। এরপর অপহরণকারীরা তাদের ঢাকার হাসনাবাদের একটি ৬ তলা বাড়ির ৬ষ্ঠ তলায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে তাদের কাছে ৫ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে রাজি না হলে তারা জামালকে মারধর শুরু করেন। এতে তিনি ভয় পেয়ে তার সঙ্গে থাকা নগদ ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ট্রান্সফার করে মোট ১ কোটি ১০ লাখ টাকা দেন। অপহরণকারীরা তার ব্যবসায়িক বন্ধু রেজাউল করিমের কাছ থেকেও ২৭ হাজার টাকা নিয়ে যান।

সিআইডির মুখপাত্র আরও বলেন, পরে অপহরণকারীরা জামালকে বিবস্ত্র করে একটি ২৫-৩০ বছরের মহিলার সঙ্গে বসিয়ে ভিডিও ও স্থির ছবি ধারণ করে এবং ১৮টি নন-জুডিসিয়াল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেন। ঘটনা ১৪ অক্টোবর রাত ১১টা থেকে ১৫ অক্টোবর বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে। এরপর এ ঘটনার কথা পুলিশকে জানালে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু এক সপ্তাহ পরেই অপহরণকারীরা ধারণ করা ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ না করার বিনিময়ে ২০ লাখ টাকা দাবি করেন এবং না দিলে মিথ্যা মামলা দায়ের ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। ভিকটিম গত ৬ নভেম্বর যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পেলে তদন্তের এক পর্যায়ে এই দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। চক্রের বাকি সদস্যদের গ্রেপ্তার করতে সিআইডি কাজ করছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *