ববিতা-জাফর ইকবালের প্রেম-ভালোবাসা, মান-অভিমানের অজানা গল্প

রাজ্জাক, আলমগীর, ফারুক, জাফর ইকবাল, সোহেল রানাসহ একাধিক নায়কের বিপরীতে নায়িকা হয়েছেন ববিতা। সবার সঙ্গে ছবি হিট কমবেশি হয়েছে। কাজ করতে গিয়ে ববিতা জড়ান প্রেমের সম্পর্কে। সহশিল্পী নায়কদের মধ্যে ববিতার প্রেমের সম্পর্ক জোরালোভাবে উচ্চারিত হয় একজনের সঙ্গে। চলচ্চিত্র সমালোচকদের মতে, সে সময়ের সবচেয়ে সুদর্শন, স্মার্ট ও স্টাইলিশ নায়ক হিসেবে পরিচিত জাফর ইকবাল। এই নায়কের সঙ্গে প্রেমের কথা অকপটে স্বীকারও করেছেন বরেণ্য এই অভিনয়শিল্পী। তবে কোনো দিন জাফর ইকবালের সঙ্গে নিজের প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে বিস্তারিত কিছুই বলেননি।

প্রথম আলোর এই প্রতিবেদকের সঙ্গে একাধিকবার আলাপে ববিতা বলেছিলেন, জাফর ইকবালকে ভীষণ পছন্দ করতাম। খুবই স্মার্ট, গুড লুকিং। তাঁর সঙ্গে তো আপনার প্রেমের সম্পর্কের কথাও শোনা যেত—এমন প্রশ্ন তুলতেই ববিতা বললেন, ‘তাঁকে আমি ভালোবাসতাম। সে–ও আমাকে ভালোবাসত।’

গত বুধবার সন্ধ্যায় ববিতার সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। ওই সময় বিভিন্ন প্রসঙ্গের পাশাপাশি আলোচনায় উঠে আসে জাফর ইকবালের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব, প্রেম-ভালোবাসা, মান-অভিমানের গল্প। ঢাকাই সিনেমার সুদর্শন নায়ক জাফর ইকবাল আশির দশকেই যে ফ্যাশন, স্টাইল দেখিয়েছেন, তা আজও অনেকের কাছে ভাবনার বাইরে। সমসাময়িক নায়কদের চেয়ে তিনি এদিকটায় ছিলেন অনেক এগিয়ে। জাফর ইকবাল তাঁর সময়ের অনেক নায়িকার সঙ্গেই জুটি বেঁধে অভিনয় করেছিলেন। তবে সবচেয়ে বেশি কাজ করেছিলেন ববিতার সঙ্গে। ববিতা আবার সবচেয়ে বেশি কাজ করেন রাজ্জাকের সঙ্গে। দুজনে একসঙ্গে কাজ করেও আনন্দ পেতেন।

কারণ হিসেবে ববিতা বললেন, দুজনেই জহির রায়হানের মতো বিখ্যাত পরিচালকের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে শুরুটা করতে পেরেছিলেন। দুজনের বোঝাপড়াও ছিল চমৎকার। পারিবারিকভাবেও তাঁরা একে অপরের সঙ্গে চমৎকার যোগাযোগে ছিলেন।জাফর ইকবাল ও ববিতা দুজনে ৪০টি সিনেমায় জুটি হয়েছিলেন বলে জানালেন। সিনেমার কাজ করতে গিয়ে সুদর্শন, স্টাইলিশ জাফর ইকবালকে মনে ধরে ববিতার। একইভাবে ববিতাকেও ভীষণভাবে ভালো লাগে জাফর ইকবালের। স্মৃতি হাতড়ে ববিতা মনে করলেন, তাঁদের দুজনের দেখা এফডিসিতে। শেষ দেখাও সেখানে, যেদিন নিথর দেহের জাফর ইকবালকে শেষবারের মতো এফিসিডিতে আনা হয়। এসব স্মৃতিতে ভর করে বুধবার ববিতা জানালেন, প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও দুজনে কখনোই বিয়ে নিয়ে ভাবেননি। কোনো ধরনের কমিটমেন্টে তাঁরা কখনোই ছিলেন না।

জাফর ইকবালকে যে কারণে আলাদা লাগত

একসময়ের জনপ্রিয় নায়িকা ববিতার ভাষ্যে, ‘একেবারে অল্প বয়সে আমি আর ইকবাল একসঙ্গে ছবিতে অভিনয় করি। একটানা অনেক ছবিতে অভিনয় করেছি। সেই সময় আমার বয়স ছিল ১৫ কি ১৬ বছর। ওই বয়সে কিশোর-কিশোরী মন, যা দেখি সবই ভালো লাগে—এ রকম অবস্থা। জাফর ইকবাল ছিল মোস্ট হ্যান্ডসাম বয়। খুব ভালো গান গাইত। এককথায় সুপার স্মার্ট যাকে বলে সেটাই ছিল সে। একই সঙ্গে খুব ভদ্রও। ওই সময় একসঙ্গে কাজ করতে ভালো লাগত। দর্শকেরাও আমাদের খুব পছন্দ করতে শুরু করল। পত্রপত্রিকাও আমাদের নিয়ে লেখালেখি করতে মজা পেত। আমরাও এসব বেশ এনজয় করতাম। একটা সময় সহকর্মী থেকে বন্ধুত্ব, বন্ধুত্ব থেকে প্রেম-ভালোবাসায় সম্পর্ক গড়ায়।’

ববিতা সমসাময়িক অনেক নায়কের সঙ্গে কাজ করেছেন। তবে জাফর ইকবালের কথাটা আলাদাভাবে বললেন। তাঁর মতে, সবকিছু মিলিয়ে ইকবাল ছিল সত্যিকারের হিরো। তিনি বললেন, ‘কিছু শিল্পীর অভিনয় খুব ভালো থাকে, কিছু অভিনয়শিল্পীর আবার অন্য গুণ থাকে কিন্তু ইকবালকে আমার সবকিছু মিলিয়ে ভালো লাগত। কমপ্লিট প্যাকেজ ছিল। অনেক গুণে গুণান্বিত। ওই সময় আমাদের বয়সও কম ছিল। শুটিং ও শুটিংয়ের বাইরে ইকবালের সঙ্গ ভালো লাগত; কারণ, গিটার বাজিয়ে গান শেখাত। এই গান শেখানোর বিষয়টি আমার বেশ ভালো লাগত। এমনটা আমার সঙ্গে অন্য কোনো নায়কের ঘটেনি।’

ববিতা-জাফর ইকবাল সম্পর্কের মেয়াদ

ববিতা বললেন, ‘আমাদের সম্পর্ক যে শেষ হয়ে গিয়েছিল, তা নয়। শেষের দিকে আমাদের একসঙ্গে ছবি করা কমে গেল। আমিও ভাবলাম ইকবালের সঙ্গে সব ছবি করা যাবে না। রাজ্জাক ভাই, ফারুক ভাইসহ অন্য শিল্পীদের সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। ইকবালও অন্য নায়িকাদের সঙ্গে কাজ শুরু করল। বন্ধুত্ব তো আর শেষ হয় না। আবারও বলছি, আমাদের প্রেম-ভালোবাসা ছিল ঠিকই, কিন্তু কোনো কমিটমেন্ট ছিল না।’

অনেকে বলে, আপনার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ভাঙার কারণে জাফর ইকবালের জীবনটা বিধ্বস্ত হয়ে ছিল—এমন প্রসঙ্গ উঠতেই ববিতা বললেন, ‘এটা ভুল কথা। আমরা কমিটমেন্টে থাকলে বিয়েই করতাম। আমরা কোনো দিন বিয়েটিয়ে নিয়ে ভাবিনি। আমাদের একটা সম্পর্ক ছিল। মানুষের বন্ধুত্ব হয়, ভালো লাগা হয়, প্রেম হয়—হলেই কি বিয়ে করতে হয়? রাজ কাপুর কি নার্গিসকে বিয়ে করেছিল? অমিতাভের সঙ্গে কি রেখার বিয়ে হয়েছিল? এটা এ রকমভাবে বলা যায় না। তবে আমাকে ইকবাল সব সময় ভীষণ শ্রদ্ধা করত। ভালোবাসার পাশাপাশি শ্রদ্ধাটা আমার বেশি লাগত। আমার আগেই কিন্তু ইকবালের বিয়ে হয়ে গেল। এরপর বাচ্চা হলো। ওদের স্বামী-স্ত্রীর বিচ্ছেদও হয়। দুজনের সংসারে খুব অশান্তি ছিল। এরপর আমারও বিয়ে হয়, আমার মতো করে ব্যস্ত হয়ে পড়ি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *