জুলাই–আগস্টে কোথায় ছিলেন ফারিয়া, কী লিখেছিলেন ফেসবুকে

গতকাল গ্রেপ্তার হয়েছেন ঢালিউড চিত্রনায়িকা নুসরাত ফারিয়া। আজ সোমবার আদালতের মাধ্যমে এই অভিনেত্রীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এই নায়িকাকে গ্রেপ্তার ও কারাগারে পাঠানো নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সোচ্চার হয়েছেন তাঁর সহকর্মীরা। কেউ কেউ লিখেছেন, অন্যায়ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে একজন শিল্পীকে। এদিকে আজ এই অভিনেত্রীকে আদালতে তোলা হলে আইনজীবী জানান, যে মামলায় তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, সেই ঘটনার সময় নুসরাত দেশে ছিলেন না। জুলাই–আগস্টে কোথায় ছিলেন ফারিয়া, এই নায়িকা কী লিখেছিলেন ফেসবুকে?

গত বছর জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহের ঘটনা। সেই সময়ে, দেশের জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনাসহ বেশ কিছু আয়োজন অংশ নিয়েছিলেন নুসরাত ফারিয়া। সেসব ছবি তিনি ফেসবুকে পোস্ট করেন। সপ্তাহখানেক পর ১২ জুলাই ফারিয়া এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে জানান, ভালোভাবে কানাডা পৌঁছেছেন। পরবর্তী সময়ে কানাডার ক্যালিগরি শহরের বেশ কিছু আয়োজনে অংশ নেন এই অভিনেত্রী। সেসব ছবি ফেসবুকে পোস্ট করতে থাকেন। এসব আয়োজনে তাঁর সঙ্গে ছিলেন জায়েদ খানসহ অনেকে।

দেশে শিক্ষার্থীদের দাবি সরকার না মানায় ক্রমেই জুলাই আন্দোলন পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকে। জড়ো হতে থাকেন দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তাঁদের নানাভাবে বাধা দিতে থাকে স্বৈরাচারী সরকার। পুলিশের গুলিতে নিহত হন রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ ৬ জন। এই খুনের প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।এই ঘটনায় দেশ যখন উত্তাল, তখন প্রতিবাদে ফেসবুকে সোচ্চার থাকতে দেখা যায় নুসরাত ফারিয়াকে।

এই নায়িকা ১৭ জুলাই ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেশের আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের হত্যায় সোচ্চার হয়ে লেখেন, ‘কাজের কারণে আমি হাজার মাইল দূরে। কিন্তু আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আমি কেমন অনুভব করছি, তা প্রকাশ করতে পারছি না। সর্বোপরি আমরা মানুষ, এই সত্যটি ভুলতে পারি না। দোয়া করি সবাই নিরাপদে থাকুন।’

সরকারের বাহিনী একের পর এক শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি ছোড়ে। ১৮ জুলাই নুসরাত ফারিয়া তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাসে শিক্ষার্থীদের জানাজা দেওয়ার একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছিলেন, ‘জাতি হিসেবে এর চেয়ে দুঃখজনক আর কিছু নেই।’ সেই পোস্ট হাজারের বেশি ভক্তরা ভাগাভাগি করে নেন। শিক্ষার্থীদের পাশে থাকায় অনেকেই তাঁর প্রশংসা করেন।

পরবর্তী সময়ে স্বৈরাচারী সরকার দেশের ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ করে দেয়। আতঙ্কে ছড়িয়ে পড়ে দেশে। সেই সময়ে ১৯ জুলাই ফারিয়া কানাডা থেকে লিখেছিলেন, ‘দুই দিন হয়ে গেল, বাংলাদেশে ইন্টারনেট নেই। দেশটি বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন। আমরা কি সত্যিই আলোচনা করে এই সমস্যার সমাধান করতে পারি না? এটা এত কঠিন কেন? খুব অসহায় বোধ করছি।’পরে ২৩ জুলাই ফারিয়া লিখেছেন, ‘ছয় দিন হয়ে গেল, আমার বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলিনি। আপনারা সবাই জানেন, আমার বাবার অবস্থা তেমন ভালো না। কিন্তু আমি আমার সহকর্মী ছাত্র ভাই এবং বোনের জন্য অনুভব করি। সবার সুস্থতা ও দেশের শান্তি কামনা করছি।’

সরকারবিরোধী আন্দোলন তখন এক দফায় রূপ নিয়েছে। তখনো সোচ্চার ছিলেন এই নায়িকা। তিনি আগস্টের ৩ তারিখে বৃষ্টিতে ভিজে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ছবি পোস্ট করেন। একই দিনে দেশের শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষেরা শহীদ মিনারে জড়ো হলে কানাডা থেকেই সেই ছবি পোস্ট করেন এই নায়িকা। ছবিতে জুড়ে দেন বাংলাদেশের ইমো। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে ফারিয়া সংসদ ভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করার একটি ছবি পোস্ট করে বাংলাদেশের ইমো যোগ করেন।পরবর্তী সময়ে দেশের কোনো পটভূমি নিয়ে ফেসবুকে খুব বেশি কিছু লেখেননি এই নায়িকা। শুধু নিজের ব্যক্তিগত ছবি পোস্ট করেন। এর মধ্যে দেশে বন্যা হলে ফেসবুক সরব হয়েছিলেন এই চিত্রনায়িকা। গত বছর আগস্টের পর তাঁকে মডেলিং, উপস্থাপনা ও অভিনয় নিয়েই থাকতে দেখা গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *