প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেছিল মরক্কো। আর তাতেই ফুটবল বিশে^ নতুন করে ইতিহাস গড়ে আফ্রিকান দেশটি। ফাইনালে ইতিহাসটা আরেকবার নতুন করে লিখেছে তারা। শিরোপা লড়াইয়ে এই টুর্নামেন্টের রেকর্ড ৬ বারের বিশ^চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে পাত্তাই দেয়নি তারা। সোমবার সকালে চিলির সান্তিয়াগোতে অনুষ্ঠিত ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে ২-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলেছে মরক্কো তরুণরা। এটি শুধু অনূর্ধ্ব-২০ নয়, মরক্কোর ইতিহাসে যে কোনো বয়সভিত্তিক বিশ্বকাপেও প্রথম শিরোপা। জোড়া গোল করে এই ম্যাচের জয়ের নায়ক ইয়াসির জাবিরি।
টানা ছয় ম্যাচ জিতে ফাইনালে ওঠা আর্জেন্টিনা সপ্তম শিরোপা জয়ের জন্য মাঠে নেমেছিল। এই মঞ্চে অবশ্য দিয়েগো প্লাসেন্তের দলকেই ফেবারিট ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু ৭৬% বলের দখল আর ২০টি শট নিয়েও জালের দেখা পেল না আর্জেন্টাইনরা। উল্টো যতবারই বল পায়ে এসেছে, প্রায় ততবারই আর্জেন্টাইনদের চাপে ফেলেছে মরক্কানরা। বিশেষ করে প্রথমার্ধে আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগকে তটস্থ করে তুলেছিলেন ইয়াসির জাবিরি, ওথমান মাম্মা, জেসিম ইয়াসিনরা। মরক্কোর সিনিয়র দল অবশ্য আগেই ২০২৬ বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে। ২০২২ সালের কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পৌঁছে তারা শেষ পর্যন্ত হেরেছিল ফ্রান্সের বিপক্ষে।
মরক্কো দুটি গোলই করেছে প্রথমার্ধে। ম্যাচের ১২তম মিনিটে বক্সের ভেতরে জাবিরিকে ফাউল করেন আর্জেন্টাইন গোলকিপার সান্তিনো বারবি। ভিএআর যাচাইয়ের পর বাবরিকে হলুদ কার্ড দেখান রেফারি। আর সেই পেনাল্টি থেকে গোল করেন পর্তুগিজ ক্লাব ফামালিকাউয়ের এই ফরোয়ার্ড। ম্যাচের ২৯ মিনিটে ইংলিশ ক্লাব ওয়াটফোর্ডের উইঙ্গার ওথমান মাম্মার এগিয়ে এসে আর্জেন্টিনার বক্সে ঢোকার পর ডিফেন্ডার হুয়ান ভিয়ালবাকে কাটিয়ে জাবিরির উদ্দেশে ক্রস বাড়ান, সেখান থেকে বল পেয়ে দ্বিতীয় গোলটি করেন। জাবিরির এই গোলের পর স্টেডিয়াম যেন এক টুকরো মরক্কো হয়ে উঠল। তবে জাবিরি আনন্দের আতিশয্যে না ভেসে সিজদা করতে লাগলেন। দুই গোলে পিছিয়ে পড়া আর্জেন্টিনা বিরতির পর ঘুরে দাঁড়ানোর অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু মরক্কোর জমাট রক্ষণের সামনে তাদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
এই টুর্নামেন্টে মরক্কোর যাত্রা ছিল অনন্য। নকআউট পর্বে তারা পরপর দক্ষিণ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও ফ্রান্সকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে। এরপর আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে ২০০৯ সালের পর প্রথম আফ্রিকান দেশ হিসেবে অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ জয়ের কীর্তি গড়ল। ২০০৯ সালে সর্বশেষ আফ্রিকার দল হিসেবে এই ট্রফি জিতেছিল ঘানা। অন্যদিকে টুর্নামেন্টে অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনার জন্য ছিল এটি প্রথম হার, আর সেটিই এল ফাইনালে।
আর্জেন্টিনা এবারও ফাইনালে উঠেছিল তাদের সেরা দুই খেলোয়াড়কে ছাড়াই। বায়ার লেভারকুসেনের ক্লদিও এচেভেরি ও রিয়াল মাদ্রিদের তরুণ তারকা ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো ছিলেন না দলে। ফাইনাল হারের পর আর্জেন্টাইন যুবাদের মাথা উঁচু করে রাখার বার্তা দেন লিওনেল মেসি। ইনস্টাগ্রাম পেজে দলের প্রতি সমর্থন আর সান্ত¡নার সুরে মেসি লেখেন, ‘মাথা উঁচু রাখো, ছেলেরা! তোমরা অসাধারণ একটি টুর্নামেন্ট খেলেছ। যদিও আমরা সবাই চেয়েছিলাম তোমরা শিরোপা তুলে ধরবে। তবুও তোমাদের অসাধারণ সব সাফল্য আমরা উপভোগ করছি এবং যেভাবে তোমরা তোমাদের হৃদয় দিয়ে নীল ও সাদা জার্সির জন্য লড়েছে, আমরা গর্বিত।’
ম্যাচ শেষে আর্জেন্টিনা অনূর্ধ্ব-২০ দলের কোচ দিয়েগো প্লাসেন্তো বলেন, ‘আজকের পরিস্থিতি আমাদের বিশ্বকাপে আগের ম্যাচগুলো থেকে আলাদা ছিল। আমরা আমাদের শক্তি পুরোপুরি দেখাতে পারিনি। আমরা ঘুরে দাঁড়াতে বা একটি গোল করতে পারিনি।’ অবশ্য নিজেদের ব্যর্থতার সঙ্গে প্রতিপক্ষকেও কৃতিত্ব দিলেন আর্জেন্টিনার কোচ, ‘জয়টা তাদের প্রাপ্য। তারা শারীরিকভাবে খুব শক্তিশালী। আমাদের কিছু খেলোয়াড় পুরোপুরি পারফর্ম করতে পারেনি। ফলে আমাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে ম্যাচটি।’