শূন্যমুদ্রা

যখন মুদ্রাচর্চা শুরু করলাম দু’ধরনের মানুষ পাশে পেয়েছিলাম ১) যারা বিস্মিত হয়েছিলো যে হাতের আঙ্গুলের ছোট্ট একটা ভঙ্গিতে এতো কিছু হতে পারে! চেষ্টা করে করতে হবে তো! অর্থাৎ তারা করতে আগ্রহী ছিলো ২) যারা কটাক্ষ করেছিলো অর্থাৎ তারা নিজেরা এ ব্যাপারে আগ্রহী না এবং আমাকেও করতে ইনডিরেক্টলি বাধা দিয়েছে। তাদের যুক্তিটা ছিলো শুধু হাতের ‘কারুকাজ’ করেই যদি মানুষ সুস্থ থাকতো তাহলে এতো ডাক্তার, এতো ওষুধ আবিষ্কারই হতো না। আমাদের চারপাশে এরকম কিছু মানুষ আছেন যারা মনে করেন আমি সুস্থ থাকবো এর দায়িত্ব ডাক্তারের এবং ওষুধের। দীর্ঘমেয়াদে ভালো থাকতে হলে যে নিজেদেরও কিছু করণীয় আছে তা তারা বুঝতেও চান না, এ বিষয়ে কিছু শুনতেও চান না। এটা আমাদের দায়িত্ব যে আমরা কোন দলে সামিল হবো। যারা ভালো খাদ্যাভ্যাস, শরীরের যত্ন, মনের যত্নের ঘোর বিরোধী তারা শুধু নিজেরা চর্চা করবেন না তা নয় বরং আরও পাঁচজনকে নিরুৎসাহিত করবেন। আপনি হয়তো চিনি ছাড়া চা খাচ্ছেন তাদের পছন্দ হবে না। হয়তো মন্তব্য শুনতে হবে, ‘তোমার তো ডায়বেটিস নাই তাহলে এতো কিছুর দরকার কী?’ আমার এক আত্নীয়া ভাত কম খায় ফলমূল তার একটু বেশি পছন্দ। তার শাশুড়ি সবার সামনে কটাক্ষ করে বললেন,‘আমাদের বউ তো ক্যাটরিনা কাইফ ভাত খায় না ফল খায়।’ এরকম মানুষ আমাদের সমাজে অনেক আছেন। নারীরা যেকোন কিছু করতে গেলে তাদের অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয় আর তা যদি হয় নিজের যত্নের ব্যাপারে তাহলে তো কথাই নেই। আবার একটা সময় তারাই দেখবেন ডায়েটিং শুরু করেছে, সকাল–সন্ধ্যা হাঁটতে বের হচ্ছেন, মেডিটেশন শুরু করেছেন। আপনি হয়তো অবাক হচ্ছেন দেখে কিন্তু নিশ্চিত থাকুন এমনি এমনি তার এই পরিবর্তনটা আসেনি। খোঁজ নিতে যান, দেখবেন তার অবশ্যই ডায়াবেটিস হয়েছে, শুধু তাই নয় সাথে হয়তো ফ্যাটি লিভার বা থাইরয়েডের সমস্যাও যুক্ত হয়েছে। এর অর্ধেক সচেতন যদি আগে হতেন হয়তো তার এই রোগই হতো না। বর্তমান সময়ে যে রোগগুলো মহামারী আকার ধারণ করেছে তার বেশিরভাগই ‘লাইফস্টাইলজনিত রোগ’। এর কারণ হলো সঠিক জীবনাচরণ অনুসরণ না করা বা ভুল জীবনযাপনের ধরণ। প্রকৃতিবান্ধব নিয়মকানুন থেকে তো আমরা অনেক আগেই সরে এসেছি। এখন বাস্তবতা হলো আমরা যদি সুস্থ থাকতে চাই নিজের জন্য কিছু কিছু কল্যাণকর পদক্ষেপ আমাদের নিতেই হবে। সুস্থতার জন্য একটি প্রাকৃতিক নিয়ম হলো যোগ হস্তমুদ্রা। আজ আমরা ‘শূন্য মুদ্রা’ সম্পর্কে জানবো।

যেভাবে মুদ্রা করতে হবে :

হাতের মধ্যমা আঙ্গুলের মাথা বৃদ্ধাঙ্গুলির গোড়ায় অর্থাৎ মিডল ফিঙ্গারের টিপ থাম্ব বেইজে স্পর্শ করতে হবে এবং বৃদ্ধাঙ্গুলির উপরিভাগ বা মাথা দিয়ে মধ্যমা আঙ্গুলের পিঠে হালকা চাপ দিতে হবে। এসময় অন্য তিনটি আঙ্গুল তর্জনী, অনামিকা ও কনিকা সোজা (স্ট্রেইট) থাকবে। এই মুদ্রায় শরীরের আকাশ তত্ত্ব বা স্পেস এলিমেন্ট কমে তাই এর নিয়মিত চর্চায় আকাশ তত্ত্ব বাড়তিজনিত সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়। এটি আকাশ মুদ্রার বিপরীত কাজ করে। এই মুদ্রা করার সময় দমের দিকে খেয়াল রাখলে ভালো হয়। এই মুদ্রাটি পদ্মাসন বা যেকোন সহজ ক্রস লেগ আসনে বসে করা যায়। মুদ্রা তৈরি করার পর হাতদু’টোর পিঠ হাঁটুর উপর রেখে বসতে হয়। যে কোন যোগ হস্তমুদ্রা করার স্বাভাবিক সময় ৫ থেকে ১৫ মিনিট তবে শূন্য মুদ্রা সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট পর্যন্ত করা যায় গাইডের অনুমতিক্রমে। দিনের যে কোন সময়ই করার সুযোগ আছে। কেউ যদি একসাথে এতো সময় করতে না পারে তাহলে ভেঙ্গে ভেঙ্গে দিনের যেকোন সময়ে করতে পারে।

শূন্য মুদ্রার উপকার:

১. শূন্য মুদ্রা শরীরের যেকোন অংশের নাম্বনেস বা অবশ হওয়া ভালো করে। কারণ এরকম অবশ সাধারণত রক্ত চলাচলের সমস্যা বা বাধাগ্রস্ততা থেকে এবং এই রক্তচলাচলের বাধাগ্রস্ততার একটা বড় কারণ হলো শরীরে স্পেস এলিমেন্টের আধিক্য।

২. শূন্য মুদ্রা চর্চা কানের নার্ভের উপর ভালো কাজ করে। টিনিটাস, কান ভারি হওয়া, বধিরত্ব, কানপাকাসহ কানের অনেক ধরনের সমস্যা থাকে। যে সমস্যাগুলো আকাশ মুদ্রায় সমাধান হয় না তা পাশাপাশি শূন্য মুদ্রাও চর্চা করতে হয়। ক্রনিক বধিরতার ক্ষেত্রে একটানা দীর্ঘদিন শূন্য মুদ্রা প্র্যাকটিস করলে উপকার পাওয়া যায়।

৩. দাঁতের মাড়ির রক্তক্ষরণজনিত সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।

৪. থাইরয়েড এবং গলার সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।

৫. মোশন সিকনেস এবং ভার্টিগো সমস্যায় উপকার পাওয়া যায়।

যারা শূন্য মুদ্রা চর্চা করবেন না:

যারা সদ্য কোন রোগ থেকে সুস্থ হয়েছেন তারা শূন্য মুদ্রা চর্চা থেকে বিরত থাকবেন কারণ এই মুদ্রা শরীরের স্পেস এলিমেন্ট কমিয়ে দেয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *