ইকবাল বিন রশিদ। মাউন্ট ফুজি জাপানের সর্বোচ্চ পর্বত। রাজধানী টোকিও থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হোনশু দ্বীপে তুষারাবৃত এই সুউচ্চ ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি মাউন্ট ফুজির অবস্থান। গত ৭ আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় মাউন্ট ফুজির নিচ থেকে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন ইকবাল। প্রায় ৯ ঘণ্টা পর ফুজির চূড়ায় ওড়ালেন লাল-সবুজের পতাকা। স্বপ্নছোঁয়া এই তরুণের ফুজি জয়ের গল্প শুনেছেন কামাল উদ্দিন
মাউন্ট ফুজি জাপানের সর্বোচ্চ পর্বত। রাজধানী টোকিও থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হোনশু দ্বীপে তুষারাবৃত সুউচ্চ ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি মাউন্ট ফুজির অবস্থান। গত ৭ আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় পর্বতের নিচ থেকে হেঁটে যাত্রা শুরু করেন বাংলাদেশ থেকে জাপানে পড়তে যাওয়া তরুণ ইকবাল বিন রশিদ। অনেক দুর্ভেদ্য কাজ; নতুন অভিজ্ঞতা–সব মিলিয়ে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ পর্বতের চূড়ায় ওঠা। প্রায় ৯ ঘণ্টা পর সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে মাউন্ট ফুজির চূড়ায় ওঠে নিজের স্বপ্নকেই ছুঁয়ে দেখালেন এই তরুণ। ফুজির গায়ে ওড়ান লাল-সবুজের পতাকা। এই গর্বের মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করেন ইকবাল নিজেই। গেয়ে ওঠেন দেশকে নিয়ে আবেগী গান; যা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এমন সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে তাঁর বাড়িতে খোঁজ নিলাম। যোগাযোগ করলাম ইকবালের সঙ্গেও। কথা হলো তাঁর এই স্বপ্ন জয়কে ঘিরে।
বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান
মাউন্ট ফুজি জাপানের সর্বোচ্চ পর্বত। রাজধানী টোকিও থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে হোনশু দ্বীপে তুষারাবৃত সুউচ্চ ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি মাউন্ট ফুজির অবস্থান। এটি জাপানের সবচেয়ে বিখ্যাত আগ্নেয়গিরি ও পর্বতশৃঙ্গ; যার উচ্চতা ৩ হাজার ৭৭৬ মিটার বা ১২ হাজার ৩৮৯ ফুট। এটি জাপানের জাতীয় ঐতিহ্যের প্রতীক ও বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিত।
মাউন্ট ফুজি জয়ের পরিকল্পনা
এমন প্রশ্ন করতেই ইকবাল বিন রশিদ বলেন, ‘জাপানে আসার পর থেকে মাউন্ট ফুজিতে ওঠার স্বপ্ন আমাকে তাড়া করতে থাকে। মূলত ২০২৩ সালে একটি ভিডিও দেখে মাউন্ট ফুজিতে ওঠার স্বপ্ন জাগে মনে। সেই থেকেই গ্রীষ্মের ছুটিতে গত ৭ আগস্ট স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় পর্বতের নিচ থেকে হেঁটে যাত্রা শুরু করি। কঠিন যাত্রা পথ, নতুন অভিজ্ঞতা–সব মিলিয়ে এক কঠিন চ্যালেঞ্জ পর্বতের চূড়ায় ওঠা। তারপরও শারীরিক এবং মানসিক শক্তিতে ভর করে সম্মুখপানে এগোতে থাকি। ঘড়ির কাঁটা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেরিয়ে যায়। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে মাউন্ট ফুজির চূড়ায় উঠতে সক্ষম হই। উঠেই সবার আগে আবেগাপ্লুত হয়ে দেশের লাল-সবুজ পতাকা উড়িয়ে জানান দিই নিজের আবেগ আর ভালোবাসার। পর্বতের চূড়ায় পৌঁছে হাতে থাকা বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে গর্বের মুহূর্তটি ক্যামেরাবন্দি করি আমি নিজেই।’
পাহাড়ে আমার বাড়ি
ইকবাল বিন রশিদ সাহসকে বলেন, ‘মাউন্ট ফুজি জয়ের স্বপ্ন ছোটবেলা থেকেই ছিল। আর এর পরিকল্পনায়ও দীর্ঘ সময় লেগেছে। ছাত্রজীবনে দেশের অনেক দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করেছি। চার দিন-চার রাত অমানবিক পরিশ্রম করে বান্দরবানের আন্ধার মানিকের উঁচু পাহাড়গুলোতে আরোহণ করেছি। সেখানে পাহাড়ি খাসিয়া, মোরং, গারো পরিবারে পরপর তিন দিন এবং এক মুসলিম পরিবারের সঙ্গে এক দিন ছিলাম। দিনে পাহাড়ের উঁচু-নিচু আঁকাবাঁকা পথ এবং ঝিরিপথের সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হতাম। আহ, কী কষ্ট আর মধুর স্মৃতিময় দিন ছিল! সাজেক ভ্যালি ও রাঙামাটির অসংখ্য পাহাড় হেঁটে ভ্রমণ করেছি। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে পরিবারের সঙ্গে ওমরা হজের উদ্দেশ্যে সৌদি আরব গিয়েও হেরা পর্বতে ওঠি। আসলে পাহাড়ে চড়াটা আমার এক ধরনের নেশা হয়ে দাঁড়িয়েছে! পাহাড় দেখলেই নিজেকে আর স্থির রাখতে পারি না; পাহাড়ই যেন আমার বাড়ি!’
জন্ম ও বেড়ে ওঠা
ইকবাল বিন রশিদের বাড়ি কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার বাকই ইউনিয়নের কোঁয়ার গ্রামে। বাবা আবদুর রশিদ সৌদিপ্রবাসী আর মা আয়েশা বেগম গৃহিণী। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট ইকবাল। দুই ভাই শাহজালাল ও রবিউল কাতারপ্রবাসী। নিজ উপজেলার হরিশ্বর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৭ সালে এসএসসি এবং রাজধানীর কলেজ অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ থেকে ২০১৯ সালে এইচএসসি শেষ করে
ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভে তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে জাপানের ভিসা হয়ে যাওয়ায় ২০২৪ সালের ১১ জুলাই তিনি স্টুডেন্ট ভিসায় জাপানে পাড়ি জমান। বর্তমানে জাপানের কোবে সিটিতে কিয়োশিন ল্যাংগুয়েজ একাডেমিতে অধ্যয়নরত। জাপানে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করে দেশে ফিরতে
চান এই তরুণ।
আগামীর স্বপ্ন
আগামীর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে ইকবাল বিন রশিদ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমি ভ্রমণ পছন্দ করি। এই নিয়ে আছে কত কত স্মৃতি! তবে জাপানে আসার পর স্বপ্ন দেখতে থাকি জাপানের সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট ফুজির চূড়ায় উঠে লাল-সবুজের পতাকা ওড়াব এবং মন ভরে পর্বতটি উপভোগ করব। একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি গর্বিত যে, আমার স্বপ্ন-আশা পূরণ হয়েছে। পর্বতের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকাকে ওড়াতে পেরে নিজেকে খুব গর্বিত মনে হয়েছে। আমরা বীরের জাতি। আমরা চেষ্টা করলে অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারি। আমার ভবিষ্যৎ স্বপ্ন হচ্ছে, বাইক নিয়ে বাংলাদেশ থেকে পবিত্র নগরী মক্কায় যাওয়া। সুযোগ পেলে বিশ্বভ্রমণেও বের হতে চাই। জানি না সেই স্বপ্ন পূরণ হবে কিনা!’
ইকবালের এমন স্বপ্ন হাজারও তরুণের। সঠিক পরিকল্পনায় এগিয়ে গেলে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করাই যায়!