মাসফি, ওই দেখো বাবা কী সুন্দর চাঁদ খেলা করছে আকাশে।
মাসফি– মা কই চাঁদ খেলা করছে? দেখাও না মা।
মা ওইদিকো আকাশে তাকাও…..
এবার মাসফি চাঁদটা সত্যি সত্যি দেখতে পেল।
খুশীতে আত্মহারা ও। মাসফি চোখ জুড়িয়ে চাঁদটা দেখতে লাগলো……
এমন সময় মা বলল, আচ্ছা সোনা এখন চলো পড়বে।
মাসফি– মা, চাঁদটা কী সুন্দর তাই না!
মা– একদম না, আমার মাসফির চেয়ে বেশি না।
কথাটা শুনে মাসফি আরো খুশি হয়ে গেল।
মাশফির খুশি দেখে মুমুর জিজ্ঞাসামূলক দৃষ্টি তাদের মায়ের দিকে।
মুমুর সেই প্রশ্নের জবাবে তাদের মা বলেন– সন্তানকে খুশি কীভাবে করতে হয়, সেই বিদ্যা শিখার জন্য মা’কে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করতে হয় না।
তাঁদের বাবা এসে যোগ দিলেন সেই মূহুর্তে– তুমি ঠিক বলেছো রাদিকা।
সন্তানদের মানুষের মত মানুষ করার জন্য কোনো মাকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জন করতে হয় না। শুধু মাথা ঠাণ্ডা রেখে হাসি খুশিতে কথা বললেই হয়। তবে হ্যাঁ, তার জন্য মুক্ত বুদ্ধির চর্চা তো করতেই হয়।
মুমু– আব্বু, সেটা কীভাবে?
– ঘরের অন্য কাজ সেরে সন্তানদের নিয়ে ঘণ্টা দু’য়েক বিভিন্ন বই পড়া, তাদের নিয়ে বেড়ানো এই ৃ ব্যাস।
রাদিকা হু, একদম ঠিক বলেছো? এতে মানসিক চাপটা বাড়ে না। সন্তানদের সাথে কাটানোর জন্য কিছু সময় প্রত্যেক মা– বাবার রাখা উচিত।
মুমু – এই দেখো বাবা, তোমরা কথা বলছো আর মাসফি অন্য রুমে গিয়ে ক্যান্ডিক্রাশ গেইম খেলছে।
বাবা– খেলাধূলা মন ভালো রাখে আর পড়া লেখা বাড়ায় জ্ঞানবুদ্ধি। তবে মোবাইলে খেলার প্রতি আসক্তিতে নিজের ক্ষতি হয়, এ কথা মনে রেখো।
–আচ্ছা আব্বু এখন যাই?
কিছু পড়া বাকী আছে।
বাবা– দেখেছো ? আমাদের মুমু কেমন ভালো মেয়ে? পড়তে চলে গেল।
রাদিকা –হু , মাসফি ও ভালো।
আচ্ছা, আমি এখন বের হচ্ছি, কাজ আছে।
আচ্ছা, সাবধানে যেও।
মাসফি, এই মাসফিৃ গেল কোথায়?
এই তো মা, এখানে আমিৃ তার পড়ার ঘর থেকে জবাব দেয় মাসফি।
রাদিকা তার কক্ষে প্রবেশ করার সাথে সাথে গলা জড়িয়ে গালে চুমু খায়।
রাদিকা হেসে দিয়ে মাসফিকে ঠিক একইভাবে চুমু দেয়।
মাসফি শান্ত মিষ্টি ছোট্ট,বাবু । তার চিন্তা চেতনা প্রখর কিন্তু ফাঁকিবাজ টাইপেরও বলা যায় ! আবার পরিবারের সবার প্রতি নজরও রাখে। শুধু পড়তে বললে নানা বাহানা তার।
–আচ্ছা মা, চাঁদের কে কে আছে?
–চাঁদের বুড়ি আছে,
–বুড়ি কি করে ?
–তোমার মতো কী রান্না করে?
–ধুর বোকা! বুড়ি তো সূঁতো কাটে।
–তো আকাশে কেনো? নিচে মাঠিতে বসে কাটতে পারে না?
বাবু–বেশি প্রশ্ন করো না, এখন পড়ো। পড়লে চাঁদের কাছে যেতে পারবে। চাঁদের সাথে খেলতে পারবে।
–আমি কি বাবু? আমার নাম মাসফি!
–হয়ছে, এখন পড়তে বসো।
–মা,আমার পেট ব্যথা, পড়তে পারবো না এখন
রাদিকা, কাল আমরা চিড়িয়াখানায় যাব।
মাসফি– আমি বাঘ দেখবো, সিংহ দেখব!
–কী মজা! কী মজা!
“মা–একটা গল্প শোনাবে–গল্প শুনে আমি পড়ব।
মাসফি সোনা তুমি কিন্তু দিন দিন ফাঁকি দিচ্ছো।
, সত্যই বলছি মা পড়ব। তিন সত্যই বললাম।
ঠিক আছে তোমাকে বুদ্ধিমান কাঁকের ছোট্ট গল্প বলি। মাসফি– মা বুদ্ধিমান কাক মানে? কাকের কি বুদ্ধি হয়।
শোন তাহলে– বড় একটা মাঠ।
মাঠের ও’ পারে একটা বড় বন।
এক ছিল কাক। সে খাবারের খোঁজে বনে যেতে চাইল। সে উড়তে শুরু করল। উড়তে উড়তে তার খুব পিপাসা পেল। সে এদিক ওদিক তাকাল পানির খোঁজে, তখন একটা কলসি পড়ল তার চোখে। সে খুব খুশি হলো। উড়ে গিয়ে বসল কলসির ওপর। সে দেখল পানি কলসির একেবারেই তলায়। কাঁক ঠোঁট ঢুকিয়ে দিল কলসিতে। কিন্তু নাগাল পেল না। তার খুব দুঃখ হলো।
–সে এদিক ওদিক তাকাল। কাছেই দেখতে পেল অনেক নুড়ি। তার মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। সে একটা করে নুড়ি আনতে লাগল। এভাবে কাকটি অনেক নুড়ি কলসিতে ফেলল। এক সময় পানি কলসির মুখে উঠে এলো।
তখন কাকটি প্রাণ ভরে পান করল। তার পিপাসা মিটলো। কাক খুশি মনে ডানা ঝাড়া দিল তারপর উড়াল দিল বনের দিকে।
মাসফি–বাহ্ দারুণ বুদ্ধিমান কাক তো।
মাসফি রোজ স্কুলে যায়। কোচিং করে সব সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে পছন্দ করে।টিভি দেখা গেমস্ খেলা তার শখ। শহরের চারদিকে বড় বড় দালান, খেলার মাঠ নেই, ডিজিটাল শহরে শিশুরা বড় হয় চার দেয়ালের ভেতরে। মাসফিও মোবাইল গেইম খেলে, এই বয়সে ফোনের অনেক ফাংশন সে জানে।
বেশি সময় কাটে মায়ের সাথে। কিছুক্ষণ পর কাছে এসে মাকে জড়িয়ে কপালে চুমা দেবে মাসফি হলো মায়ের প্রাণ।
মা বলে, মাসফি এবার ঘুমুবে।
– বাবা না আসলে ঘুমুব না আমি। বাবাকে গুড নাইট না বললে মর্নিংটা গুড হবে কি করে…?