‘কর্ণে দোলাবো তৃতীয়া তিথির চৈতী চাঁদের দুল দেবো খোঁপায় তারার ফুল’

‘রক্তকরবী’র অনুষ্ঠানে নজরুল গীতির ব্যতিক্রমী এক সুর–মূর্ছনায় সেদিন ছিলাম মন্ত্রমুগ্ধ। আসলে যে কোন কাজের নিষ্ঠা আর শ্রম কখনোই বৃথা যায়না। সেদিন নগরীর টিআইসি মিলনায়তনে রক্তকরবী আয়োজিত নজরুল স্মরণ অনুষ্ঠানে গিয়েই প্রাণভরে কবি নজরুলের গান শুনেছি। কি অসাধারণ গোছানো আর সরস আসর! সূচনাপর্বে রক্তকরবীর কর্ণধার শীলা মোমেন বলেন, নজরুল গীতি নিয়ে সেটি ছিল তাদের প্রথম আয়োজন। ফলে নজরুল গীতির বিশাল ভাণ্ডার থেকে গান নির্বাচন করা বেশ কঠিন। কারণ, কবি নজরুল তাঁর গানকে বিচিত্র সুর আর বহুমাত্রিক বাণীর বীণায় বেঁধেছিলেন। কেবল বিষয়বস্তু নয়, রাগ, তাল, লয় ছাড়াও তিনি গানের জগতে তাঁর পূর্বসূরী এবং উত্তরসূরীদের কাছ থেকেও গানের ধারা ও গীতবৈচিত্র্যের সুরসুধাকে ধারণ করে নজরুল গীতিকে দান করেছেন অসামান্য পূর্ণতা।

ফলে এই অনুষ্ঠান সাজাতে গিয়ে শীলা মোমেন নজরুল গীতির ভাণ্ডার থেকে বাংলাসাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদ থেকে শুরু কওে মুকুন্দরাম, অতুল প্রসাদ, বাউল, শ্যামা সংগীত, দেশাত্মবোধক, জাগরণী, ভক্তিমূলক, ইসলামী গান, গজল কিছুই তিনি বাদ রাখেন নি। এটি নি:সন্দেহে এক মহা পরিশ্রমের কাজ। গান নির্বাচনে অসামান্য দক্ষতা অনুষ্ঠানের মানকে উচ্চমাত্রায় নিয়ে যায়। আবার প্রতিটি গানের আগে এই গানের প্রেক্ষাপট নিয়ে সংক্ষিপ্ত কথামালায় ঋদ্ধ হয় দর্শক শ্রোতা। গান আর কথামালায় কবির এই অনবদ্য সৃষ্টি দর্শকদেরকে সমকালীন সমাজ, ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্যের কাছে নিয়ে যায়। প্রতিটি গানই ছিল অসাধারণ। কিছু কিছু গান আগে শুনিনি। খুব ভালো লেগেছে। আর যে গানগুলি জানি এবং আগে শুনেছি, সেগুলো তো আমি কান পেতেই শুনেছিলাম। অনুষ্ঠানে মোট ২০ টি গান পরিবেশন করা হয়। কিছু একক গান, আর কিছু সমবেত কণ্ঠে। একক গানের শিল্পীরা হলেন টিংকু শীল, জুলি বড়ুয়া, কৌশিক দত্ত, শাওন প্রিয়া, শর্মিষ্ঠা দেব, শ্রাবন্তী ধর। আর সমবেত সংগীতে ‘রক্তকরবী’র পুরা টিম অংশগ্রহণ করে। কিছু প্রিয় গানের কথা উল্লেখ করছি। মোর প্রিয়া হবে এসো রাণী, বুলবুলি নিরব নার্গিস বনে, তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি, চল চল চল, কারার ঐ লৌহ কপাট, শিকল পরা ছল, আমি পথ মঞ্জরী, অন্তরে তুমি আছো চিরদিন তুমি অন্তর্যামী। এই গানগুলি হৃদয় ছুঁয়ে যায়। আর কিছু নতুন গান প্রথম শুনেছি, সেগুলোও ছিল দারুণ পরিবেশনা। অনুষ্ঠানে এস্রাজে অশোক সরকার, তবলায় পলাশ দেব, অক্টোপ্যাড নন্দন নন্দী, কী বোর্ডে হিল্লোল রায় আর মন্দিরায় ছিলেন মো. ফারুক হোসেন। এমন একটি গোছানো ও সরস অনুষ্ঠান আমাদের জন্য পরম এক পাওয়া। অভিনন্দন আর এক রাশ শুভেচ্ছা ‘রক্তকরবী’র জন্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *