ছোট বোনের বস্তাবন্দী লাশ নালায় খুঁজে পেল ৯ বছরের শিশু

পাঁচ বছর বয়সী রোজা মনিকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। গতকাল সোমবার বেলা একটার পর থেকে নানা জায়গায় খোঁজাখুঁজি করার পর এলাকায় মাইকিংও করা হয়। এরপর রাত কেটে ভোর আসে। আবার শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। হঠাৎ বাসা থেকে একটু দূরে একটি নালার ময়লা-আবর্জনার মধ্যে ভারী একটি বস্তা দেখতে পায় রোজার ৯ বছর বয়সী বোন আইরিন আক্তার। তারপর আরেক কিশোরী বোন সুবর্ণা আক্তারকে নিয়ে এসে সেই বস্তা টেনে তোলে তারা। বস্তার মুখ কাটার পর বেরিয়ে আসে রোজা মনির লাশ।শিশুটির পরিবার মাত্র ১৩ দিন আগে ঢাকার তেজগাঁওয়ের তেজকুনিপাড়ায় একটি টিনশেড ঘর ভাড়া নেয়। আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সেই বাসা থেকে মাত্র ১০০ মিটার দূরত্বে বিজয় সরণি উড়ালসড়ক–সংলগ্ন নালা থেকে রোজা মনির লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ বলছে, শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। গরম পানি দিয়ে পুরো শরীর ঝলসে দেওয়া হয়েছে। তারপর বস্তাবন্দী করে নালায় লাশ ফেলা হয়। শিশুটির গলায় দড়ি প্যাঁচানো ছিল।তেজকুনিপাড়ায় রোজা মনিদের বাসায় গিয়ে দেখা যায়, রোজা মনির মা শিল্পী আক্তার বিলাপ করছেন। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি জানালেন, তাঁদের গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরায়। স্বামী নূর আলম এক বছর আগে মালয়েশিয়ায় যান। সেখানে গিয়ে তেমন আয় করতে পারছেন না। ফলে তাঁরা আর্থিক অনটনে পড়েন। এমন পরিস্থিতিতে জীবিকার সন্ধানে ৮ মাস আগে ৭ সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে শিল্পী আক্তার ঢাকায় চলে আসেন। তিনি বাসাবাড়িতে কাজ নেন। দুই কিশোরী মেয়েকে পোশাক কারখানায় কাজে দেন। অন্য সন্তানদের কাজে দেওয়ার মতো বয়স হয়নি। ঢাকায় এসে প্রথমে তেজগাঁও এলাকায় ১০ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি বাসা নিয়েছিলেন। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে ১৩ দিন আগে সাড়ে তিন হাজার টাকায় তেজকুনিপাড়ায় এই বাসায় উঠেছিলেন।

শিল্পী আক্তারের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তাঁর কথা যেন থামছিল না। মেয়ের নানা স্মৃতি মনে করে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন। কীভাবে মেয়ের লাশ খুঁজে পেলেন, সেই বর্ণনাও দিলেন নিজের মুখেই। কেন, কী কারণে তাঁর এই শিশুসন্তানকে হত্যা করা হলো, সেটি তিনি জানেন না। বললেন, ‘আমার নিষ্পাপ বাচ্চাডারে এমনে নির্মমভাবে যে মারল…শত্রুতা থাকলে তুই আমরার লগে শত্রুতা করতি। আমার মাইয়্যাতো কোনো শত্রুতা করে নাই। তারে কেন মারলি? আপনারার কাছে আমি বিচার চাই। মাইয়্যা হত্যার বিচার চাই। আর কিচ্ছু চাই না।’

শিল্পী আক্তার বিলাপ করতে করতে বলছিলেন, ‘মাইয়্যা (রোজা মনি) খালি কইতো, আমরার ডাহা (ঢাকা) ভাল্লাগে না। তুমি আব্বারে কও আমরারে দেশে লইয়্যা যাইতো। এই ডাহাই (ঢাকা) মাইয়্যাডারে কাইড়া নিল।’ তেজগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোবারক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এই হত্যাকাণ্ডে কারা জড়িত, সেটি খুঁজে বের করতে পুলিশের একাধিক দল কাজ করছে। আশপাশের ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজও সংগ্রহ করা হয়েছে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *