পবিত্র জুমার দিন যে পাঁচ কাজ ভুলেও করা যাবে না

জুমা: সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন ও আমাদের কিছু সাধারণ ভুল

ইসলামের দৃষ্টিতে জুমা সপ্তাহের শ্রেষ্ঠ দিন। এই দিনের ফজিলত, বরকত ও ইবাদতের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কোরআনে ‘সূরা জুমা’ নামে একটি সুরা নাজিল হয়েছে, যেখানে জুমার নামাজের নির্দেশনা ও তা পালনের গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অসংখ্য হাদিসেও এ দিনের মর্যাদা বিশদভাবে বর্ণিত হয়েছে।

প্রতিটি মুসলমানের জন্য জুমার নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা এ নামাজ আদায় করে থাকেন। তবে কখনও অনিচ্ছাকৃতভাবে কিছু ভুলত্রুটি হয়ে যায়, যেগুলো এ পবিত্র আমলের সৌন্দর্যকে ক্ষুণ্ণ করে। নিচে পাঁচটি সাধারণ ভুল তুলে ধরা হলো—

১. পরিচ্ছন্ন না হয়ে জুমায় যাওয়া

জুমার দিন গোসল করা সুন্নাত নয়, বরং তা ওয়াজিব (আবশ্যক)। অনেকেই কাজের চাপে অথবা অবহেলায় গোসল না করেই জুমার নামাজে চলে যান। অথচ হাদিসে এসেছে:

আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন:
“জুমার দিন প্রত্যেক প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য গোসল করা ওয়াজিব। আর সে যেন মিসওয়াক করে এবং যদি সম্ভব হয় তবে সুগন্ধি ব্যবহার করে।”
— (বুখারি: ৮৮০; মুসলিম: ৮৪৬)

✅ করণীয়:

  • গোসল করুন
  • মিসওয়াক ব্যবহার করুন
  • পরিচ্ছন্ন ও ভালো পোশাক পরিধান করুন
  • সামর্থ্য থাকলে সুগন্ধি ব্যবহার করুন

২. মসজিদে দেরি করে যাওয়া

শুধু দুই রাকাত ফরজ আদায় করলেই জুমা সম্পূর্ণ হয় না; বরং খুতবা শোনা জুমার অপরিহার্য অংশ। রাসুল (সা.) বলেছেন:

“যে যত আগে মসজিদে যায়, তার জন্য ততবেশি সওয়াব নির্ধারিত হয়— যেমন উট, গাভী, দুম্বা, মুরগি ও ডিম কোরবানি করার সওয়াব।”
— (বুখারি: ৮৮১)

✅ করণীয়:

  • নামাজের আগেই যথাসময়ে মসজিদে উপস্থিত হওয়া
  • খুতবা শুরুর আগেই বসে যাওয়া

৩. জুমার সময় অন্য কাজে ব্যস্ত থাকা

পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে—

“হে ঈমানদারগণ! যখন জুমার দিনের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও এবং ক্রয়-বিক্রয় পরিত্যাগ করো।”
— (সূরা জুমা: ৯)

অনেকে প্রথম আজানের পরও দোকান, অফিস বা কাজ বন্ধ না করে দেরিতে মসজিদে যান— এটি একটি ভুল।

✅ করণীয়:

  • আজান শোনামাত্র সব কাজ বন্ধ করে মসজিদের দিকে রওনা দেওয়া
  • অফিস বা ব্যবসা স্থানে জুমার আগেই প্রস্তুতি নেওয়া

৪. খুতবা মনোযোগ দিয়ে না শোনা

খুতবার সময় মনোযোগ না দেওয়া, দৃষ্টি এদিক-ওদিক ঘোরানো, কথা বলা বা মোবাইল দেখা— সবই জুমার আদব পরিপন্থী। হাদিসে এসেছে:

“যে ব্যক্তি মনোযোগ দিয়ে খুতবা শুনলো, তার পূর্ববর্তী জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।”
— (মুসলিম: ১৮৭৩)

✅ করণীয়:

  • ইমামের খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা
  • কথা না বলা, নড়াচড়া না করা
  • মোবাইল সাইলেন্ট করে রাখা

৫. খুতবার সময় অন্যকে চুপ করতে বলা

খুতবার সময় এমনকি কাউকে “চুপ থাকো” বলাটাও অনুচিত। রাসুল (সা.) বলেছেন:

“যখন ইমাম খুতবা দিচ্ছেন, তখন কেউ যদি পাশের ব্যক্তিকে ‘চুপ থাকো’ বলে, তাহলে সে অনর্থক কথা বললো।”
— (বুখারি: ৯৩৪; মুসলিম: ৮৫১)

✅ করণীয়:

  • সম্পূর্ণ নীরবতা বজায় রাখা
  • খুতবার সময় চোখ, কান ও মন সক্রিয় রাখা

শেষ কথা

জুমার দিন ও তার ইবাদত আমাদের জীবনে বিশেষ গুরুত্ব রাখে। আসুন, আমরা এই পবিত্র দিনের আদব ও নিয়মকানুন মেনে চলি, ভুলগুলো শুধরে নিই এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথকে সুগম করি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *