রাঙ্গুনিয়া কোদালা চা বাগান

প্রতিবেদন: সুমন বড়ুয়া

কর্নফুলী নদীর তীর ঘেষে অবস্থিত সবুজ পাহাড় আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সমৃদ্ধ রাঙ্গুনিয়ার কোদালা চা বাগানটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে জনপ্রিয়তা অর্জন করছে যুগ যুগ ধরে। ১৮৯৪ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে কোদালা চা বাগান দেশের প্রথম চা বাগান হিসেবে পরিচিত। চা শ্রমিকদের কর্মতৎপরতা, পাখির কিচিরমিচির শব্দ এবং ব্রিটিশ বাংলোর সৌন্দর্য দেখতে গ্রীষ্ম, শীতে ও বর্ষায় প্রতিদিন ছুটছে পর্যাটকরা। বিভিন্ন কারনেও এই বাগানে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও এবার লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

জানা যায়, চট্টগ্রাম শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার এবং রাঙ্গুনিয়া উপজেলা সদর থেকে ১০ কিলোমিটার দক্ষিণাংশে কর্ণফুলি নদীর তীরে কোদালা চা বাগানের অবস্থান করছে। বৃটিশরা কর্ণফুলি নদী দিয়ে আসা যাওয়ার সময় কোদালা চা বাগানের বির্স্তীণ জায়গা দেখে চা বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এরপর ১৮২৮ সালে জায়গাটা লিজ নেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে ১৮৯৪ সালে চা বাগানটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৭৬ সালে তৎকালীন সরকার ব্যক্তি মালিকানায় লিজ দিয়ে চা-বাগানগুলো ছেড়ে দেন। এরপর থেকে দীর্ঘদিন কোদালা চা-বাগান লোকসানের কবলে পড়ে। পরে ১৯৯৩ সালে প্লান্টাস বাংলাদেশ থেকে আনোয়ার গ্রুপ চা-বাগানটি লিজ নিয়ে নেয়। আনোয়ার গ্রুপও লাভের মুখ দেখেনি। ফলে ২০০৪ সালে ৭ অক্টোবর আনুষ্ঠানিকভাবে ব্র্যাক কোদালা চা বাগানের লিজ নেয়। তারা ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত এটি পরিচালনা করে সিটি গ্রুপের কাছে বিক্রি করে দেয় ব্রাক। চা বাগান কর্তৃপক্ষ জানান, কোদালা চা বাগানের ২ হাজার ৪৮৫ একরজায়গার মধ্যে বর্তমানে ৮৭২ একর জায়গায় চা এবং ৯০০ একর জমিতে রাবার চাষ করা হয়েছে। এছাড়াও চা ও রাবার বাগানের পাশাপাশি নানা প্রজাতির গাছের চারা রোপন করে বনায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে আগর চাষ, নিম ও মুলি বাঁশের চাষ। সূত্রে আরও জানা যায়, দেশের শীর্ষ স্থানীয় চা বাগানগুলোর মধ্যে অন্যতম কোদালা চা বাগান। তবে এবার সিটি গ্রুপের তত্ত্বাবধানে কোদালা চা বাগানের উৎপাদন লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ায় দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সংশ্লিষ্টরা। এজন্য বাগানের ৬৫০ জন রেজিস্টার্ড এবং ২৮৮ জন মাস্টার রোলে কর্মরত শ্রমিকদের সাথে বাগানের উন্নয়নে একাট্টা হয়ে নব উদ্যোমে কাজ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়। এই ব্যাপারে কোদালা চা বাগানের ব্যবস্থাপক বলেন, ‘গেল বছর বৃষ্টিপাতের অভাবে চা পাতার উৎপাদন আশানুরূপ হয়নি।

তবে এবার ২০২২-২৩ সালে ৭ লাখ ২৫ হাজার কেজি চা পাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। আশাকরি সিটি গ্রুপের সার্বিক তত্ত্বাবধানে চা পাতার উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। এজন্য বাগান উন্নয়নের জন্য যা যা করা দরকার সব করা হচ্ছে। শ্রমিক-মালিক এক হয়ে চা বাগানের প্রতিদিনের কর্মকা- সম্পন্ন করে কোদালা চা বাগানকে একটি লাভজনক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে আমরা চলমান গতিতে ছুটে চলেছি। এদিকে কোদালা চা বাগানের সৌন্দর্য উপভোগে প্রতিদিন দূরদুরান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় করছেন। সবুজ বনায়ন ও চা পাতার গাছে ঘেরা এই কোদালা চা বাগান অপূর্ব সৌন্দর্য যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

রাঙ্গুনিয়ার গোডাউন দিয়ে ও নদী পথে মরিয়মনগর হয়ে কর্ণফুলি নদী পাড় হলেই চোখে পড়বে সবুজের গালিচা বিছানো কোদালা চা বাগান। চা বাগানের ভেতরে থাকা দৃষ্টিনন্দন ব্রিটিশ বাংলো আর পাখির কিচিরমিচির শব্দ মুহূর্তের মধ্যে চাঙ্গা করে তুলবে বিনোদন প্রেমিকদের। ক্লান্তিময় জীবনে আনন্দের ছোঁয়া নিতে ঘুরে আসুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে অপরূপ কোদালা চা বাগানে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *