ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় আবারও ভূকম্পন অনুভূত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ৩.৬ মাত্রার এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর ঘোড়াশাল এলাকায়। স্বল্পমাত্রার হলেও রাজধানীতে সাম্প্রতিক ভূকম্পনের ধারাবাহিকতার কারণে উদ্বেগ বাড়ছে ভূতাত্ত্বিকদের মধ্যে।
এর আগে ২১ নভেম্বর ৫.৫ মাত্রার শক্তিশালী কম্পনে ঢাকা ও আশপাশে বহু ভবন ফাটল ধরে এবং তিন জেলায় প্রাণহানি ঘটে। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের লেমন্ট–ডোহের্টি আর্থ অবজারভেটরি একেই গত দুই দশকের অন্যতম শক্তিশালী ভূমিকম্প হিসেবে উল্লেখ করেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার প্রকৃত ভূমিকম্প-ঝুঁকি আরও গভীর। রাজধানী থেকে মাত্র ৬০ কিলোমিটার দূরে মধুপুর ফল্ট জোন বহু বছর ধরে সক্রিয় রয়েছে—যা ৭ মাত্রা বা তার বেশি শক্তির ভূমিকম্প ঘটানোর সক্ষমতা রাখে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রুবাইয়াত কবীর বলেন, “ঢাকার ভেতরে ৮–৯ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টির মতো বড় কোনো ফল্টলাইন নেই। তবে মধুপুর অঞ্চলে বড় ধরনের কম্পন ঘটলে নতুন ভরাট করা এলাকাগুলোতে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।”
তার মতে, বড় কম্পন হলে শহরের অনেক অংশের ভূপ্রকৃতি পরিবর্তন হওয়া পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে।
### *ঢাকার যে ১৫টি এলাকা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ*
নানা গবেষণায় দেখা গেছে, ভবনের বয়স, মাটির ধরন, অনিয়ন্ত্রিত ভরাট ও ঘনবসতির কারণে ঢাকার যেসব এলাকা বড় ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছে, সেগুলো হলো—
*সবুজবাগ, কামরাঙ্গীরচর, হাজারীবাগ, কাফরুল, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর, গাবতলী, উত্তরা, সূত্রাপুর, শ্যামপুর, মানিকদী, মোহাম্মদপুর, পল্লবী, খিলগাঁও ও বাড্ডা।*
পুরান ঢাকার মাটি তুলনামূলকভাবে শক্ত হলেও সেখানে সমস্যার মূল কারণ—অত্যন্ত পুরোনো ও দুর্বল কাঠামোর অসংখ্য ভবন।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র সাধারণ সম্পাদক শরিফ জামিল বলেন,
“ঢাকার চারপাশের জলাভূমি রক্ষায় আন্দোলন হলেও বাস্তবে সবচেয়ে বেশি দখল–ভরাট হয়েছে ঠিক সেই এলাকাগুলো। বড় ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতির প্রধান কারণ হবে প্রকৃতির নয়, মানুষের অব্যবস্থাপনা।”
বিশেষজ্ঞদের অভিমত—প্রতিনিয়ত ভরাট হওয়া নিম্নাঞ্চল, অপরিকল্পিত নগরায়ন, অপর্যাপ্ত ভবন পরীক্ষা এবং ভূমিকম্প সহনশীল অবকাঠামোর অভাব ঢাকাকে একটি বড় বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।