বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ কার্যকর আজ মধ্যরাত থেকে

ব্যবসায়ী শিল্পপতিসহ বন্দর ব্যবহারকারীদের চরম আপত্তি এবং বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলোর সারচার্জ ঘোষণার মধ্যে আজ মধ্যরাত থেকে কার্যকর হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দরের বর্ধিত ট্যারিফ। বন্দর ব্যবহারকারীরা বর্ধিত ট্যারিফ অন্তত এক বছরের জন্য স্থগিত রাখার দাবি জানিয়ে আসছে। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্যারিফ বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন জারির পর এক মাস স্থগিত রাখে। আজ মধ্যরাতে সেই এক মাসের মেয়াদ শেষে বর্ধিত ট্যারিফ কার্যকর হচ্ছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ট্যারিফ গড়ে ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি করার কথা বললেও ব্যবহারকারীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছে, কোন কোন ক্ষেত্রে ট্যারিফ ৪শ’ গুণও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিংসহ আনুষাঙ্গিক মোট ৫২টি খাতে ট্যারিফ আদায় হয়। এর মধ্যে ২৩টি খাতে সরাসরি নতুন হারে ট্যারিফ কার্যকর করা হচ্ছে। গেজেট অনুযায়ী ভাড়া, টোল, ফি ও মাশুল ডলারের বিনিময়মূল্যের ভিত্তিতে আদায় করা হবে। প্রতি ডলারের হার ধরা হয়েছে ১২২ টাকা। ডলারের বিনিময় হার বাড়লে ট্যারিফও স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাড়বে বলেও বন্দর সূত্র জানিয়েছে।

বর্ধিত ট্যারিফে কন্টেনার হ্যান্ডলিং খাতে সবচেয়ে বেশি মাশুল নির্ধারণ করা হয়। প্রতি ২০ ফুটি কন্টেনারের ট্যারিফ ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ২৪৩ টাকা, যা আগে ছিল ১১ হাজার ৮৪৯ টাকা। এতে গড়ে প্রায় ৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। আমদানি কন্টেনারে ৫ হাজার ৭২০ টাকা এবং রপ্তানি কন্টেনারে ৩ হাজার ৪৫ টাকা বেশি দিতে হবে। এ ছাড়া প্রতিটি কন্টেনার ওঠানামার ক্ষেত্রেও প্রায় ৩ হাজার টাকা বাড়তি খরচ যুক্ত হবে। ফলে সামগ্রিকভাবে কন্টেনার হ্যান্ডলিং খাতে ২৫ থেকে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ বৃদ্ধি পাবে বলে সূত্র জানায়।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে জারি করা প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, বন্দরের বিভিন্ন সেবাখাতে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত মাশুল বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। ওইদিন থেকে তা কার্যকর করার কথা উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে জারি করা হয়। এতে বন্দর ব্যবহারকারীরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখায়। তারা তাদের সাথে আলোচনা চূড়ান্ত না করে এভাবে হুট করে ট্যারিফ বাড়ানোর কারণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে। পরবর্তীতে নৌ–পরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন গত ২০ সেপ্টেম্বর তা এক মাসের জন্য স্থগিত রাখার নির্দেশনা দিলে ট্যারিফ আদায় স্থগিত করা হয়।

দিন কয়েক আগে চট্টগ্রাম বন্দরের অর্থ ও হিসাবরক্ষণ বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুস শাকুরের সই করা এক নোটিশে ১৫ অক্টোবর থেকে বর্ধিত ট্যারিফ আদায়ের ব্যাপারটি জানানো হয়। এতে বলা হয় যে, ১৪ অক্টোবর রাত ১২টার পর চট্টগ্রাম বন্দরে আসা সব জাহাজ, কন্টেনার ও কার্গো বিল নতুন রেট অনুযায়ী নেওয়া হবে। একইভাবে সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধিসহ সব বন্দর ব্যবহারকারী বর্ধিত হারে মাশুল পরিশোধ করবেন। তালিকাভুক্ত সব শিপিং এজেন্টকে তফসিলি ব্যাংকে তাদের হিসাব নম্বরে বর্ধিত হারে যথাযথ অর্থের সংস্থান রেখে আসা জাহাজের ছাড়পত্র (এনওসি) নিতে বলা হয়েছে।

বর্ধিত ট্যারিফ এখনই আদায় না করে অন্ততঃ এক বছর সময় দেয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন ব্যবসায়ী শিল্পপতিসহ বন্দর ব্যবহারকারীরা। গত রোববার চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের একটি বড় সমাবেশ থেকেও এখন বর্ধিত ট্যারিফ আদায় না করার দাবি জানানো হয়। অপরদিকে বাংলাদেশের পণ্য আমদানি রপ্তানির সাথে জড়িত বিদেশি শিপিং কোম্পানিগুলো সারচার্জ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ফ্রান্সভিত্তিক শীর্ষস্থানীয় শিপিং কোম্পানি সিএমএ সিজিএম এবং সুইজারল্যান্ডের জেনেভাভিত্তিক শিপিং কোম্পানি এমএসসি বাংলাদেশের আমদানি রপ্তানি পণ্য পরিবহনের উপর সারচার্জ আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।

হুট করে এতো বিপুল পরিমানে ট্যারিফ বৃদ্ধি দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করে ব্যবসায়ী শিল্পপতিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, শিপিং কোম্পানিগুলো যে সারচার্জ আরোপ করছে তার যোগান দেশের সাধারণ ভোক্তাদেরই দিতে হবে। ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, আমরা ট্যারিফ বৃদ্ধির বিরোধীতা করছি না। তবে একসাথে এতো বিপুল ট্যারিফ না বাড়িয়ে ক্রমান্বয়ে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলাম। যাতে একটি সহনীয় অবস্থা থাকে। এখনকার ট্যারিফ হার ‘অসহনীয়’ বলেও তারা মন্তব্য করেছেন। তারা বলেন, আমরা এক বছর সময় চেয়েছিলাম। কিন্তু বন্দর কর্তৃপক্ষ সেই সময় না দিয়ে ট্যারিফ বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে অটল রয়েছে। অবশ্য চট্টগ্রাম বন্দরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, একমাস স্থগিত থাকার পর আজ মধ্যরাত থেকে ট্যারিফ কার্যকর হবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ ব্যয় সামলানোর জন্য ট্যারিফ বাড়াতে বাধ্য হয়েছে বলেও তারা উল্লেখ করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *