মহাখালীর সাত তলা বাজারে জুমার নামাজের পর পর বাজার করতে এসেছিলেন সাহেব আলী নামের একজন। পেশায় তিনি ভ্যানচালক। পাঙাশ মাছ নিয়ে দরদাম করে গজরাতে গজরাতে মাছ বাজার থেকে বেরোনোর সময় তার সঙ্গে দেখা।
উত্তেজিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পাঙাশ মাছ এডি চাষের। তিন দিন আগে নিছিলাম ১৭০ টেকা কইরা। এখন ২০০ টেকা চাইতাছে। কিনলাম না তোর মাছ!
“যেই দাম জিনিসপত্রের! দুই-চাইরটা জিনিসের দাম কম। বাকি সব কিছুরই তো ম্যালা দাম। বাজারের লগে তাল মিলাইতেই তো কষ্ট হয়া যাইতাছে।”
বহুদিন থেকে চড়া সবজির দাম হঠাৎ হঠাৎ বেড়ে যায়।
শুক্রবার ছুটির দিনে ঢাকার মহাখালী, সাত তলা ও নিকেতন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির বাজারে উত্তাপ কমেনি। সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে মাছের বাড়তি দাম। বিক্রেতারা বলছেন, দুর্গাপূজার আগে কিছুটা বেড়েছে মাছের দাম।
এসব বাজারে ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতোই অল্প কিছু বাদে প্রায় সব সবজির দামই ৮০-১২০ টাকা। গ্রীষ্মকালীন সবজির মধ্যে কাঁকরোল, ঝিঙা, কচুর লতি, পটল, চিচিঙ্গা, ধুন্দুল, ঢেঁড়স ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর, করলা, বরবটি, বেগুন প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারে সবজি কিনছিলেন শহীদুল ইসলাম নামের একজন বেসরকারি চাকরিজীবী।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সবজির দামটা অনেকদিন ধরেই চড়া বাজারে। এরকম সময়ে সাধারণত সবজির দাম কমে আসে। এবছর এখনো কমার নাম নেই। সরকারের উচিত এদিকে মনোযোগ দেওয়া।”
শীতের এখনো অনেকটা সময় বাকি থাকলেও বাজারে কিছু শীতকালীন সবজিও মিলছে। এর মধ্যে শিম মানভেদে ২২০ থেকে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে আকারভেদে প্রতিটি লাউ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। ছোট আকারের ফুলকপির দেখাও মিলছে কিছু দোকানে; যার প্রতিটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
মানভেদে প্রতি কেজি পাকা টমেটো ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা, কাঁচামরিচ কেজিতে ৪০ টাকা বেড়ে কেজি ২০০ টাকা, গাজর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, দেশি শসা ৮০ থেকে ৯০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
এছাড়া, লেবুর হালি ১০ টাকা বেড়ে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, ধনেপাতা ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।

আর সবজির মধ্যে ‘কমদামের খ্যাতি’ পাওয়া কাঁচা কলা হালি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, চাল কুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা প্রতিটি আর মিষ্টি কুমড়া মিলছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে।
বাজারগুলোতে লাল শাক ২৫ টাকা প্রতি আঁটি, লাউ শাক ৪০ টাকা, কলমি শাক ১৫ টাকা, পুঁই শাক ৪০ থেকে ৫০ টাকা ও ডাটা শাক দুই আঁটি ৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, নাপা আর ঢেঁকি শাক মিলছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা প্রতি আঁটি।
সাত তলা বাজারের সবজি বিক্রেতা সেলিনা বেগম বলেন, “শীতকালের সবজি ঢুকতে শুরু করলেই দাম কমবে। বর্তমানে দামটা একটু বেশি। আমাদেরও বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে।”
অনেকদিন ধরেই কম দামে বিক্রি হওয়া আলু আগের মতোই ২০ থেকে ২৫ টাকা প্রতি কেজি, আর দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় ঠেকেছে। তবে, এক পাল্লা (পাঁচ কেজি) কিনলে ৭৫ টাকাই রাখছেন অনেক বিক্রেতা।
মাছের দামও বাড়তি
বাজারে গেল সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও ছোট সাইজের (১৫০ থেকে ৫০০ গ্রাম) ইলিশ মাছের সরবরাহ বেশি দেখা গেছে। তবে, দাম কিন্তু যথারীতি চড়া। তুলনামূলক কম দামে মিলছে একেবারে ছোট আকৃতির ইলিশ।
সাত তলা বাজারে মাছ বিক্রেতা মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ইলিশের কেনা বেশি। বরিশাল থেকে আমরা এই মাছ আনছি। কয়দিন পর সিজন শেষ। সামনে পূজা। তাই দামটা বেশি। তবে, ছোট সাইজেরগুলা দাম কম।”
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজি থেকে কিছুটা বেশি ওজনের ইলিশের কেজি দুই হাজার ৩০০ টাকা। আর ৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি ১ হাজার ৮০০ টাকা, ২০০-২৫০ গ্রাম ওজনের ইলিশের কেজি বাজারভেদে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা রাখা হচ্ছে।
এর চেয়ে ছোট আকৃতির মাছ মিলছে ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। তবে, ক্রেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন বরফে রাখা এসব ছোট আকৃতির মাছে ইলিশের আসল স্বাদ নেই।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক কেজির বেশি ওজনের কাতল প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, এর চেয়ে কম ওজনের কাতলের কেজি ২৮০ টাকা। রুই এক কেজির বেশি ওজনের ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা, তার কম ২৬০ থেকে ২৮০ টাকা।

আর, পাঙ্গাস ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা, সিলভার কার্প ১৬০ টাকা, হাইব্রিড তেলাপিয়া ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা এবং আইড় ৮০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বড় আকারের পাবদা মাছের কেজি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, চিংড়ি আকারভেদে ৬৮০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, বাইম আকারভেদে ৬০০ থেকে ১২০০ টাকা, চাষের কই ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা, শোল ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা, মলা মাছ ৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, ট্যাংরা ৮০০ টাকা, বড় বেলে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা, ছোট বেলে ৮০০ টাকা, সরপুঁটি ২২০ টাকা, মাঝারি আকারের রূপচাঁদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
মহাখালী কাঁচাবাজারে মাছ কিনতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী সুলতান আহমেদ বলেন, “গেল সপ্তাহে রুই মাছ নিয়েছিলাম ২৮০ করে; এক কেজি ৯০ গ্রাম ওজন ছিল। আজ বলছে, তিনশ’র কমে হবে না। মাছের দামটা একটু বাড়তিই।”
কেবল মাংস-মুরগির দাম স্থিতিশীল আছে বাজারে। ব্রয়লার মুরগির কেজি বাজারভেদে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩১০ থেকে বাজার ভেদে ৩২০ টাকা এবং লেয়ার ৩০০ টাকা রাখা হচ্ছে।
গরু মাংস আগের মতোই ৭২০ থেকে ৭৮০ টাকা, খাসি ১ হাজার ২০০ টাকা কেজি।