জুবায়েদ হত্যার পরিকল্পনা এক মাস আগের, ছাত্রীর নির্দেশে

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইনকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল আরও এক মাস আগে। এবং হত্যার ওই ছক আঁটেন জুবায়েদের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী এবং তার প্রেমিক দুজনে মিলে। জুবায়েদ হত্যা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের এই তথ্য জানিয়েছেন বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেছেন, হত্যার দিন গত রোববার মেয়েটির প্রেমিকের সঙ্গে তার দুইজন বন্ধুও ছিলেন। খবর বিডি/বাংলানিউজের।

তারা হত্যার জন্য নতুন দুটি সুইচ গিয়ার চাকু কিনে আনে। এরপর ছাত্রীর প্রেমিক এলোপাতাড়ি ছুরি চালায়। জুবায়েদকে হত্যার নির্দেশ দেয় তার ছাত্রী নিজেই। বছর খানেক ধরে জুবায়েদ পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় তার ছাত্রীকে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান পড়াতেন। রোববার বিকাল পৌনে ৫টার দিকে ওই ছাত্রীর বাসার নিচে ছুরিকাঘাতের শিকার হন জুবায়েদ। এ অবস্থাতেই ওই বাসার তিনতলা পর্যন্ত উঠতেই তার মৃত্যু হয়। জুবায়েদকে তার ছাত্রী ‘পছন্দ করতেন’ জানিয়ে পুলিশ আগেই বলেছিল, সেই ক্ষোভে ওই ছাত্রীর ‘প্রেমিক’ (আটক কলেজছাত্র) তার বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে জুবায়েদকে হত্যা করে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবার আর ধারণার কথা নয়, ওসি রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, এটা জুবায়েদের ছাত্রী ও তার বয়ফ্রেন্ডের পরিকল্পিত হত্যা’।

তিনি বলেন, ওই কলেজছাত্রের সঙ্গে মেয়েটির ৯ বছরের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মাঝে আবার মেয়েটি জুবায়েদের উপর দুর্বল হয়ে পড়ে। এ সময় মেয়েটি তার প্রেমিককে না করে দেয় এবং সে জুবায়েদকে পছন্দ করে বলে জানায়। কিন্তু কিছুদিন পরেই তার বয়ফ্রেন্ডকে জানায় যে, জুবায়েদকে আর ভালো লাগে না। তখন জুবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করে দুজনে মিলে। প্রাথমিকভাবে জুবায়েদকে হত্যার এই পরিকল্পনা মেয়েটি স্বীকার করছিল না জানিয়ে ওসি রফিকুল ইসলাম বলেন, পরে মেয়েটি ও কলেজছাত্রকে মুখোমুখি করলে সত্য জানায় সে। জুবায়েদকে কীভাবে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া যায় গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই পরিকল্পনা করে তারা। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেছেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত মেয়েটিসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে। ওই কলেজছাত্র পুরান ঢাকার শেখ বোরহান উদ্দীন কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রথম বর্ষে পড়ে। আর মেয়েটি পড়ে ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে দ্বিতীয় বর্ষে। পাশাপাশি বাড়িতে তাদের বেড়ে ওঠা ছোট থেকে।

জুবায়েদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৯–২০ শিক্ষাবর্ষের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ছিলেন। এছাড়া কুমিল্লা জেলা ছাত্র কল্যাণ সংসদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।

হত্যায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি তিন আসামির : এদিকে জোবায়েদ হোসেন হত্যা মামলায় তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের তিনজন বিচারক ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় পৃথকভাবে এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

তিন আসামি হলেন– মো. মাহির রহমান (১৯), বার্জিস শাবনাম বর্ষা (১৯) ও ফারদীন আহম্মেদ আয়লান (২০)। বর্ষার গৃহশিক্ষক ছিলেন নিহত জোবায়েদ, মাহির তার পুরোনো প্রেমিক। আর আয়লান মাহিরের বন্ধু। এছাড়া প্রিতম চন্দ্র দাস নামে মাহিরের আরেক বন্ধু সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি দেন। এদিন বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে তাদের বংশাল থানা থেকে সংলগ্ন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আনা হয়। এরপর তাদের আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়।

এ সময় তারা স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হওয়ায় তা রেকর্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বংশাল থানার উপপরিদর্শক আশরাফ হোসেন। সেই জবানবন্দি রেকর্ডের জন্য মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে বিচারকের খাসকামরায় নেওয়া হয় তাদের। এরপর ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম মিয়া আসামি বর্ষার, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান আসামি মো. মাহির রহমান এবং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জুয়েল রানা আসামি ফারদীন আহম্মেদ আয়লানের জবানবন্দি রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. হাসিবুজ্জামানের আদালতে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন প্রিতম। পরে তাকে পরিবারের হেফাজতে পাঠানো হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *