২০১৭ সালের শেষ দিকে ফেইসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে গঙ্গাচড়ার ঠাকুরপাড়ায় হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিল; সাত বছর পর হামলার হল আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামে।

হামলার পর আলদাদপুর বালাপাড়া গ্রামের বেশ কিছু পরিবার বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মঙ্গলবার বাড়ি ফিরলেও তাদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ।
এলাকার পরিস্থিতি জানতে চাইলে গঙ্গাচড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান মৃধা বলেন, “এখান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের ঘরবাড়ি মেরামতের কাজ শুরু করেছে। প্রশাসন ভুক্তভোগীদের পাশে আছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে।”
যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত
শনিবার বিকালের দিকে হঠাৎ করেই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে, গ্রামের ১৭ বছরের এক কিশোর ফেইসবুকে মুসলমানদের মহানবী হয়রত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করেছেন। সেই কিশোর একটি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্র; তার বাবা এলাকার পল্লী চিকিৎসক।
এক প্রতিবেশী জানান, ঘটনাটি জানার পরপরই পরিবার সেই কিশোরকে নিয়ে থানায় যায়। তখন পুলিশ তাকে হেফাজতে নেয়। তারপরই কিছু লোক এসে হামলা চালায়।
ওই প্রতিবেশী বলছিলেন, কেউ কিছু বোঝার আগেই শনিবার রাত ৮টার দিকে কিছু লোক এসে হামলা শুরু করে। তারা ওই কিশোরের বাড়ি মনে করে প্রথমে তার চাচার বাড়িতে হামলা করে। পরে সেখানকার আরও কয়েকটি বাড়িতে হামলা চালায়।
সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে গ্রামের বাসিন্দা অতুল রায় বলেন, “সন্ধ্যার দিকে পুলিশ এক কিশোরকে আটক করে নিয়ে যায়। এরপর পাশের এলাকার একদল লোক হাতে লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে স্লোগান দিতে থাকে। এ সময় গ্রামের লোকজন ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যান। পরে ওই কিশোরের বাড়ি মনে করে বিক্ষুব্ধ লোকজন অন্য একজনের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর চালায়।”
সেদিন রাতের হামলায় সন্ধ্যা রানীর বাড়িঘরও ভাঙচুর করা হয়। হামলার পর তারা বাড়ি ছেড়ে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবার সকালে আবার ফিরে এসেছেন।

বাড়ির উঠানে বসে কথা বলছিলেন সন্ধ্যা রানী। তিনি বলেন, “দাদা, হামরা তো কিছুই কইতে পারি না। শনিবারের দিন হামরা শুননো যে, হামার মেম্বার ভাই আসি কইলো, ওই ছেলে (কিশোর) নবীক নিয়ে ফেইসবুকত কী যেন লিখছে। ওকে থানায় নিয়ে যাওয়া লাগবে। তারপর রাত ৮টার দিকে লোকজন হামার বাড়িঘর ভাঙিয়ে দিয়ে গেল।”