খাগড়াছড়ির অবরোধ পুরো প্রত্যাহারের ঘোষণা

খাগড়াছড়িতে মারমা কিশোরী ধর্ষণের অভিযোগ তুলে চারদিন ধরে যে অবরোধ পালন করা হয়, তা স্থগিতের পর এবার পুরো প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে জুম্ম ছাত্র-জনতা।

শনিবার সকালে জুম্ম ছাত্র-জনতার মিডিয়া সেলের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, “শহীদদের ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী পুণ্যকর্ম সম্পাদন, আহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি মানবিক সহায়তা প্রদান এবং প্রশাসনের আশ্বাসকে আংশিক বিবেচনায় রেখে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।”

জুম্ম ছাত্র-জনতা বলছে, খাগড়াছড়ি ও গুইমারার সাম্প্রতিক সহিংসতা নিয়ে গত ১ অক্টোবর জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক, পুলিশ ও গোয়েন্দা প্রতিনিধিদের সঙ্গে জুম্ম ছাত্র-জনতার দ্বিতীয় দফা আলোচনা হয়।

“বৈঠকে আমরা স্পষ্টভাবে আমাদের ৮ দফা দাবি, ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার এবং সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করি। আলোচনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে দাবিসমূহ বাস্তবায়নের আশ্বাস প্রদান করা হয় এবং শহীদ পরিবারের প্রতি নগদ পঞ্চাশ হাজার টাকা প্রদান করার বিষয়টি জানানো হয়।”

গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে খাগড়াছড়ির সদর উপজেলায় মারমা জাতিগোষ্ঠীর এক কিশোরীকে দলবেঁধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর থেকেই বিক্ষোভ ও উত্তেজনা চলছিল পার্বত্য এ জেলায়।

ঘটনার পরদিন সেনাবাহিনীর সহায়তায় এক তরুণকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। অভিযোগ ওঠা বাকিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে ২৫ সেপ্টেম্বর জেলায় আধাবেলা সড়ক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’।

এরপর ২৭ ভোর ৫টায় ‘জুম্ম-ছাত্র জনতা’র ব্যানারে অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি, খাগড়াছড়ি-রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি-সাজেক সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরদিন গুইমারায় ১৪৪ ধারা চলার মধ্যেই সহিংসতায় তিন পাহাড়ি নিহত হন।

গুইমারায় সংঘটিত ঘটনার তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। টানা চারদিন অবরোধ চলার পর ৩০ সেপ্টেম্বর রাতে তা ৫ অক্টোবর পর্যন্ত স্থগিত ঘোষণা করে জুম্ম ছাত্র-জনতা।

ওইদিনই চিকিৎসক জানান, মেডিকেল পরীক্ষায় কিশোরীর শরীরে ধর্ষণের আলামত মেলেনি।

এদিকে খাগড়াছড়ির গুইমারা ও সদর উপজেলায় সহিংসতার ঘটনায় ১ অক্টোবর তিনটি মামলা করে পুলিশ। এসব মামলায় হাজারের বেশি অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

জুম্ম ছাত্র-জনতার আট দফা দাবির মধ্যে রয়েছে—

  • আলোচনার সময়কাল থেকে শুরু করে পরবর্তী পর্যন্ত যেকোনো ধরনের হামলা, গ্রেপ্তার, লাঠিচার্জ বা ‘সাম্প্রদায়িক আক্রমণ’ বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রশাসন আইনগতভাবে বাধ্য থাকবে।
  • ধর্ষণ মামলার বাকি দুই আসামিকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার ব্যক্তির দ্রুত বিচার সম্পন্ন করতে হবে; ভুক্তভোগীকে যথাযথ আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও পূর্ণাঙ্গ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি ও গুইমারায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ড, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও গুলিবর্ষণের ঘটনার বিষয়ে স্বতন্ত্র, স্বাধীন এবং বিচার বিভাগীয় তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে। এ তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ দশ দিনের মধ্যে কার্যকর করতে হবে।
  • নিরীহ ও নিরস্ত্র জনতার ওপর সংঘটিত হামলা ও অগ্নিসংযোগে সৃষ্ট ক্ষতির পূর্ণ ক্ষতিপূরণ রাষ্ট্রীয়ভাবে নিশ্চিত করতে হবে; আহতদের সম্পূর্ণ চিকিৎসা-ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করতে হবে।
  • আন্দোলনের সময় গ্রেপ্তারদের অবিলম্বে ও নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে; ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর সংঘটিত হামলার বিষয়ে স্বচ্ছ ও স্বতন্ত্র তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
  • প্রতি নিহতের পরিবারকে ২০ লাখ টাকা, গুরুতর আহত প্রতিজনকে ১০ লাখ টাকা, সাধারণ আহত প্রতিজনকে ২ লাখ টাকা এবং বাড়ি- ঘর, দোকান-পাট ক্ষতিগ্রস্তদের ৫ লাখ টাকা করে দিতে হবে।
  • আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিবৃতিতে ‘জুম্ম ছাত্র-জনতা’ প্লাটফর্ম এবং অন্যতম সমন্বয়ক উক্যনু মারমাকে ইউপিডিএফ সংশ্লিষ্ট হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, সেই ‘ট্যাগ’ অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। একইসঙ্গে অনলাইনে পাহাড় সম্পর্কে যারা গুজব ও বিভ্রান্তিকর প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *