প্রতিদিনের মতো ক্লাস শেষে বিদ্যালয়ের দোলনায় দোল খাচ্ছিল চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়মান। হঠাৎ বিকট শব্দে যুদ্ধবিমান এসে বিধ্বস্ত হয় তার স্কুলে। বিধ্বস্ত বিমানের ফুয়েল এসে পড়ে আয়মানের পিঠ ও হাত-পায়ে।এতে আয়মানের শরীরের ৪০ শতাংশ দগ্ধ হয়। জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চার দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার না ফেরার দেশে চলে যায় ১০ বছরের আয়মান।রাত ৯টায় শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাসুদেবপুর গ্রামে জানাজা শেষে দাদার কবরের পাশে তাকে দাফন করা হয়।নিহত আয়মান ওই গ্রামের বাপ্পি হাওলাদার ও আয়েশা আক্তার কাকন দম্পতির মেয়ে। সে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
স্বজনরা জানান, বাপ্পি হাওলাদার ব্যবসার সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার উত্তরা দিয়াবাড়ি এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছেন। সোমবার দুপুরে আয়মানের ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ছিলেন মা আয়েশা। বিকালে মেয়ে ফিরল ঠিকি, তবে বাড়িতে নয় হাসপাতালে।কেননা বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান স্কুলে বিধ্বস্ত হয়ে দগ্ধ হয়েছে আয়মান। স্কুলের এক শিক্ষিকার মোবাইল থেকে আয়মানের বাবাকে জানানো হয় মেয়ের অসুস্থতার খবর। খবর পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়ে আয়েশা আক্তার।

চিকিৎসাধীন অবস্থায় আয়মান তার পরিবারকে ভয়াবহ সেই মুহূর্তটির বর্ণনা দিয়েছে। আয়মানের স্বজনরা সাংবাদিকদের জানান, প্রতিদিনের মতো ক্লাস শেষে স্কুলের দোলনায় দোল খাচ্ছিল আয়মান। ছুটির ঘণ্টা পড়লেই বাড়ি ফিরবে। এমন সময় হঠাৎ বিকট শব্দে একটি যুদ্ধবিমান এসে বিধ্বস্ত হয় তার সামনে। আয়মান পালানোর চেষ্টা করলে বিমানের গরম ফুয়েল এসে পড়ে তার শরীরে।এতে তার পিঠ ও হাত-পা ঝলসে যায়। দগ্ধ অবস্থায় আয়মান তার এক শিক্ষিকার কাছে গিয়ে মোবাইল থেকে পরিবারকে ঘটনাটি জানায়। খবর পেয়ে বাবা বাপ্পি হাওলাদার তাকে উদ্ধার করে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতাল এবং পরে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করান।সেখানে চার দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসার পর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আয়মান।তার মৃত্যুর খবর শরীয়তপুরে গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে এলাকাজুড়ে নেমে আসে শোকের ছায়া। শুক্রবার জুমার নামাজের পরে রাজধানীর উত্তরায় আয়মানের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরপর সেখান থেকে তার লাশ সন্ধ্যায় গ্রামের বাড়ি পৌঁছায়। রাত ৯টায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে আয়মানকে তার দাদা মাজেদ হাওলাদারের কবরের পাশে দাফন করা হয়।
আয়মানের প্রতিবেশী সিনহা জুয়ালিদ রাফি বলেন, “ছুটিতে আয়মান যখন বাড়িতে আসত, তখন আমাকে জড়িয়ে ধরত। খুব মিষ্টি করে কথা বলত সে। এজন্য সে সবার আদরের ছিল। এভাবে তার চলে যাওয়া কেউ মেনে নিতে পারছি না।”আয়মানের জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে মামা শামীম আহম্মেদ বলেন, “সাংবাদিকের মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টাকে জানাতে চাই, একজন প্রশিক্ষণরত পাইলট নির্দিষ্ট স্থান ব্যতীত কীভাবে জনবহুল স্থানে টেস্টিং করে? তদন্তের মাধ্যমে এটা জানতে চাই।
“এ রকম যদি করতে থাকে শুধু আমার ভাগ্নি না এমন অনেক আয়মান ভবিষ্যতে হারিয়ে যাবে। আমরা চাই না, এভাবে আর কোনো ফুলের মৃত্যু হোক।”মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান দুর্ঘটনায় আয়মানের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করেছেন ভেদরগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ মোজাহেরুল হক।