কক্সবাজার র্যাব-১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসানসহ তিন শতাধিক সদস্যকে বদলি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯ নভেম্বর ১৯৮ সদস্য এবং একই দিন আরেকটি প্রজ্ঞাপনে আরও ২০০ সদস্যকে বদলি করা হয়। এর পর ২৭ নভেম্বর তৃতীয় দফায় আরও ৭৪ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে। সব মিলিয়ে চারটি প্রজ্ঞাপনে সম্প্রতি বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের ছয় শতাধিক র্যাব সদস্য রদবদল হয়েছেন।
র্যাব সূত্র জানায়, এত সংখ্যক সদস্যের বদলি তিনটি কারণে হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নির্বাচনের আগে রুটিন দায়িত্বের অংশ হিসেবে রদবদল। এ ছাড়া প্রতিবছর নভেম্বরের দিকে র্যাব সদস্যদের এক ব্যাটালিয়ন থেকে অন্য ব্যাটালিয়নে পাঠানো হয়। কক্সবাজার থেকে বদলি হওয়া অধিকাংশ সদস্যকে এই দুই কারণে অন্য ব্যাটালিয়নে পাঠানো হয়।
তবে এর পাশাপাশি মাদক উদ্ধারের কারসাজি এবং এ-সংক্রান্ত মামলায় অনিয়মের অভিযোগে সেপ্টেম্বরে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি এরই মধ্যে কক্সবাজার পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য নিয়েছে। তদন্তকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ ধরনের দুটি অভিযানে অনিয়মের ঘটনায় অন্তত ১৫ জনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। রদবদলের তালিকায় তারাও রয়েছেন। চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে র্যাব।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাবের মুখপাত্র উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী সমকালকে বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে র্যাবে বড় ধরনের রদবদল করা হয়েছে। র্যাব-১৫ আমাদের সবচেয়ে বড় ব্যাটালিয়ন। তাই সেখান থেকে তিনশর মতো সদস্য বদলি করা হয়। নির্বাচন ছাড়াও প্রতিবছরের শেষের দিকে র্যাব সদস্যদের রদবদল হয়। কারণ এই সময় সন্তানদের পরীক্ষা শেষ হয়। সবাই যার যার পরিকল্পনা মতো নতুন এলাকায় পরিবার নিয়ে গুছিয়ে নিতে পারেন।
মাদক-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাবের মুখপাত্র বলেন, এ ধরনের একটি অভিযোগের তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে। মাদকের সঙ্গে তো একটি ব্যাটালিয়নের তিনশ সদস্যের সংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে না। এটা স্বাভাবিক কোনো বিষয়ও নয়। হয়তো নির্দিষ্ট যে অপারেশনের ব্যাপারে তদন্ত চলছে তারা সংশ্লিষ্ট থাকতে পারেন। মাদক-সংক্রান্ত ব্যাপারে অনিয়মে যাদের নাম আসবে তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
র্যাবের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, মাদক নিয়ে যে অভিযোগ এসেছে সেটি শুরু থেকে গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করেছে র্যাব।
স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ৭ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং পশ্চিম পাড়ায় অভিযানে দুই নারীকে ৮৯ হাজার ৬০০ পিস ইয়াবাসহ আটক দেখায় র্যাব-১৫। উদ্ধার দেখানো হয় আরও ১৬ লাখ ৭১ হাজার ৮৩০ টাকা। তবে অভিযোগ ওঠে, ইয়াবার সংখ্যা বেশি ছিল। প্রায় এক লাখ ১০ হাজার ইয়াবা গোপন করা হয়েছে। সেই সঙ্গে মামলায় স্থানীয় যুবদল নেতা হেলাল উদ্দিনের সহযোগী সেলিম উদ্দিনের নাম ‘ভুল তথ্য দিয়ে’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
স্থানীয় সাংবাদিক সেলিম উদ্দিন অভিযোগ করেন, মাদক কারবারি সেলিমকে রক্ষা করতে নামের মিল ব্যবহার করে তাকে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মামলায় জড়ানো হয়েছে। এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে নভেম্বরের শুরুতে র্যাব সদরদপ্তরের একটি তদন্ত দল সরেজমিন পরিদর্শনে যায় বলে স্থানীয়রা নিশ্চিত করেছেন।
এ ছাড়া ২৬ সেপ্টেম্বর টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা এলাকায় আরেকটি অভিযানে শীর্ষ মাদক কারবারি হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর আলমকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৫। তার কাছ থেকে ৭টি ইটের টুকরা ও দুটি কাঠের লাঠি উদ্ধার দেখায়। এই অস্বাভাবিক জব্দ তালিকা স্থানীয়ভাবে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়। ইয়াবা আত্মসাৎ, অনিয়মের ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করে র্যাব।
র্যাব-১৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল কামরুল হাসানকে সদরদপ্তরে সংযুক্ত করা হলে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ নেয়ামুল হালিম খান।