জুলাই সনদের আইনি ভিত্তির নিশ্চয়তা এবং সেই ভিত্তি দেওয়ার ধরন সম্পর্কে পূর্ব ধারণা না পেলে সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে থাকবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি–এনসিপি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর বাংলামোটরে অস্থায়ী কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন ঘোষণা দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। খবর বিডিনিউজের।
তিনি বলেন, আগামীকাল যে অনুষ্ঠানটা হতে যাচ্ছে সেটা হচ্ছে জুলাই সনদে স্বাক্ষর। যেই আইনি ভিত্তির কথা আমরা বলছি, সেই আদেশ জারির আগে এমন স্বাক্ষর কিন্তু একটি আনুষ্ঠানিকতা। জুলাই সনদ ইতোমধ্যেই প্রণীত হয়েছে। সেই সাংবিধানিক আদেশের ভিত্তিতে গণভোট হবে এবং পুরো প্রক্রিয়া আগাবে। জুলাই ঘোষণাপত্রেরও একটা আইনি ভিত্তি দেওয়ার কথা বলেছিলাম। সেটা হয়নি। জুলাই ঘোষণাপত্রের টেঙট বা শব্দচয়নেও একটা প্রতারণা করা হয়েছে। সেটা আমাদেরকে দেখানো হয়নি। আগে যেটা দেখানো হয়েছে ঘোষণাপত্র পাঠের সময় সেটা অনেক পরিবর্তিত ছিল এবং অনেক কমপ্রোমাইজ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে আমরা আরেকটা ঘটনার সাক্ষী হতে চাই না যেটার কোনো মিনিং নাই। আমরা আইনি ভিত্তি ও আদেশের নিশ্চিয়তা ছাড়া সনদে স্বাক্ষর করলে মূল্যহীন হবে। পরবর্তীতে সরকার কিসের ভিত্তিতে আদেশ দেবে সেই নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। এই বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে অংশীদার হব না।
নাহিদের বক্তব্যে নতুন সংবিধান প্রতিষ্ঠারও ইঙ্গিত পাওয়া যায়। তবে সেটা আগামী জাতীয় নির্বাচনের পর গঠিত গণপরিষদ থেকেই করা যেতে পারে বলে মনে করেন তিনি। গণঅভ্যুত্থানে আমাদের দাবি ছিল ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপ এবং নতুন বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা। কেবল সরকার পরিবর্তনের জন্য এই অভ্যুত্থান হয়নি। সেই সূত্র ধরেই আমরা নতুন বাংলাদেশ ও সংস্কারের কথা বলেছি। জুলাই সনদ তৈরির প্রসঙ্গ যখন আসল তখন আমরা বলেছিলাম এটার একটা আইনি ভিত্তি দিতে হবে। কতগুলো বিষয়ে আমরা ঐকমত্যে আসাই বড় কথা নয়। রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসলে সেটা বস্তবায়ন করবে সেই নিশ্চয়তা দিতে হবে। অতীতে নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানের পরেও দেখেছি এই ঘটনাগুলো ঘটেনি।
এনসিপির দাবিগুলো জুলাই ঘোষণাপত্র অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে সংবাদ সম্মেলন বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। সেগুলো হচ্ছে– ১. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের টেঙট এবং গণভোটের প্রশ্নটি চূড়ান্ত করে আগেই জনগণের কাছে প্রকাশ করতে হবে। ২. জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের খসড়া জনগণের সার্বভৌম অভিপ্রায়ের বহিঃপ্রকাশ হিসাবে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জারি করবেন। যেহেতু তিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থানের শক্তিতে সরকার গঠন করেছেন। সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের আলোকে আদালতের মতামত নেওয়া হলেও তার ক্ষমতার বৈধতার মূলে রয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান। ৩. জুলাই সনদের যে ৮৪টি বিষয় রয়েছে সেগুলো একত্রে গণভোটে যাবে। সেখানে নোট অব ডিসেন্টের আলাদা কোনো কার্যকারীতা থাকবে না। গণভোটের প্রশ্ন কী হবে আগেই রাজনৈতিক দলগুলোকে দেখাতে হবে। ৪. গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যদি জুলাই সনদে রায় দেয়, তবে নোট অব ডিসেন্ট এর কোনো কার্যকরীতা থাকবে না। গণভোটের রায় অনুযায়ী আগামী নির্বাচিত সংসদ তাদের উপর প্রদত্ত গাঠনিক ক্ষমতা কনস্টিটিউয়েন্ট পাওয়ার বলে সংবিধান সংস্কার করবে। সংস্কারকৃত সংবিধানের নাম হবে – বাংলাদেশ সংবিধান, ২০২৬।
নাহিদ ইসলাম বলেন, তাদের এই দাবিগুলোর বিষয়ে সরকারের অবস্থান পরিষ্কার হওয়ার পরই তবেই তারা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবেন। বিষয়গুলো জনগণের সামনে স্পষ্ট না করে জুলাই সনদে স্বাক্ষর আয়োজনটা জনগণের সঙ্গে একটা ছলছাতুরির মত হবে। আমরা জনগণকে অন্ধকারে রাখতে চাইনা। একটা বিষয় অস্পষ্ট রেখে সবাই এক জায়গায় এসে একটা বিশাল সেলিব্রেশনের মাধ্যমে স্বাক্ষর করার আয়োজনের কোনো অর্থ নেই, বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন, এনসিপি নেতা আরিফুল ইসলাম আদীব, আলাউদ্দিন মোহাম্মদ, সালেহ উদ্দিন সিফাত, জাভেদ রাসিন, সারোয়ার তুষার, আতাউল্লাহ, ফরিদুল হক উপস্থিত ছিলেন।