নির্দিষ্ট কিছু শরীরচর্চা আপনাকে সিঁড়ি ভেঙে ওপরে ওঠার সময় শ্বাসকষ্ট হওয়ার মতো অস্বস্তিকর অনুভূতি থেকে মুক্তি দিতে পারে। অবশ্য যদি তাতেও কাজ না হয়, তবে কিন্তু আপনাকে নিতে হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শও।
কেন সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে কষ্ট হয়;
সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে শ্বাসকষ্ট হওয়ার এই বিষয়টিকে চিকিৎসাবিদ্যার ভাষায় বলা হয় ‘এগজারশনাল ইনটলারেন্স’। একে বলা যেতে পারে, শারীরিক পরিশ্রমে অস্বস্তি বা পরিশ্রম সহ্য করতে না পারা।
চিকিৎসাবিদ্যা বলছে, যখন কেউ সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে যায়, তখন সাধারণত তাঁর পেশি শিথিল থাকে, হৃদস্পন্দন থাকে ধীর। অর্থাৎ তাঁর শরীর সিঁড়ি ভাঙার জন্য প্রস্তুত থাকে না। এই অবস্থায় যখন কেউ সিঁড়ি ভাঙতে শুরু করে, তাঁকে পর্যায়ক্রমে একেকবার একেক পায়ের ওপর ভর দিয়ে ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। এতে হৃদস্পন্দন অনেকটা ‘রকেটগতি’তে বেড়ে যায়। সঙ্গে যুক্ত হয় কার্ডিওভাসকুলার নানা কার্যক্রম। তখন শরীরে হঠাৎ অক্সিজেনের চাহিদা যায় বেড়ে। এই বাড়তি অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ না হলেই তৈরি হয় শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি।
সিঁড়ি ভাঙতে শ্বাসকষ্ট হওয়ার আরও একটি ব্যাখ্যা আছে। সেটি হলো, সিঁড়ি দিয়ে ওপরে উঠতে আমরা সাধারণত সেসব পেশি ব্যবহার করি, যেসব দ্রুত গতির জন্য ব্যবহৃত হয়। এসবকে বলে ফাস্ট-টুইচ পেশি। এ ছাড়া সিঁড়ি ভাঙতে আমাদের পশ্চাৎপেশিও ব্যবহার করতে হয়, যেসব পেশির ব্যায়াম সাধারণত করা হয় না।আমরা সাধারণত যেসব ব্যায়াম করি, সেসব কম গতির এবং এসব ব্যায়ামে উপকৃত হয় আমাদের স্লো-টুইচ পেশিগুলো। এসব পেশি সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে খুব একটা কাজে লাগে না। তাই সিঁড়ি ভাঙতে গেলে অ্যাথলেটদেরও শ্বাসকষ্ট হতে পারে। আর আমরা যাঁরা তেমন কোনো ব্যায়ামই করি না, তাঁদের তো শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিই হবে!
তাহলে সহজে সিঁড়ি ভাঙা যাবে কীভাবে:
যদি আপনাকে প্রায়ই সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়, তবে তা যথেষ্ট অস্বস্তিকর বটেই। সে ক্ষেত্রে সহজে সিঁড়ি বাইতে আপনি কিছু ব্যায়াম চেষ্টা করে দেখতে পারেন।ঘাবড়াবেন না, আপনাকে কোনো ভবনে ওঠার আগে আগে সিঁড়িঘরের সামনে বুকডন দিতে বলা হবে না; বা সিঁড়ির সামনে জগিংও করার পরামর্শ দেওয়া হবে না। তবে এ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়াতে আপনার দৈনন্দিন রুটিনের ভেতরেই কিছু ব্যায়াম যোগ করে নিতে হবে।
*দৌড়, লাফ বা দ্রুত গতি তুলতে সাহায্য করে, এ ধরনের ব্যায়াম আপনাকে হঠাৎ পরিশ্রমের অস্বস্তি কাটাতে সহায়তা করবে। পা ও পশ্চাৎপেশির ব্যায়াম আপনাকে এক পায়ে ভারসাম্য রাখার মতো কাজে সাহায্য করবে।
*এ ছাড়া সহনশীলতা বাড়াতে সাইকেল চালানো, পাহাড়ে ওঠা, দ্রুত হাঁটা, নৌকা বাওয়া ও সাঁতরানো খুব ভালো ব্যায়াম।
*আপনি যদি ধূমপান করেন, তবে তা-ও বাদ দিতে হবে। এমনকি যদি ই-সিগারেট টানেন, পরিত্যাগ করতে হবে সেটাও।
কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন:
বলা হয়, যদি কখনো চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি হয়েছে কি না—এমন সন্দেহের উদ্রেক হয়, তবে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই নিরাপদ। তবুও নিচের কিছু লক্ষণ চিকিৎসক ডাকার ক্ষেত্রে খেয়াল করতে পারেন।সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠতে যদি বুকে ব্যথা হয়, তবে আপনার হৃদরোগ বা ধমনিতে ব্লক আছে—এমন শঙ্কা তৈরি করে।যদি শ্বাসকষ্টের কারণে আপনার দৈনন্দিন কাজকর্ম ব্যাহত হয়, তবেও আপনার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। যেমন অল্প হাঁটতেও যদি আপনি হাঁপিয়ে যান কিংবা হালকা ব্যায়ামেও শ্বাসকষ্ট হয়, তাহলে চিকিৎসক বা কোনো থেরাপি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই নিরাপদ।