লিওনেল মেসির ফিটনেস রহস্য: ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শীর্ষে থাকার কৌশল

ফুটবলের কিংবদন্তি লিওনেল মেসি কখনোই সাধারণ জিম-অ্যাথলেটের মতো দেখায়নি। তবুও, ২০ বছরের বেশি সময় ধরে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন খেলায় দাপট দেখাতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। এখন যখন মেসি ভারতের GOAT (Greatest of All Time) ট্যুরে কলকাতা, হায়দরাবাদ, মুম্বাই ও দিল্লিতে ভক্তদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন, তখন তাঁর জীবনধারা নিয়ে ভক্তদের আগ্রহ তুঙ্গে। 
তারা শুধু মেসির কীর্তি উদযাপন করছেন না, জানতে চাইছেন কীভাবে তিনি দীর্ঘদিন ফুটবলের ডিমান্ড মেনে চলতে পেরেছেন। এর মূল উত্তর হলো শৃঙ্খলা, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণ।

খাবারের গুরুত্বে মোড়:

ক্যারিয়ারের শুরুতে মেসি খাবারের দিকে তেমন মন দেননি। তখন মিষ্টি, সোডা, পিজা, লাল মাংস ছিল তার দৈনন্দিন খাদ্যাভ্যাস। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিল শরীরের প্রতিক্রিয়া। ম্যাচের সময় বমি বমি ভাব এবং গ্যাস্ট্রিক সমস্যা দেখা দিল। ২০১৪ সালে তিনি ইতালীয় পুষ্টিবিদ জুলিয়ানো পোসারের সঙ্গে কাজ শুরু করেন। লক্ষ্য ছিল সরল: প্রদাহ কমানো এবং পেশীর দ্রুত পুনরুদ্ধার। মেসি নিজেই বলেছেন, ১৮ বছরে যা সহ্যযোগ্য, ২৭ বছরে তা আর কাজ করে না। এই বদল তাঁর দীর্ঘমেয়াদী ফিটনেসের ভিত্তি তৈরি করল।

ডায়েটের নিয়ম: সহজ কিন্তু শক্তিশালী

মেসির খাদ্য ভেজালমুক্ত এবং নিয়ন্ত্রিত। পোসারের পদ্ধতি পাঁচটি মূল উপাদানে কেন্দ্রিত: পানি, জলপাই তেল, পুরো শস্য, ফল এবং শাকসবজি। বাদাম ও বীজও গুরুত্বপূর্ণ।

মিষ্টি, পরিশোধিত আটা, প্রক্রিয়াজাত কার্বোহাইড্রেট, সোডা এবং জাঙ্ক ফুড সম্পূর্ণ এড়ানো হয়। মাংসের ব্যবহার সীমিত, তবে পুরোপুরি বাদ দেওয়া হয়নি। মাছ, মুরগি এবং প্রোটিন শেক থেকে প্রোটিন পান তিনি। তবে মূলত উদ্ভিদভিত্তিক খাবার তাঁর থালায় প্রাধান্য পায়।

ম্যাচের আগে খাদ্যাভ্যাস:
মেসি ম্যাচের প্রস্তুতিকে বিজ্ঞানসম্মত ভাবেন। দশ দিন আগে কার্বোহাইড্রেট কমান। এই সময় তিনটি প্রোটিন শেক এবং পর্যাপ্ত পানি পান করেন। ম্যাচের পাঁচ দিন আগে মসলা যুক্ত সবজি স্যুপ খাওয়া হয়। এক দিন আগে খাবার হালকা এবং সুষম হয়। খেলায় ৯০ মিনিট আগে মৌসুমি ফল যেমন কলা বা আপেল খেয়ে দ্রুত শক্তি নেন।

হাইড্রেশন ও ইয়েরবা ম্যাটে:

সোডা এড়িয়ে তিনি ইয়েরবা ম্যাটে পান করেন, যা ক্যাফেইন যোগায় কিন্তু চিনি কম রাখে। পানি খাওয়া নিয়মিত, যা ম্যাচের আগে, চলাকালীন এবং পরে বজায় থাকে।

প্রশিক্ষণ: নমনীয়তা আগে, শক্তি পরে

মেসির একটি কম আলোচিত অভ্যাস হলো স্ট্রেচিং। বার্সেলোনায় থাকাকালীন তিনি দৈনিক এক ঘণ্টা স্ট্রেচিং করতেন। জিমে ভারী ওজন নয়, হালকা ওজন ও বডি ওয়েট এক্সারসাইজে মনোযোগ। স্কোয়াট, লাঞ্জ, গ্লুট ব্রিজ এবং কোর এক্সারসাইজ মূলত স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য।

দ্রুততা:
মেসির যাদু থাকে তার গতি নিয়ন্ত্রণে। প্রশিক্ষণ লিনিয়ার এবং মাল্টি-ডিরেকশনাল স্পিডে বিভক্ত। লিনিয়ার স্পিড ড্রিলে ছোট দৌড়, হর্ডেল হপস, অ্যাক্সিলারেশন ওয়াল ড্রিল। মাল্টি-ডিরেকশনাল ড্রিলে ল্যাটেরাল বাউন্ড, শাফল ও মিরর ড্রিল। প্রতিটি সেশন শেষে কুলিং ডাউন এবং হাইড্রেশন নিশ্চিত। পুনরুদ্ধারকে প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে দেখা হয়, বিশ্রামের মতো নয়।

মেসির দীর্ঘায়ু এবং ধারাবাহিক উচ্চক্ষমতা শুধুমাত্র প্রতিভার ফল নয়, বরং সঠিক খাদ্য, নিয়মিত প্রশিক্ষণ এবং পুনরুদ্ধারের ওপর তাঁর সচেতন মনোযোগের ফল। এই জীবনধারা তাকে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ফুটবলের শীর্ষে রাখছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *