যে ৪টি উপায়ে হাঁটাকে শক্তিশালী ব্যায়ামে রূপান্তর করবেন

হাঁটাই সবচেয়ে সহজ ও কার্যকর ব্যায়াম, এমনটাই মত বিশেষজ্ঞদের। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যালাবামার সহকারী অধ্যাপক ও শারীরিক কার্যক্রম বিশেষজ্ঞ এলরয় আগুইয়ার বলেন, ‘হাঁটা সহজ, সাশ্রয়ী এবং এর জন্য বিশেষ সরঞ্জাম বা প্রশিক্ষণের দরকার নেই। তাই একে আমরা সেরা হিসেবে মানি।’তবে ব্যস্ত জীবনে পর্যাপ্ত হাঁটার সময় বের করা অনেকের জন্য কঠিন হতে পারে। অধ্যাপক আগুইয়ার পরামর্শ দিয়েছেন, কিছু কৌশল মানলে হাঁটার উপকারিতা আরও বাড়ানো সম্ভব। জেনে নিন চারটি কৌশল।

১. হাঁটার গতি বাড়ান

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতি সপ্তাহে হয় ১৫০ মিনিট মাঝারি গতিতে অথবা ৭৫ মিনিট উচ্চ গতিতে ব্যায়াম করা দরকার। চাইলে দুই গতি মিলিয়েও ব্যায়াম করা যেতে পারে। অর্থাৎ কিছু সময় মাঝারি গতিতে আবার কিছু সময় উচ্চ গতিতে করতে পারেন। কর্মব্যস্ত জীবনে সময়টা বের করা অনেক কঠিন একটা বিষয় বটে। যাঁরা সময় বের করতে পারেন না, তাঁরা হাঁটার গতি বাড়িয়ে বেশি উপকার পেতে পারেন।

এখন প্রশ্ন হলো, হাঁটার মাঝারি গতি কোনটি? এ বিষয়ে ব্রিটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিনের এক গবেষণা বলছে, ‘প্রতি মিনিটে ১০০ কদম হাঁটলে তাকে মাঝারি গতির ব্যায়াম ধরা হয়।’ সাধারণভাবে সুস্থসবল মানুষ প্রতি মিনিটে ১১০–১১৫ কদম হাঁটেন। ১৩০ কদমকে ধরা হয় উচ্চ গতির ব্যায়াম হিসেবে। ড. আগুইয়ার বলেন, ‘হাঁটার প্রকৃত উপকারিতা সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় মাঝারি গতি বা উচ্চ গতিতে হাঁটলে। হাঁটার গতি বাড়ালে ক্যালরি বেশি পোড়ে, হৃদ্‌যন্ত্র সুস্থ থাকে এবং শরীর থাকে ফিট।’

২. প্রতিদিন অন্তত ১ মিনিট উচ্চ গতিতে হাঁটুন

অধ্যাপক এলরয় আগুইয়ার এক গবেষণায় দেখেছেন, মাত্র ১ মিনিটের উচ্চ গতির হাঁটা বা শারীরিক কার্যকলাপও মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি কমাতে পারে। গবেষণাটি ২০২৪ সালে স্ক্যান্ডিনেভিয়ান জার্নাল অব মেডিসিন অ্যান্ড সায়েন্স ইন স্পোর্টসে প্রকাশিত হয়েছে। দিনভর বেশি হাঁটা এবং অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা বা জগিং করা স্বাস্থ্যের জন্য খুব ভালো। তিনি আরও বলেন, ‘কেউ যদি প্রতিদিন সর্বোচ্চ ১ মিনিট উচ্চ গতিতে হাঁটে, তবে তার মেটাবলিক সিনড্রোমের ঝুঁকি কমে।’

মেটাবলিক সিনড্রোম হলো শরীরের এমন কিছু সমস্যা, যেসব একসঙ্গে দেখা দেয়। এসব সমস্যা হলো কোমরের অতিরিক্ত চর্বি, পেটের অতিরিক্ত মেদ, রক্তে চর্বি (ট্রাইগ্লিসারাইড) বেশি থাকা, ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) কমে যাওয়া, রক্তচাপ বেশি হওয়া, রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হওয়া। মেটাবলিক সিনড্রোমের ফলে হৃদ্‌রোগ বা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ওজন কমাতে, রক্তচাপ ও শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অল্প সময়ের উচ্চ গতির ব্যায়াম কার্যকর।

৩.খাবারের পর ১৫ মিনিট হাঁটুন

অধ্যাপক আগুইয়ার বলেন, বয়স্ক ব্যক্তি এবং যাঁদের রক্তে শর্করা বেশি হওয়ার ঝুঁকি আছে, তাঁরা যদি প্রতিবার খাওয়ার পর মাত্র ১৫ মিনিট হাঁটেন, তাহলে তাঁদের রক্তে শর্করার ওঠানামা কম হয়। কারণ, হাঁটলে শরীরের পেশিগুলো কাজ করে এবং সেই সময় পেশিগুলো গ্লুকোজ থেকে শক্তি নেয়। ফলে খাওয়ার পর রক্তে শর্করা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার সুযোগ পায় না। এতে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হওয়ার ঝুঁকিও কমে।

ড. আগুইয়ার আরও বলেন, ‘দীর্ঘদিন যদি আমরা অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেট খাই এবং ব্যায়াম না করি বা না হাঁটি, তাহলে শরীর ধীরে ধীরে ইনসুলিন প্রতিরোধী হয়ে পড়ে। তখন ইনসুলিন কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং ওষুধ খেতে হয় বা ইনসুলিন নিতে হয়। খাওয়ার পর হাঁটলে পেশি গ্লুকোজ গ্রহণ করে শক্তি হিসেবে ব্যবহার করে। এই অভ্যাস দীর্ঘদিন করলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও মেটাবলিক সিনড্রোম হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।’ তাই প্রতিদিন ৩ বেলা খাওয়ার পর মাত্র ১৫ মিনিট জোরে হাঁটুন।

৪. রাকিং করুন বা ওজনসহ হাঁটুন

পিঠে ভারী ব্যাগ নিয়ে হাঁটাকে বলে ‘রাকিং’। এর জন্য আপনি চাইলে বিশেষ ব্যাকপ্যাক ও ওজন ব্যবহার করতে পারেন (যেমন পানিভর্তি বোতল বা ভারী বইসহ ব্যাগ)। অধ্যাপক আগুইয়ার বলছেন, ‘অতিরিক্ত ওজন নিয়ে হাঁটলে শরীর বেশি শক্তি খরচ করে, এতে অক্সিজেন গ্রহণ ও হার্ট রেট বেড়ে যায়।’ ফলে হাঁটার তীব্রতা বাড়ে, ক্যালরি খরচ হয় বেশি এবং কার্ডিও ফিটনেস উন্নত হয়। এ ছাড়া পায়ের নিচের পেশি, যেমন কোয়াড্রিসেপস, হ্যামস্ট্রিং ও গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস (কাফ মাসল) এই ভার সামলাতে কাজ করে, যা পেশি ও হাড়কে আরও মজবুত করতে সাহায্য করে। যদিও রাকিং জিম ট্রেনিংয়ের মতো নয়, তবু নিয়মিত করলে পেশির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।

রাকিং শুরুতে হালকা ওজন দিয়ে শুরু করুন এবং ধীরে ধীরে ওজন বাড়ান। এতে শরীর সহজে অভ্যস্ত হবে এবং চোটের ঝুঁকি কমবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *