কর্মব্যস্ত জীবনে আমরা সবাই নিজেদের আরও দ্রুত, আরও ফলপ্রসূ এবং আরও দক্ষ করে তুলতে চাই। কিন্তু কাজের চাপ, সময়ের অভাব এবং মানসিক ক্লান্তির কারণে অনেক সময় মাথা ভারী লাগতে শুরু করে। অথচ উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর মূল চাবিকাঠি সবসময় বেশি কাজ করা নয়—অনেক সময় কিছুক্ষণ কিছুই না করাই হয়ে ওঠে সবচেয়ে কার্যকর পন্থা।
কেন দরকার ‘ফাঁকা সময়’?
যুক্তরাষ্ট্রের সৃজনশীলতা বিশেষজ্ঞ নাতালি নিকসন মনে করেন, থেমে যাওয়ার মধ্যেই লুকিয়ে আছে মনোযোগ, বিশ্রাম ও সৃজনশীলতার শক্তি। রিয়েলসিম্পল ডটকম-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, মানুষের শরীর যেমন টানা কাজের পর বিশ্রাম চায়, তেমনই মস্তিষ্কও নিয়মিত বিরতি ছাড়া ঠিকভাবে কাজ করতে পারে না।
তার মতে, আধুনিক জীবনে ব্যস্ততা যেন এক ধরনের মর্যাদা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সবসময় কাজে ডুবে থাকা, সময় না থাকা, বিরতি না নেওয়া—এসবই সৃজনশীলতার পরিসর সংকুচিত করে ফেলে। যখন মাথা চাপে থাকে, তখন নতুন ধারণা বা সমাধান বের হওয়ার সুযোগ কমে যায়।
৯০ সেকেন্ডের ছোট বিরতি—অত্যন্ত কার্যকর অভ্যাস
নিকসন জানান, দিনে কয়েকবার মাত্র ৯০ সেকেন্ডের বিরতি নিলে মস্তিষ্ক পুনরুজ্জীবিত হয়। এ বিরতির জন্য বিশেষ কোনো প্রস্তুতি লাগে না—যেকোনো জায়গায় বসে বা দাঁড়িয়ে এটি করা যায়।
যেভাবে করবেন—
- একটি ৯০ সেকেন্ডের টাইমার সেট করুন।
- কিছুই করবেন না—শুধু চারপাশে তাকান।
- আলো, বাতাস, নড়াচড়া, জানালা বা প্রকৃতি দেখুন।
- চাইলে চোখ বন্ধ রেখে মনকে ভাসিয়ে দিন।
- লক্ষ্য থাকবে—মস্তিষ্ককে সম্পূর্ণ শিথিল রাখা।
নিকসনের অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, টাইমারের শব্দ শোনার পর মাথা অনেক পরিষ্কার লাগে, ভাবনার জট খুলে আসে এবং জটিল সিদ্ধান্তও সহজে নেওয়া যায়।
এই ছোট বিরতি কাজ করে কেন?
মানুষের মস্তিষ্ক একটানা একই ধরনের কাজ করলে দ্রুত ক্লান্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু ৯০ সেকেন্ড থেমে থাকলে সক্রিয় হয় মস্তিষ্কের ডিফল্ট মোড নেটওয়ার্ক—যা সৃজনশীল চিন্তা, স্মৃতি, সমস্যা সমাধান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ফলে ছোট বিরতিটি—
- মন পরিষ্কার করে
- চিন্তার জট খুলে দেয়
- সৃজনশীল ধারণা বাড়ায়
- মানসিক চাপ কমায়
- কাজের গতি ও মনোযোগ বাড়ায়
দিনে কয়েকবার এই অভ্যাস করলে সারা দিনের উৎপাদনশীলতা বাড়ে এবং কঠিন কাজও সহজ মনে হয়।
শুরু করবেন যেভাবে
এ অভ্যাসটি ঘরে, অফিসে, গাড়িতে, লিফটের সামনে—যেখানেই থাকুন—অনুশীলন করা যায়।
পদ্ধতি সহজ—
- ৯০ সেকেন্ডের টাইমার সেট করুন।
- মস্তিষ্ক থেকে সব ধরনের কাজ বা চাপ সরিয়ে দিন।
- কিছু না করে শুধু তাকিয়ে থাকুন বা মনকে মুক্তভাবে ভাসতে দিন।
- টাইমার বন্ধ হলে স্বাভাবিকভাবে কাজে ফিরে যান।