বিড়াল থেকে কি ডিপথেরিয়া হতে পারে

ডিপথেরিয়া কী

ডিপথেরিয়া মারাত্মক সংক্রামক রোগ, যা নাক, গলা ও শ্বাসনালিতে তীব্র প্রদাহ সৃষ্টি করে। এর জন্য দায়ী করনিব্যাকটেরিয়াম ডিপথেরি নামের এক ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া এমন কিছু বিষাক্ত রস বা টক্সিন তৈরি করে, যার ফলে গলায় অস্বাভাবিক আস্তরণ সৃষ্টি হয়। এই আস্তরণের কারণে শ্বাসরোধ পর্যন্ত হতে পারে। তা ছাড়া টক্সিন রক্তে মিশে গিয়ে হৃৎপিণ্ড ও স্নায়ুকেও আক্রান্ত করতে পারে। কখনো কখনো চোখ, ত্বক ও দেহের অন্য অংশও এই জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হয়। রোগীর দেহে প্রকাশ পায় নানা উপসর্গ।

কিছু উপসর্গ

ডিপথেরিয়া রোগের প্রাথমিক উপসর্গ খানিকটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো। সর্দি, জ্বর ও নাক দিয়ে পানি পড়া, চোখ ছলোছলো করা, গলার ব্যথা, কথা বলতে ও গিলতে কষ্ট, লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া ইত্যাদি। অনেক সময় শিশুদের মুখ দিয়ে লালা ঝরতে থাকে, শ্বাসকষ্ট হয়, গলায় ঘা দেখা দেয়। সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় গলার ব্যথায়। মুখের ও গলার ভেতরে ধূসর রঙের একধরনের আস্তরণ দেখা যায়, যা পরিষ্কার করতে গেলে রক্তপাত হতে পারে।

ডিপথেরিয়া কীভাবে ছড়ায়

আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি–কাশি থেকে বাতাসের মাধ্যমে এই রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। এ ছাড়া রোগীর ব্যবহৃত বাসনকোসন, জামাকাপড়, এমনকি বিছানা থেকেও এই রোগ ছড়াতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে তাই অন্যদের থেকে দ্রুত আলাদা করতে হবে। এই রোগে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। খুব অল্প কিছু ক্ষেত্রে ত্বকের কোনো ক্ষত দিয়েও এই জীবাণু প্রবেশ করতে পারে।

প্রতিরোধের উপায়

ডিপথেরিয়া প্রতিরোধ করা খুবই সহজ। এর জন্য রয়েছে টিকা। বর্তমানে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় দেশের সব শিশুকে যে পেন্টাভ্যালেন্ট টিকা দেওয়া হয়, তার মধ্যে রয়েছে ডিপথেরিয়ার টিকা। জন্মের পর ষষ্ঠ, দশম ও চতুর্দশ সপ্তাহে এই টিকা দেওয়া হয়। এই টিকা দেওয়া হলে শিশু নিরাপদ থাকবে।

বিড়াল ও ডিপথেরিয়া

বিড়াল কিংবা বিড়ালের পশমের সঙ্গে ডিপথেরিয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। বিড়াল ডিপথেরিয়ার জীবাণু বহন করে না। বিড়ালের মাধ্যমে ডিপথেরিয়া ছড়ায় না। তাই অমূলক ভয়ে বিড়ালের মতো কোনো প্রাণীর সংস্পর্শ থেকে কোনো শিশুকে বঞ্চিত করা উচিত নয়। বাস্তবতা হলো, বর্তমান নগরকেন্দ্রিক জীবনে অণুপরিবারগুলো বিশাল অট্টালিকায় ঘরবন্দী থেকে বেড়ে ওঠে। অথচ তাদের মধ্যে সহনশীলতা ও ভালোবাসার অনুভূতিসহ মানবিক গুণাবলি গড়ে তুলতে পোষা প্রাণী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রাণীর যত্ন–আত্তি করতে করতেই শিশুর মধ্যে গড়ে ওঠে মানুষের প্রতি সহমর্মিতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *