সায়ন্তনী ত্বিষা। বনেদি পরিবারে বেড়ে ওঠা হলেও খুব সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত তিনি। তার কর্মময় জীবন ছিল বিভিন্ন আঙ্গিকে ছড়ানো। পাঁচ বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে জাপানে যান ত্বিষা। মা অপালা ফরহত নবেদ সেখানে গিয়েছিলেন পিএইচডি করতে। প্রায় সাড়ে তিন বছর ছিলেন জাপানে। নয় বছর বয়সে দেশে ফিরে আসেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক বাংলাদেশেই সম্পন্ন করেন। পার্শ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতে গিয়ে গ্র্যাজুয়েশন কমপ্লিট করেন। এর পরই মায়ের মৃত্যুতে সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায় অনেকটাই। নিজেকে কর্মব্যস্ত রাখতে শুরু করেন চাকরি।
টেলিভিশনে সাংবাদিকতা ও সংবাদ উপস্থাপিকার দায়িত্ব পালন করেছেন। সাংবাদিকতার বাইরে এসে এশিয়াটিক, ডিনেট ও এসএসডি টেকে বিভিন্ন পদে চাকরিও করেছেন। দেশের বৃহত্তম ই-কমার্স মার্কেটপ্লেস দারাজ বাংলাদেশ লিমিটেডের পিআর এবং কমিউনিকেশনস প্রধান হিসেবে কাজ করেছেন। মাকে হারিয়ে কর্মের মাঝে ডুব দিয়েছিলেন একটানা ১২ বছর। এর পরে স্পেনের বার্সেলোনা শহরে গিয়ে এমবিএ করেন। বর্তমানে দেশের মাটিতে থেকে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন ইউরোপের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে।
ফ্যাশনের জগতে প্রতিটি মানুষের নিজস্ব পছন্দ, নিজস্ব আরাম এবং অভিব্যক্তি থাকে। ঠিক তেমনি সায়ন্তনী ত্বিষারও রয়েছে ভিন্ন ফ্যাশন স্টাইল। তিনি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বেছে নেন প্যান্ট ও টপস, বোঝাই যায়- স্টাইল মানে শুধু বাহ্যিক চাকচিক্য নয়, বরং আরাম এবং ব্যক্তিত্বের মেলবন্ধন। ত্বিষা বিশ্বাস করেন, ফ্যাশনে আগে আসা উচিত স্বাচ্ছন্দ্য।
ব্যস্ত শহরের জীবন, কাজের টানাপোড়েন কিংবা আড্ডার মুহূর্ত- সবখানেই সাধারণ ডেনিম জিন্সের সঙ্গে উজ্জ্বল রঙের টপস বা ফতুয়া বা টি-শার্ট তাঁর প্রথম পছন্দ। আরামদায়ক কাপড় ও সহজ নকশা তাকে দেয় মুক্ত চলাফেরার সুযোগ।
যত সহজ পোশাক, ততই ফুটে ওঠে সাধারণের মাঝে অসাধারণ অভিব্যক্তি।
কখনো ক্যাজুয়াল, কখনো সেমি-ফরমাল-প্রতিটি লুকে ফুটে ওঠে তার আত্মবিশ্বাসী ব্যক্তিত্ব। বরাবরই তার পোশাক পছন্দ ছিল অপরিবর্তনশীল। আজকাল ত্বিষার হলুদ রঙের প্রতি দুর্বলতা বাড়ছে। তবে বেশি সময় যাবৎ লাল এবং কালো এই রং দুটোর প্রতি ছিল বিশেষ ভালোলাগা। তার মনে হয় রঙের পছন্দ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়। গান করেন ইংলিশে। তবে কালেভাদ্রে রবীন্দ্রসংগীতও গাওয়া হয়।
মায়ের হাতের পুডিং, গাজরের হালুয়া এবং বাসায় বানানো শিঙ্গাড়া ছিল তার খুব পছন্দের। জীবনের রঙিন মুহূর্তগুলো কেটেছে নানুর সঙ্গে। তার নানু বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অন্যতম ব্যক্তিত্ব সন্জীদা খাতুন।
ত্বিষা পোশাকে সব সময় উজ্জ্বল রংকে প্রাধান্য দেন। তিনি পছন্দ করেন ছোট গহনা। যা তাকে করে তোলে মোহনীয়।
শুভাকাঙ্খীদের উপহারের পোশাকেই জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে। তবে জিন্স ও ফতুয়া এবং জিন্স ও টি-শার্ট বেশি পরা হয়। যে কোনো অনুষ্ঠান বা ছায়ানটের প্রোগ্রাম বা পহেলা বৈশাখে প্রাধান্য দেন শাড়িকে। শাড়ির সঙ্গে পরেন পার্লের গহনা। ত্বিষার মতে, ‘ফ্যাশন মানে অন্যকে খুশি করা নয়, নিজেকে ভালো লাগানো। নিজের মতো করে নিজেকে ফুটিয়ে তোলা। যে যেটা পরতে পছন্দ করেন সেটাই পড়া উচিত।
কারোর হয়তো শাড়ি পছন্দ, কারোর প্যান্ট, টি-শার্ট, কারোর হিজাব। যার যেটা পছন্দ তার সেটাই পরা উচিত। মেকআপের ক্ষেত্রেও নিজস্ব স্বকীয়তা বজায় রাখা উচিত। সবাই একইভাবে মেকআপ করলে ভিন্নতা থাকবে কিভাবে? ফ্যাশন হওয়া চাই ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।’
দেশের মডেলদের মধ্যে ফ্যাশন ও ব্যক্তিত্ব মিলিয়ে ত্বিষার পছন্দ মিথিলা, রুনা ও বিদ্যা সিনহা মিমকে। এদের এগিয়ে চলার জার্নিটা তার ভালো লাগে।
ত্বিষার ফ্যাশন প্রমাণ করে যে সহজ পোশাকেও এক ধরনের আভিজাত্য লুকিয়ে থাকে। পোশাক শুধু আরামের মাধ্যম নয়, বরং আত্মবিশ্বাস ও প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি।
ত্বিষা দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের মার্কেটিং ও পাবলিক রিলেশনস কনসালট্যান্ট হিসেবে। ‘আনসার্টেইনিটি প্রিন্সিপাল’ নামে একটি ব্যান্ড রয়েছে তার। প্রকাশিত হয়েছে বেশকিছু মৌলিক গান। ব্যান্ডের মূল ভোকাল ত্বিষা। তার অনেকগুলো পরিচয়ের মধ্যে একটি হলো, তিনি একজন সংগীতশিল্পী।